বিজেপির কুৎসা ও মিথ্যাচারের স্পষ্ট জবাব দিল তৃণমূল কংগ্রেস

একদিনের রাজ্য সফরে এসে মৃত বিজেপিকে সঞ্জীবনী দেওয়ার জন্য একের পর এক মিথ্যাচারের নামাবলি পেশ করলেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

Must read

প্রতিবেদন : একদিনের রাজ্য সফরে এসে মৃত বিজেপিকে সঞ্জীবনী দেওয়ার জন্য একের পর এক মিথ্যাচারের নামাবলি পেশ করলেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ডাহা মিথ্যা কথা বলে ভাবলেন বাংলার মানুষের মন জয় করা যাবে। ইন্ডোরের সভায় যে নেতৃত্বের সামনে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মিথ্যা ভাষণ দিলেন তাঁরাও সম্ভবত শাহর কথা শুনে মুচকি হেসেছেন। পাল্টা তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, কাকলি ঘোষদস্তিদার এবং সাগরিকা ঘোষ মিথ্যাচার ধরে ধরে জবাব দিয়ে স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, পহেলগাঁও ও অনুপ্রবেশের দায়িত্ব নিয়ে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এখনই পদত্যাগ করা উচিত।
পদত্যাগ করুন : সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। তার কারণ বিএসএফ তাঁরই অধীনে। তৃণমূলের প্রশ্ন, অনুপ্রবেশ হয় কী করে? বিএসএফ সীমান্তে রক্ষায় ব্যর্থ। পহেলগাঁওতে জঙ্গি আক্রমণ হয়েছে। কেন আগাম খবর ছিল না সরকারের কাছে? কোথায় ছিলেন গোয়েন্দারা? জম্মু-কাশ্মীরের আইনশৃঙ্খলা অর্থাৎ পুলিশের দায়িত্ব কেন্দ্রের হাতে ছিল। তা সত্ত্বেও জঙ্গিরা এল কী করে? গণহত্যা করে গা-ঢাকাই বা দিল কী করে? এ তো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের চরম ব্যর্থতা। একজনও জঙ্গি গ্রেফতার হয়নি। তাঁর ব্যর্থতায় দেশের নিরাপত্তা আজ প্রশ্নচিহ্নের সামনে। ব্যর্থতার দায় কাঁধে নিয়ে পদত্যাগ করুন অমিত শাহ।

আরও পড়ুন-”অমিত শাহ মহাশয় আপনি ব্যর্থ” সাংবাদিক বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে তোপ চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের

সিঁদুর-অপমান : সিঁদুর মহিলাদের পবিত্র চিহ্ন। আর তাকেই বারবার রাজনীতিতে নির্লজ্জভাবে ব্যবহার করছে বিজেপি। প্রধানমন্ত্রীর পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বলছেন অপারেশন বেঙ্গল! কিসের অপারেশন? কেন অপারেশন? বাংলায় কী ঘটেছে? মানুষের আবেগ নিয়ে খেলতে চাইছেন? ছাব্বিশে জবাব দেবেন মানুষ। তৃণমূলের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যখন পাক-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একটির পর একটি দেশে সুর চড়াচ্ছেন তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই নির্লজ্জ আক্রমণ বাংলার মানুষ মেনে নেবে না। লাগমছাড়া মিথ্যাচার করতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, অপারেশন সিঁদুরের নাকি বিরোধিতা করছেন মুখ্যমন্ত্রী! গল্পের গরু শুধু গাছে তোলা নয়, গোয়েবেলসীয় মিথ্যাচার অভ্যাস করে ফেলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আর তাঁর সুরে মিথ্যাচার করার জন্য আর এক কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারও পদত্যাগ করুন।
সন্ত্রাসের ভোট : আহম্মকের মতো দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নেতাজি ইন্ডোরে দাঁড়িয়ে বলে গেলেন বাংলায় বিজেপি নাকি জিতেই গিয়েছে যদি না সন্ত্রাস হয়। বাংলার রাজনীতি সচেতন মানুষকে নেহাতই কি নির্বোধ ভেবেছেন অমিত শাহ? কেন্দ্রের নির্বাচন কমিশন ভোট করাচ্ছে, দায়িত্বে থাকছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। ভোট শেষ হলেই সন্ত্রাস। বিজেপিকে বাংলার মানুষ পরিত্যাগ করছেন। তাই লোকসভায় আসন কমিয়েছেন, বিধানসভায় বিধায়ক সংখ্যা ক্রমশ কমছে। জনসমর্থন যেটুকু বা ছিল মানুষ বুঝে গিয়েছেন এদেরকে জেতানো মানে ভোট নষ্ট করা। তাই প্রত্যেকটি ভোটে হারছে।
আইনশৃঙ্খলা : বাংলার আইনশৃঙ্খলা নিয়ে বিজেপি যত কম কথা বলে ততই তাদের মঙ্গল। বিজেপি রাজ্যগুলিতে একের পর এক ঘটনা ঘটে চলেছে। উন্নাও, হাথরস, গোধরা, লখিমপুর খেরি— তালিকা দীর্ঘ হবে। একজন অপরাধীও ধরা পড়েছে? আরজি করের প্রসঙ্গ তুলছেন? অপরাধীকে রাজ্য পুলিশই প্রথম গ্রেফতার করেছে। কেন্দ্রের তদন্তকারী দল সেই গ্রেফতারিকেই সিলমোহর দিয়েছে। মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, মিথ্যাচার করতে গেলেও ভেবেচিন্তে মন্তব্য করতে হয়।

