রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার আসছে শুনেই ভয়ে ওরা কাঁপছে

Must read

বাঘে-গরুতে একঘাটে জল খাওয়ার কথা শুনেছি। সংকটকালে নাকি এমনটাই হয়। কারও ভয়ানক দাপটেও। এসব পড়েওছি।
এবার তা একেবারে প্রত্যক্ষ করা গেল। ত্রিপুরায়। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাপটে বিপ্লব দেব শাসিত ত্রিপুরার বিজেপি নরেন্দ্র মোদির কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন রেলকে বেছে নিল। ত্রিপুরা বিজেপি নেমেছে ‘রেল রোকো’ কর্মসূচি নিয়ে, সত্য সেলুকাস!
কারণ একটাই। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আটকাতে হবে।
এই আটকানোর জন্য ছলাকলা তো কম হল না। গুন্ডা থেকে পুলিশ, সবাইকে নামানো হল তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-কর্মী, সমর্থকদের প্রতিহত করার জন্য। প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার থেকে আদালতের দরজায় কড়া নাড়া, সবই চলল শুধু অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যাতে ত্রিপুরার মাটিতে পা রাখতে না পারেন, সেটা সুনিশ্চিত করা।
ঘটনাক্রমটা একবার দেখে নেওয়া যাক।
প্রথমে ঠিক হয়েছিল ১৫ সেপ্টেম্বর পদযাত্রা হবে। পুলিশের অনুমতি চেয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। তখন পুলিশের তরফে জানানো হয়, অন্য একটি রাজনৈতিক দলের ওই একই দিনে অভিন্ন সময়ে কর্মসূচি আছে। তাই তারা তৃণমূল কংগ্রেসকে ওই মহাপদযাত্রার অনুমতি দিতে পারছে না।
আর, সেই কর্মসূচির পরিবর্তি তারিখ ২২ সেপ্টেম্বর ঠিক হওয়া মাত্র জারি হল নিষেধাজ্ঞা। বিপ্লব দেবের প্রশাসন জানাল, ২২ সেপ্টেম্বর সকাল ছ’টা থেকে ৪ নভেম্বর মধ্যরাত্রি পর্যন্ত ত্রিপুরার বুকে সবরকম মিটিং মিছিল সমাবেশ পদযাত্রা নিষিদ্ধ। অজুহাত, কোভিড পরিস্থিতি।
অর্থাৎ সাতদিন আগেও যেখানে অন্য দলকে মিছিলের অনুমতি দিয়েছিল প্রশাসন, সেখানে কোভিড পরিস্থিতি এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই এতটা ভয়ানক হয়ে উঠেছে যে সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করতে হল।
সত্যি?
বোধহয় না।
এ হল জুজুর ভয়ে অজুহাতের আশ্রয়গ্রহণ।
কোভিড পরিস্থিতি ও পুজোর অজুহাতে গোটা ত্রিপুরা রাজ্যে কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি নেওয়া যাবে না। এই মর্মে হাইকোর্টে হলফনামা দিয়েছে বিপ্লব দেবের ত্রিপুরা সরকার।

আরও পড়ুন-বাবুলই শেষ নয়, আরও বড় নেতা আসছে! ফিরহাদের মন্তব্যে বঙ্গ বিজেপির বাড়ল চিন্তা

