প্রতিবেদন : বাংলায় অশান্তির বীজ ঢালতে ভুয়ো ছবি ছড়িয়ে উসকানি দিয়ে চলেছে বিজেপি নেতারা। পরিকল্পিত চিত্রনাট্য সাজিয়ে ময়দানে নামলেও ধরা পড়ে গিয়েছে বিজেপির মিথ্যাচার। শেষে পোস্ট মুছে রণেভঙ্গ দিতে হয়েছে বিজেপির ট্রেনি রাজ্য সভাপতিকে। সোমবার সাংবাদিক বৈঠকে বিজেপির সেই কীর্তিকলাপের পর্দাফাঁস করে পঞ্চবাণে বিদ্ধ করল তৃণমূল। তৃণমূলের আইটি সেলের চেয়ারম্যান দেবাংশু ভট্টাচার্য ফাঁস করে দিলেন বিজেপির নোংরা খেলা। একইসঙ্গে তৃণমূলের তরফে গদ্দারের ভিডিও ফাঁস করে দেখিয়ে দেওয়া হয় অশান্তির পিছনে কারা লুকিয়ে রয়েছে। বিএসএফকে কাঠগড়ায় তুলে গদ্দার অধিকারীই জানিয়ে দেন, বাংলাদেশ থেকে এসে লুঠপাট করে চলে যাচ্ছে দুষ্কৃতীরা। তাহলে প্রশ্ন, গাফিলতিটা কার? সীমান্তের ৫০ কিলোমিটারের নিরাপত্তা তো বিএসএফের হাতে!
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
এদিন দেবাংশু বলেন, বিজেপির চক্রান্ত এখন গোটা রাজ্যের কাছে স্পষ্ট। বিধানসভা নির্বাচনের এক বছর আগে থেকে বাংলা দখলে ধর্মীয় তাস খেলা শুরু করেছে বিজেপি। কার্যত দিল্লি থেকেই ছক সাজিয়ে আইটি সেলকে মাঠে নামিয়ে সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে বাংলার নির্দিষ্ট কিছু অংশে অশান্তি ছড়াতে মরিয়া-কীর্তি চালাচ্ছে বিজেপি। বিজেপি ট্রেনি রাজ্য সভাপতির সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট ডিলিট করে ফেলাই স্পষ্ট করে দিচ্ছে বিজেপির পরিকল্পিত চিত্রনাট্য। গোটা চিত্রনাট্য আগে থেকেই তৈরি করা। কারণ গোটা ঘটনার একটা প্যাটার্ন রয়েছে। তিন-চারটি জায়গায় একইভাবে অশান্তি লাগানো হয়েছে। আবার একই সময়ের ব্যবধানে ছবি পোস্ট হয়েছে। ফলে ছবিগুলি এলাকার অশান্তির ছবি কি না তা নিয়েই সংশয় তৈরি হয়। বিজেপির এই সাজানো পরিকল্পনা ফাঁস করে দিয়েছে তৃণমূল আইটি সেল। বিজেপিশাসিত রাজ্যের হিংসার ছবি এ-রাজ্যের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের ছবি বলে তুলে ধরে অশান্তি তৈরির চেষ্টা হয়েছে। বিজেপি প্রকাশিত নয়টি ছবি ধরে ধরে দেবাংশু দেখিয়ে দেন কীভাবে আইটি সেল বিজেপি-রাজ্যের কুকীর্তির ছবি দিয়ে বাংলাকে বদনাম করার চেষ্টা করেছে। তাঁর কথায়, নির্বাচনের এক বছর আগে বাংলাকে ধর্মীয়ভাবে উত্তপ্ত করতে না পারলে যে বাংলা দখল সম্ভব হবে না, বুঝেই পরিকল্পিত চক্রান্ত করছে বিজেপি। আর সেই পরিকল্পনার কথা প্রসঙ্গে দেবাংশু বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি মেসেজ ঘুরে বেড়াচ্ছে— যেখানে ‘ছোট বস’, ‘বড় বস’ বলা হচ্ছে। কারা এই ‘বস’ জানা নেই। তবে এই ‘ছোট বস’-এর নির্দেশেই নাকি গোটা ঘটনার ষড়যন্ত্র রচনা করা হয়েছে। ২০২০ সালে দিল্লি নির্বাচনের আগে দিল্লিতে ধর্মীয় হিংসা ঠিক একইভাবে বাধিয়েছিল বিজেপি। বাংলাতেও সেই একই পরিকল্পনা। বহিরাগতদের ঢুকিয়ে অশান্তির বীজ বপণ করা হচ্ছে। সীমান্তরক্ষী বাহিনী ছাড়াও কেন্দ্রীয় এজেন্সির ভূমিকাও এখানে সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়। পড়শি রাজ্য এবং প্রতিবেশী দেশ থেকেও যে বহিরাগতদের প্রবেশ ঘটছে, তাদের মুখের ভাষাই তার প্রমাণ।
এ প্রসঙ্গেই পাঁচটি প্রশ্ন তুলে ধরেছেন দেবাংশু। এক, সিএসএসএস একটা সমীক্ষা করেছে। সেই সমীক্ষায় তারা বলছে ২০২৪-এ দেশে ৫৯টি ধর্মীয় অশান্তির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৪৯টিই বিজেপি ও বিজেপি জোটের রাজ্যে। এই তালিকার মধ্যে প্রথম তিনে রয়েছে মহারাষ্ট্র, বিহার এবং উত্তরপ্রদেশ। ২০২৩-এর তুলনায় ৮৪ শতাংশ ধর্মীয় অশান্তি হয়েছে। বাংলার দিকে আঙুল তোলার আগে বলুন, ৮৯ শতাংশ ঘটনা বিজেপি-রাজ্যে কেন ঘটল?
দুই, আদালতের নির্দেশে কেন্দ্রীয় বাহিনী নেমেছে। বিজেপি আঙুল তুলে বলছে, রাজ্যের ব্যর্থতার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী নামাতে হয়েছে। তা হলে ত্রিপুরায় কেন কেন্দ্রীয় বাহিনী নামাতে হল, তাহলে কি সেখানেও আইনশৃঙ্খলা ফেল করেছে?
তিন, ২০২০-তে এনআরসি আন্দোলন যখন তুঙ্গে, সেই বছর বিধানসভা নির্বাচন ছিল। সে-সময় দিল্লিতে বিধানসভা নির্বাচনের আগে ১০ দিন ধরে দিল্লি দাঙ্গায় স্তব্ধ হয়েছিল। দিল্লি আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব কার? সেখানে আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্ব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে। ১০ দিন টানা দাঙ্গা চলেছিল, দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কী পদক্ষেপ করেছিলেন? প্রধানমন্ত্রী কী পদক্ষেপ করেছিলেন? দেশের রাজধানীর হিংসা যারা থামাতে পারে না, তারা রাজ্যের দিকে কেন আঙুল তুলছে?
চার, কপিল মিশ্র যে এই হিংসায় উসকানি দিল তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা হয়নি কেন?
পাঁচ, অসমে ওয়াকফ নিয়ে অশান্তি তৈরি হয়েছে, পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়েছে। অথচ রাজ্যের পুলিশকে ধন্যবাদ দিয়ে শান্তি বিরাজের মিথ্যা গল্প রটিয়ে বর্ডার দিয়ে বহিরাগত ঢুকিয়ে পরপর উসকানি দিচ্ছে, তার কারণ কী? তাদের উদ্দেশ্য কি বাংলাকে টার্গেট করে মৃতের সংখ্যা বাড়ানো?