প্রতিবেদন : সন্দেশখালি ষড়যন্ত্রের দ্বিতীয় ভিডিও সামনে আসতেই আরও বিপাকে গেরুয়া শিবির। নিজেদের কুকীর্তি থেকে নজর ঘোরাতে ফের হিংসার আশ্রয় নিল বিজেপি। আসরে নামানো হল টাকা দিয়ে পোষা গুন্ডাবাহিনীকে। নেতাদের নির্দেশে লাঠি, বাঁশ নিয়ে সকাল থেকে এই বাহিনী অশান্তি ছড়াল গোটা সন্দেশখালিতে। তাদের হাতে মার খেলেন এক নিরীহ তৃণমূল কর্মী। বাদ গেলেন না স্থানীয় বিধায়ক থেকে পুলিশও। এই ঘটনার প্রতিবাদে এদিন দুপুরে বিধায়ক সুকুমার মাহাতোর নেতৃত্বে প্রতিবাদ মিছিল করল তৃণমূল। তৃণমূলের সংঘবদ্ধ চেহারার সামনে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি বিজেপির গুন্ডাবাহিনীকে। এদিকে সন্দেশখালির মহিলাদের টাকা দিয়ে ভুল বুঝিয়ে ভুয়ো ধর্ষণের অভিযোগ করানোয় নির্বাচন কমিশনে জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন রেখা শর্মা-সহ একাধিক বিজেপি নেতা, কর্মী ও প্রার্থীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে চিঠি দিল তৃণমূল কংগ্রেস।
আরও পড়ুন-প্রধানমন্ত্রীর হাতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উল্টো ছবি, সরব অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়
রবিবার সারাদিন বিজেপির উসকানিতে অশান্তির পর অনেকটাই শান্ত সন্দেশখালি। দুপুরের পর সন্দেশখালির হাটগাছি পঞ্চায়েত দফতর থেকে রাজবাড়ি বাজার পর্যন্ত একটি প্রতিবাদ মিছিল করে তৃণমূল। মিছিলের শেষে ছিল প্রতিবাদ সভা। নেতৃত্ব দেন সন্দেশখালির তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার মাহাতো। সন্দেশখালির মহিলাদের ভুল বুঝিয়ে সাদা কাগজে সই করিয়ে ভুয়ো ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করিয়েছিল বিজেপি। আর সেই ভুয়ো অভিযোগকেই ভোটের ময়দানে হাতিয়ার করছে তারা। এই অভিযোগ জানিয়ে এবার নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হল তৃণমূল কংগ্রেস। দলের তরফে রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন এই অভিযোগ নিয়ে রবিবার চিঠি দিলেন কমিশনে। চিঠিতে তৃণমূলের তরফে জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন রেখা শর্মা ও সন্দেশখালির বিজেপি নেত্রী পিয়ালি দাস-সহ একাধিক বিজেপি নেতা, প্রার্থী, সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানানো হয়। এদের বিরুদ্ধে সন্দেশখালির নিরপরাধ মহিলাদের জালিয়াতি, প্রতারণা, ভীতি প্রদর্শন ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মতো গুরুতর অভিযোগ আনা হয়।
আরও পড়ুন-সন্দেশখালি নিয়ে মিথ্যাচার প্রধানমন্ত্রীর
এরই মধ্যে সন্দেশখালির বিজেপির মণ্ডল সভাপতি গঙ্গাধর কয়ালের দ্বিতীয় ভিডিও শনিবার রাতেই সামনে এসেছে। তাতে আরও বেকায়দায় পড়ে গিয়েছে গেরুয়া শিবির। ষড়যন্ত্রের পর্দাফাঁস হতেই নজর ঘোরাতে ফের টাকা দিয়ে পোষা গুন্ডাবাহিনীকে রাস্তায় নামায় বিজেপি। তাদের উসকানিতে ফের রবিবার সকাল থেকে অশান্তি ছড়ায় সন্দেশখালিতে। বিজেপির মহিলারা লাঠি, বাঁশ নিয়ে সকাল থেকে রাস্তায় নামে। এভাবেই শান্ত সন্দেশখালির বুকে ফের নতুন করে হিংসা ছড়াল বিজেপি। এর নেতৃত্বে ছিলেন বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্র। প্রথমে থানা ঘেরাও করে তারা পুলিশের ওপর চড়াও হয়। তারপর স্থানীয় এক তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে হামলা চালায় বিজেপির ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী। এক তৃণমূল কর্মীকে ঘর থেকে টেনে বের করে রাস্তায় ফেলে বাঁশ, লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। বাধা দিতে গিয়ে ওই মহিলাদের হাতে আক্রান্ত হন ঘটনাস্থলে উপস্থিত সন্দেশখালির তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার মাহাতো ও তৃণমূল নেতা দিলীপ মল্লিক। বিধায়কের মোবাইল কেড়ে নেওয়ারও চেষ্টা করে হিংস্র মহিলারা। সুকুমার মাহাতো বলেন, ষড়যন্ত্রের পর্দাফাঁস হয়ে গিয়েছে। তাই হিংসার আশ্রয় নিচ্ছে বিজেপি। শান্ত সন্দেশখালিকে ফের অশান্ত করা হচ্ছে। ঘটনার পর বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করেন রাজ্যের মন্ত্রী ডাঃ শশী পাঁজা। বলেন, সন্দেশখালির ষড়যন্ত্র ফাঁস হতেই মরিয়া বিজেপি নিজেদের কুকীর্তি ঢাকতে হিংসা আর সন্ত্রাস ছড়াচ্ছে! মোদিজির নির্দেশে সন্দেশখালিতে আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্র ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা। আসলে, সন্দেশখালির মা-বোনেদের প্রত্যাঘাত সহ্য করতে পারছে না বিজেপি। গুন্ডাবাহিনী নিয়ে তৃণমূল কর্মীদের উপর নৃশংস হামলা চালাচ্ছে বিজেপির মহিলারা। আর তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে বিজেপি-প্রার্থী রেখা পাত্র। মোদিজির নির্দেশে হওয়া এই হামলার কড়া নিন্দা করছে তৃণমূল।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
রবিবার রাতে ফের সামনে এল আরও একটি ভিডিও। যেখানে প্রায় একই সুরে এক বাসিন্দাকে বলতে শোনা গিয়েছে, তাঁর মাকেও থানায় ডেকে নিয়ে গিয়ে একই ভাবে সাদা কাগজে সই করানো হয়েছিল। রেখা শর্মা তাদের বাড়িতে এসে তার মাকে থানায় অভিযোগ জানাতে বলেন। বিজেপি নেত্রী পিয়ালি তাকে সঙ্গে করে থানায় নিয়ে গিয়ে সাদা কাগজে সই করান। ষড়যন্ত্র বুঝতে পেরে এখন আতঙ্কে কাটাচ্ছে ওই পরিবার। তাঁদের প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে বলেও ভিডিওতে অভিযোগ করেছেন ওই ব্যক্তি।