প্রতিবেদন : মানুষের জীবনহানিতেও থামছে না কেন্দ্র ও কমিশনের মিলিত ষড়যন্ত্রের এই এসআইআর। শুধু বিশেষ একটি দলকে খুশি করতে এবং ভোট বাক্সে সুবিধে পাইয়ে দিতে অপরিকল্পিত উপায়ে এসআইআর করা হচ্ছে। শনিবার রাজ্য মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের অফিসে স্মারকলিপি জমা দিয়ে কেন্দ্র ও কমিশনকে একহাত নিল তৃণমূল। এসআইআর নিয়ে ফের কমিশনকে তোপ দেগে তৃণমূল জানিয়ে দিল, ২ বছরের কাজ দু’মাসে করতে গিয়ে মানুষের জীবন বলি দিতে হচ্ছে। তারপরও ভ্রুক্ষেপ নেই কমিশনের। কেন্দ্রের সরকারের অঙ্গুলিহেলনে একটি বিশেষ দলকে সুবিধা পাইয়ে দিতে এই প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে কমিশন। শনিবার তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন ও বিজেপিকে ধুয়ে দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ প্রতিমা মণ্ডল এবং মুখপাত্র ও কাউন্সিলর অরূপ চক্রবর্তী। দু’জনেই একযোগে স্পষ্ট জানিয়েছেন, এসআইআরকে কেন্দ্র করে এখনও পর্যন্ত যে ৩১ জন ভোটার ও ৩ জন বিএলওর মৃত্যু হয়েছে এর দায়ী নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার-মনোজ আগরওয়াল। এবং সর্বোপরি বিজেপিকে নিতে হবে এই দায়। কারণ শুধুমাত্র বাংলা দখলের জন্য এই ঘৃণ্য চক্রান্ত করেছে বিজেপি।
আরও পড়ুন-কথা রাখেননি বোস, অভিযান তাই রাজভবনে
প্রতিমা এবং অরূপ বলেন, আত্মঘাতী বিএলও রিঙ্কু তরফদার লিখে গিয়েছেন তাঁর সুইসাইড নোটে, তিনি স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখে বাঁচতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কমিশনের চাপে পড়ে তা সম্ভব হল না। শুধু তাই নয়, বিজেপিকে তুলোধোনা করে তাঁরা বলেন, এরা মুসলিম অনুপ্রবেশকারী বলছে, কিন্তু মতুয়ারা কী অন্যায় করেছে? তারা তো হিন্দু!

এদিন দুপুরে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধি দল সিইও দফতরে স্মারকলিপি জমা দেয়। প্রতিনিধি দলে ছিলেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, সাংসদ পার্থ ভৌমিক ও অন্যেরা। এরপর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তাঁরা বলেন, এসআইআর-আতঙ্কে বিএলও-সহ একাধিক সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কমিশন কোনওভাবেই এর দায় এড়াতে পারে না। রাজ্য তথা দেশ জুড়ে এসআইআরের নামে যে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে, সেখানে সাধারণ মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। এমনকী বিএলওরাও আত্মঘাতী হচ্ছেন। অত্যধিক চাপে মৃত্যু হচ্ছে। কেন এই চাপ? কেন মানুষের জীবন সংশয়ে? উত্তর দেবে কি নির্বাচন কমিশন? বিএলও থেকে শুরু করে বিডিওদের সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। দু বছরের কাজ যেনতেনপ্রকারেণ দু মাসে শেষ করার চেষ্টা। একটাই উদ্দেশ্য, একটি বিশেষ দলকে সুবিধে করে দিতে হবে আসন্ন নির্বাচনে। নির্বাচন কমিশনে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় এই অভিযোগ তৃণমূল নেতৃত্বের।রাজ্যে এসআইআর প্রক্রিয়ার মধ্যেই বিভিন্ন জায়গায় একাধিক সাধারণ মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এদিনই সকালে নদিয়ার কৃষ্ণনগরে ‘আত্মঘাতী’ হয়েছেন এক বিএলও। এসআইআরের অত্যধিক কাজের চাপে তিন বিএলওর মৃত্যু হল। এছাড়াও ৩৪ জন সাধারণ মানুষ প্রাণ দিয়েছেন এসআইআর-আতঙ্কে।স্মাকরলিপিতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, কমিশনের তৈরি পোর্টাল ভুলে ভরা। বারবার কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বুথ লেভেল কর্মীদের চরম বিভ্রান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। তারপর সময়সীমা অত্যন্ত কম হওয়ায় বিএলওদের পক্ষে এত কম সময়ে কাজ শেষ করা অসম্ভব। কুলপি বিধানসভায় এখনও পর্যন্ত তালিকা প্রকাশ হয়নি। কুলপির ক্ষেত্রে ২০০৩ সালের তথ্য কেন মানা হচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। ভুলে ঠাসা সাইটের জন্য বহু মানুষ বিপাকে পড়ছেন। ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় বহু ক্ষেত্রে, বুথওয়াড়ি ১৫০ থেকে ২০০ জনের নাম বাদ গিয়েছে। ছবি ভুল, ক্রমিক নম্বর ভুল, বাবার নাম-স্বামীর নাম ভুল। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের পক্ষে বা বিএলওদের পক্ষে সঠিকভাবে কাজ করা সম্ভব নয়।অরূপ বিশ্বাসের স্পষ্ট বক্তব্য, ২, ৫, ১৪, ২০ নভেম্বর এবং এর আগে ৩০ অক্টোবর— মোট পাঁচবার চিঠি দেওয়া হলেও কমিশন কোনও উত্তর দেয়নি। কমিশনের কাছে একটি দাবিপত্রও জমা দেওয়া হয়েছে, যা চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য পড়ে শোনান।পার্থ ভৌমিক অভিযোগ করেন, নির্বাচন কমিশন গণতান্ত্রিক প্ল্যাটফর্মকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে। তাঁর প্রশ্ন, এক কোটির বেশি নাম বাদ যাবে— এই তথ্য একটি রাজনৈতিক দল আগেভাগে জানল কীভাবে! কমিশন এ-ব্যাপারে কী বলছে— স্পষ্ট জবাব চায় তৃণমূল।

