প্রতিবেদন : মাত্র ২ বছর আগেই এক মায়ের কোল খালি হয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে (jadavpur university) ভয়ংকর রাগিং-এর কারণে। এবার ফের আরেক মায়ের কোল খালি হল— তবে অন্যভাবে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়া অনামিকা মণ্ডলকে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ক্যাম্পাসের ভিতরেই পুকুরে পড়ে থাকতে দেখা যায়। হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা কাটেনি। তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। মৃত্যু কীভাবে তা ময়নাতদন্তের পর স্পষ্ট হবে। কিন্তু এই ঘটনার মধ্য দিয়ে ফের একবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের (jadavpur university) ভেতরকার নিরাপত্তা এবং অরাজকতার ছবিটা সামনে চলে এসেছে। একশ্রেণির রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন তারা কোনও অবস্থাতেই সেখানে সম্পূর্ণভাবে সিসিটিভি লাগাতে দিতে চায় না। কিন্তু কেন? এই প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। যুব নেতা সুদীপ রাহা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন অবিলম্বে যাদবপুরে সমস্ত জায়গায় সিসিটিভি লাগাতে হবে। স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করতে হবে।
এবং কারা কীসের স্বার্থে যাদবপুরের সব জায়গায় সিসিটিভি লাগাতে দিচ্ছে না— এই বিষয়টাকে তদন্তের আওতায় আনতে হবে। সুদীপ সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর বক্তব্য রেখে বলেছেন, দু-বছর আগের ঘটনার পর আমরা আদালতে গিয়েছিলাম। আদালতের নির্দেশের পরেও যাদবপুরের সমস্ত জায়গায় সিসিটিভি বসানো যায়নি। ইচ্ছাকৃতভাবে বাধা দেওয়া হয়েছে। এ-জিনিস চলতে পারে না। দেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে এভাবে দিনের পর দিন অরাজকতা চলবে আর মানুষ চুপ করে বসে থাকবে তা হতে পারে না! শুক্রবার সন্ধ্যায় এই ঘটনার প্রতিবাদে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের তরফে এইট-বি বাসস্ট্যান্ড থেকে যাদবপুর থানা পর্যন্ত প্রতিবাদ মিছিল করা হয়। টিএমসিপি রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য বলেন, আমরা গোটা বিষয়টি রাজ্যপালকে জানাব এবং তাঁর কাছে জানতে চাইব যাদবপুরে যা হচ্ছে তাতে তাঁর মতামত কী! প্রতিবাদে শামিল হয়েছিলেন দক্ষিণ কলকাতার তৃণমূল যুব সভাপতি সার্থক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ অন্যান্য ছাত্র নেতৃত্ব। তাঁরা সহ উপাচার্যের ঘরে গিয়ে ডেপুটেশন দেন। গোটা ঘটনার নিন্দা করেছে ওয়েবকুপাও।
আরও পড়ুন- রাজ্যের উদ্যোগে নেপাল থেকে বাড়ি ফিরলেন হিড়বাঁধের ৯ পরিযায়ী শ্রমিক
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, যেকোনও মৃত্যু অত্যন্ত দুঃখজনক। যাদবপুরের ঘটনা খুবই মর্মান্তিক। খারাপ ঘটনা।কেন হয়েছে কীভাবে হয়েছে সেটা পুলিশ প্রশাসন তদন্ত করছেন। এখন যে বা যারা কোনও যায়গার কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করে এবার তাঁরা বলুন সেখানে কেন সর্বত্র সিসিটিভি ক্যামেরা থাকবে না? সিসি ক্যামেরা বসাতে গেলে মানছি না মানব না বলা হয়। আর কোনও কোনও যায়গায় সিসি ক্যামেরা হলেই বিপ্লবীদের গায়ে লেগে যায়। এটা হতে পারে না। এই মুহূর্তে মৃত্যু নিয়ে মন্তব্য করব না কারণ এটার সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই। এই মেয়েটির মৃত্যুতে এবার রাত জাগা হবে না? যারা সিসি ক্যামেরা বসতে দেব না বলে লাফালাফি করেন তা হুজ্জুতি করতে যান তাঁদের তো এবার কৈফিয়ত দিতে হবে। এই ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। সিসি ক্যামেরা থাকলে অনেক জল্পনা এড়ানো যায়। সমাধান হয়।
যাদবপুরে এই মুহূর্তে যাঁরা প্রশাসন চালাচ্ছেন তারাও প্রকারান্তর স্বীকার করে নিয়েছেন তাঁদের ব্যর্থতা। কিন্তু ময়নাতদন্তের পর যদি দেখা যায় এই ঘটনা হত্যা তবে নিশ্চিতভাবেই ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেবে।