এক জাতি এক দল- এই এজেন্ডা সামনে রেখে বিরোধীদের মুখ বন্ধের চেষ্টা দীর্ঘদিন ধরেই করছে বিজেপি। এবার তারা ‘এক জাতি এক ভোট’-এর (One Nation One Vote) ধুঁয়ো তুলেছে। এ বিষয়ে মতামত জানতে চিঠিও দিয়েছিল বিরোধী দলগুলিকে। তারই বিরোধিতা করে কড়া চিঠি লিখলেন তৃণমূল সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্পষ্ট কারণ ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। প্রথমেই তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘এক জাতি’ বলতে কী বুঝিয়েছে কেন্দ্র! দেশের বহুত্ববাদের উপর বিজেপি আক্রমণ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে তৃণমূল।
চিঠিতে তৃণমূল নেত্রী লিখেছেন, ১৯৫২ সালে থেকে কয়েকবার লোকসভা এবং বিধানসভার ভোট একসঙ্গে করা হয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন কারণে পরে সেই ক্রম ভেঙে যায়। ‘এক ভোট’ (One Nation One Vote) বলতে কি দুটো ভোট এক সঙ্গে করার প্রস্তাব দিচ্ছে কেন্দ্র? চিঠি দিতে স্পষ্ট নয় বলে জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লোকসভা ভোটের সঙ্গে দেশজুড়ে বিধানসভা ভোট-সহ অন্যান্য স্থানীয় ভোট করার সমস্যার কথাও চিঠিতে তুলে ধরেন মমতা। ‘এক জাতি এক ভোট’ রূপায়ণ করতে কেন পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত বিধানসভাকে আগে ভেঙে দেওয়া হবে? কোনও বিধানসভার মেয়াদ নির্ধারিত সময়ের পরেও বৃদ্ধি করা হবে? প্রশ্ন তোলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। এ ক্ষেত্রে গণতান্ত্রের উপর মানুষ আস্থা হারাবেন বলে মনে করছেন তিনি।
আরও পড়ুন- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তুষারঝড়, বিদ্যুৎহীন কয়েক লক্ষ মানুষ
চিঠির তাঁর আপত্তির ৬টি কারণ জানান তৃণমূল সভানেত্রী। লেখেন, “আমি দুঃখিত যে এক জাতি এক ভোট ধারণার সঙ্গে একমত হতে পারছি না। আমরা এই প্রস্তাবকে সমর্থন করছি না।” প্রথমেই ‘এক জাতি’ ধারণাটি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মমতা। তাঁর কথায় যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় এদেশে কেন্দ্রীয় সরকার ছাড়াও একাধিক প্রাদেশিক অর্থাৎ রাজ্য সরকার রয়েছে। সেক্ষেত্রে ‘এক দেশ’ বা ‘এক জাতি’ এই ধারণার অর্থ কী? তৃণমূল সুপ্রিমো লেখেন, “আমি স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে। তাই আমি আপনাদের এই পরিকল্পনারও বিরুদ্ধে।” একই সঙ্গে রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে নির্দিষ্ট মেয়াদের আগেই লোকসভা ভেঙে দেওয়া হলে এবং নতুন করে সাধারণ নির্বাচন হলে, বিধানসভার ক্ষেত্রে কী হবে- সেগুলিও কি ভেঙে দেওয়া? প্রশ্ন তোলেন তৃণমূলের সভানেত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, ‘এক জাতি এক ভোটে’র আলোচনায় গঠিত উচ্চপর্যায়ের কমিটিতে রাজ্য সরকারগুলির মতামত না নিয়েই কেন্দ্র একতরফা সিদ্ধান্ত বাকিদের জানাচ্ছে বলেও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, বাস্তব পরিস্থিতি প্রকাশ হয়ে যাবে বলেই, কোনও মুখ্যমন্ত্রীকে উচ্চপর্যায়ের কমিটিতে রাখা হয়নি। নতুন ব্যবস্থা চালু করতে হলে সংবিধান বদলও প্রয়োজন বলে মত মমতার।