মুখ্যমন্ত্রী বদলালেও বদলায়নি বিজেপির চরিত্র। ত্রিপুরায় অব্যাহত গেরুয়া সন্ত্রাস। পায়েরতলা থেকে মাটি সরে গেছে বুঝে উপনির্বাচনের আগে সন্ত্রাসকেই হাতিয়ার করেছে বিজেপি। সুরমা উপনির্বাচনের আগে প্রায় ৭০টি পরিবার ঘাসফুল শিবিরে যোগ দেয়। এদের মধ্যে ছিল হতদরিদ্র মালাকার পরিবার। সেই আক্রোশ থেকে বুধবার মধ্যরাতে ওই পরিবারের চার সদস্য- অবিনাশ মালাকার, বল্লভ মালাকার, তাপস মালাকার এবং দীপক মালাকারের উপর হামলা চালায় বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। অভিযোগ, লাঠি, রড, দা নিয়ে সদস্যদের উপর চড়াও হয় বিজেপির গুন্ডারা। ৮ বছরের একটি বাচ্চাকেও কোপানোর অভিযোগ উঠেছে বিজেপি আশ্রিত গুন্ডাদের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় উত্তাল ত্রিপুরার রাজনীতি। বিভিন্ন মহলে নিন্দার ঝড় বইছে।
আজ, বৃহস্পতিবার আক্রান্তদের দেখতে ধলাই জেলা হাসপাতালে যায় তৃণমূল নেতৃত্ব। এই প্রতিনিধি দলে ছিলেন ত্রিপুরা প্রদেশ তৃণমূলের ইনচার্জ রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রদেশ সভাপতি সুবল ভৌমিক, রাজ্যসভার সাংসদ সুস্মিতা দেব, পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূলের যুব সভানেত্রী সায়নী ঘোষ, দেবু টুডু, বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ, যুবনেতা শক্তিপ্রতাপ সিং, মুকুল বৈরাগ্য, শান্তনু সাহা, সুদীপ রাহা-সহ আরও অনেকে। তাঁরা আহতদের দেখার পাশাপাশি তাঁদের পরিবারের লোকেদের সঙ্গেও কথা বলেন। এই পরিস্থিতিতে পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব।
আরও পড়ুন- উচ্চমাধ্যমিকে অকৃতকার্য হয়ে পাশ করানোর দাবিতে বিক্ষোভ! কীর্তি দেখে হতবাক মুখ্যমন্ত্রী
ঘটনার প্রতিবাদে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল ধলাই জেলার পুলিশ সুপার রমেশ যাদবের সঙ্গে দেখা করে ডেপুটেশনে দেন। দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়েছে। এছাড়াও শুক্রবার ত্রিপুরায় নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দেখা করেও নির্বাচনকে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করার দাবি জানানো হবে।
এমন বর্বরোচিত ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তৃণমূলের ত্রিপুরার রাজ্য সভাপতি সুবল ভৌমিক জানান, ত্রিপুরায় তৃণমূল নেতৃত্বকে রোজই আক্রান্ত মানুষের কাছে ছুটে যেতে হচ্ছে। মানুষকে বিজেপি আক্রমণ করছে। তৃণমূলে যোগদান করার অপরাধেই সুরমায় হামলা চালায় বিজেপির গুন্ডারা।
তাঁর কথায়, “বিজেপি দুর্বৃত্তায়নকে মদত দিচ্ছে। নির্বাচনে পরাজয় নিশ্চিত জেনে সরকারের মদতপুষ্ট হার্মাদবাহিনী হামলা চালাচ্ছে সাধারণ মানুষের ওপর। আমাদের দলের তরফ থেকে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে। এই গুন্ডারাজ বন্ধ করতেই হবে ত্রিপুরার বুক থেকে।” বারবার নির্বাচন কমিশনকে সন্ত্রাসের কথা জানালেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করেন সুবলবাবু।
আরও পড়ুন- ‘ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয়’ দক্ষিণেশ্বরে পুজো দিয়ে বার্তা মুখ্য়মন্ত্রীর
রাজ্যসভার সাংসদ সুস্মিতা দেব ত্রিপুরার আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, “মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার এই আপনার ত্রিপুরার আইনশৃঙ্খলা? আমাদের কর্মীদের ওপর এভাবে হামলায় স্পষ্ট, তৃণমূল কংগ্রেসকে ভয় পাচ্ছেন আপনারা।” এই নারকীয় ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে পুলিশ প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণের আর্জি জানান সুস্মিতা দেব।
ত্রিপুরা প্রদেশ তৃণমূলের ইনচার্জ রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “এত বর্বরতা! এত নৃশংসতা! বিজেপির জল্লাদ বাহিনীর নৃশংস হামলার সাক্ষী হয়ে রইল গোটা দেশ। গুন্ডারাজের সরকার, সন্ত্রাসবাদের সরকার!বিজেপি জনসমর্থন হারাচ্ছে বলে নিষ্ঠুরতার রাস্তা অবলম্বন করেছে। রাতের অন্ধকারে নিরীহ মানুষদের ওপর হামলার পর স্বৈরাচারী সরকার বর্বরতার সমস্ত সীমা লঙ্ঘন করেছে। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস ভয় পেতে জানে না। যত বেশি আঘাত করা হবে, তৃণমূল কংগ্রেস তত বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠবে।
এই ঘটনার প্রতিবাদে ত্রিপুরা প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেস বৃহত্তর আন্দোলনে নামবে।”