আরও পড়ুন-রাজনৈতিক স্বার্থ দেশের নিরাপত্তার থেকে বড় নয়, জাতীয়তাবাদের পাঠ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের

বাংলাকে বঞ্চনা : কিসের হিসেব দিচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী? বাংলার পাওনা টাকা দিয়েছেন? ১ লক্ষ ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাওনা। আপনাদের টাকা? রাজ্য টাকা পাঠালে কেন্দ্রের ভাঁড়ার তৈরি হয়। রাজ্যগুলির টাকা নিয়ে কেন্দ্রের এই নির্লজ্জ বেহায়াপনা মানুষ সহ্য করছে না। এতকিছুর পরেও দেশের জিডিপি যখন ৯% তখন বাংলার ১১%। আবাসে টাকা নেই। মনরেগায় এক-তৃতীয়াংশ মহিলা কর্মী। তাঁদের বঞ্চিত করছে বিজেপি। মহিলাদের জন্য কুমিরের কান্না বন্ধ করুক মোদি-শাহর সরকার।
মাফিয়ার সঙ্গে : বাংলার নেতাদের সমালোচনা করেন? কোন মুখে? কয়লা মাফিয়া জয়দেব খানের সঙ্গে অন্ডাল বিমানবন্দরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আপনি দেখা করেছিলেন। কেন করেছিলেন? কয়লা মাফিয়ার সঙ্গে কীসের এত সক্ষ্য। শুধু তাই নয়, বিজেপির আর এক কেন্দ্রীয়মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশী দুর্গাপুরের হোটেলে সেই কয়লা মাফিয়ার সঙ্গেই বৈঠক করেছিলেন। মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মানুষ বুঝেছেন, ডাল মে বহুত কালা হ্যায়।
গণতন্ত্রে বিশ্বাস বাংলার : বেশি উদাহরণের দরকার নেই, বাংলা যে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে তার উদাহরণ হল রবিবারের নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম। রাজ্য সরকারের এই স্টেডিয়াম বিজেপির সভা করার জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন বলেই নির্দ্বিধায় এই পদক্ষেপ করেছেন। মাননীয় শাহ, গুজরাতে যদি তৃণমূল সভা করতে সরকারি হল চাইত, আপনারা দিতেন কি?
ছাব্বিশের মিথ্যা স্বপ্ন : ছাব্বিশে নাকি বিজেপি আসছে! মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, শুধু আপনি কেন, আপনার মণ্ডল সভাপতিরাও বিশ্বাস করেন এটা দিবাস্বপ্ন। ভোট কমছে। আসন কমেছে। জনসমর্থন কমেছে। দলের মধ্যে দলাদলি। বিজেপি যে আসলে রাজনীতির চিড়িয়াখানায় পরিণত হয়েছে তা বাংলার মানুষ বুঝে গিয়েছেন। ভবিষ্যৎও নির্ধারিত হয়ে গিয়েছে। স্বামীজিকে মালা পরালেই হয় না। মাননীয় অমিত শাহ, বাংলার মন জানতে হয়, বুঝতে হয়। একুশে পারেননি, চব্বিশে পারেননি, ছাব্বিশেও ব্যর্থ হবেন।

Latest article