টিম অভিষেক ত্রিপুরার মাটিতে ঝড় তুলেছে। স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে নিজেদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিচ্ছেন সুস্মিতা দেব, শান্তনু সেন, মলয় ঘটক, কুণাল ঘোষ থেকে শুরু শুরু করে দেবাংশু ভট্টাচার্য, জয়া দত্ত, সুদীপ রাহা-সহ ছাত্রযুব নেতৃত্ব। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াইয়ের শপথ।
প্রায় সাড়ে তিন বছর ত্রিপুরায় ক্ষমতাসীন বিপ্লব দেবের সরকার। যে প্রতিশ্রুতির ফানুস ফুলিয়ে ভোট কুড়িয়েছিলেন, তার একটাও পূরণ করতে পারেননি। ত্রিপ্রা মোথা জেতার পর থেকেই ওই রাজ্যে বিজেপির ঘুম উড়ে গিয়েছিল। এরপর তৃণমূল কংগ্রেসের পদার্পণে তারা থরহরি কম্পমান। চারিদিকে ‘গেল গেল’ রব উঠেছে। অত্যাচার, নির্যাতন, পুলিশি সন্ত্রাস, গেরুয়া হার্মাদের তাণ্ডব, এসবের ভয়ে অনেকেই হয়তো প্রকাশ্যে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদানের সাহস দেখাতে পারছেন না। কিন্তু ভোট এলে বেশিরভাগ মানুষেরই যে প্রথম পছন্দ হবে জোড়া ফুল, সেকথা এখনই দিনের আলোর মতো পরিষ্কার, বিজেপির গুন্ডাদের অত্যাচারের ভয়ে সরাসরি তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিতে না পারলেও আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তাঁরা বিপ্লব দেবের সরকারকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার ব্যাপারে একরকম মনস্থ করেই ফেলেছেন। বিপ্লব দেবের সরকারের কাছেও এসব খবর আছে। আর আছে বলেই তারা নানা অজুহাতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আটকাতে কোমর বেঁধে নেমেছে।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে মহামিছিল সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থনে ঐতিহাসিক পদযাত্রার রূপ নিতে যাচ্ছিল, এটাও তারা ভালমতোই বুঝতে পেরেছে।

আরও পড়ুন-অভিষেক, কুণাল সহ আার কাউকেই ডাকতে পারবে না ত্রিপুরা পুলিশ, নির্দেশ হাইকোর্টের

আর সেজন্যই প্রশাসনকে তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহারের নোংরা খেলা।
বিজেপি বুঝতে পেরেছে, পশ্চিমবঙ্গের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আটকাতে না পারলে ত্রিপুরায় বিজেপির সংগঠন তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে। ত্রিপুরায় বিজেপির নিচুতলার সংগঠনে বড়সড় ফাটল দেখা দিয়েছে। মহামিছিল হোক বা না হোক, ত্রিপুরার বুকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতি মানেই তাই বিজেপির চোখে সরষেফুল।
পদ্মফুল চোখে সরষেফুল দেখছে বলেই ‘ডবল ইঞ্জিন সরকার’-এর কথা শিকেয় তুলে কেন্দ্রের রেল দফতরের পরিবহণকে রুখে দিয়ে রাজ্যের শাসক দলের ‘অভিষেক রোকো’র চেষ্টা৷
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামটাই এখন বিপ্লব দেবের দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই, তাই-ই নরেন্দ্র মোদির সরকারের দফতরের বিরুদ্ধে বিজেপির রেল রোকোর ডাক।
মহামিছিল আপাতত হচ্ছে না।
বারবার নানা হাস্যকর ছুতোয় আটকানোর চেষ্টা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
এর থেকে একটা কথাই স্পষ্ট। ভয় পেয়েছে ত্রিপুরার বিজেপি। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম শুনলেই ওদের মেরুদণ্ডে হিমস্রোত নামছে।
ওরা আরও ভয় পাবে। পাবেই।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিকই বলেছেন, ‘‘ইয়ে ডর হমে অচ্ছা লাগা।’’
তৃণমূল কংগ্রেস তো এই ভয়টাই চায়।
মোদি-অমিত শাহ এখন বাংলার রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভয় পাচ্ছেন। আসলে, তৃণমূল কংগ্রেসের ‘সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দ্রুত গতিতে পায়ে বল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন গোলের দিকে ।
২০২৩-এ ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচন।

আরও পড়ুন-‘স্পেশাল’ আসানসোলের জন্য তহবিল থেকে কত খরচ? অভিযোগের ভিত্তিতে খতিয়ান প্রকাশ বাবুল সুপ্রিয়র

আর ২০২১-এর শারদ লগ্নেই আওয়াজ উঠেছে, ত্রিপুরায় খেলা হবে।
২০২৩-এর খেলায় বিজেপিকে গোল দেবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস।
১৯৮৬-র বিশ্বকাপে মারাদোনার কথা মনে আছে ?
এগারো জনকে কাটিয়ে গোল করেছিলেন ফুটবল দুনিয়ার রাজপুত্র মারাদোনা।
সেভাবেই এগোচ্ছেন দৃপ্ত শানিত তরুণ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
লক্ষ্য একটাই। ত্রিপুরার বুকে মা-মাটি- মানুষের প্রতিষ্ঠা।
গোল তিনি দেবেনই।
ত্রিপুরায় মা-মাটি-মানুষের সরকার প্রতিষ্ঠা, শুধু সময়ের অপেক্ষা

Latest article