প্রতিবেদন : ইরান ইস্যুতে তড়িঘড়ি পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধ-পরিস্থিতি ডেকে আনা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ার জন্য এবার নিজের দেশেই প্রবল ক্ষোভের মুখে পড়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিরোধী ডেমোক্র্যাটরা তো বটেই, এমনকী রিপাবলিকান পার্টিতেও ট্রাম্পের ভূমিকার সমালোচনা শুরু হয়েছে। বহু ট্রাম্প সমর্থক, যাঁরা গত নির্বাচনে ট্রাম্পের পক্ষে গলা ফাটিয়েছেন সেইসব সাধারণ ট্রাম্প-সমর্থকদের মধ্যেও বিরোধিতার সুর। ইরান-ইজরায়েল দ্বন্দ্বে নাক গলিয়ে আমেরিকার কী উপকার হবে সেই প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। এর পাশাপাশি ইরানে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সামরিক আগ্রাসন নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছে পুতিনের দেশও। ইরানের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে রাশিয়া। সব মিলিয়ে ‘যুদ্ধবাজ’ নেতানিয়াহু ও ইজরায়েলের কথায় অতি-উৎসাহী হয়ে ইরানে সামরিক আগ্রাসন দেখানো আমেরিকার হঠকারী সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন মার্কিন মুলুকের জনতাই।
আরও পড়ুন-ভারী বৃষ্টির পুর্বাভাসে সতর্কতায় জল ছাড়ল মুকুটমণিপুর জলাধার
মঙ্গলবার সকালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট যেভাবে তড়িঘড়ি ইরান-ইজরায়েল ‘সংঘর্ষবিরতি’ ঘোষণা করেন তার নেপথ্যে তাঁর দলের অন্তর্বিরোধ অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন অনেকেই। ইরানে মার্কিন সেনার হামলা নিয়ে সেদেশের আইনসভা কংগ্রেসের অন্দরেও সমালোচনার মুখে পড়েছেন ট্রাম্প। কংগ্রেসের অনুমতি না নিয়ে নিজের সিদ্ধান্তে এতবড় ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ তিনি নিলেন কেন, সেই প্রশ্ন উঠছে। মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসের রিপাবলিকান সদস্য টমাস ম্যাসি এক্স পোস্টে লিখেছেন, এই সামরিক হামলা আমেরিকার সংবিধান অনুযায়ী অবৈধ।
বস্তুত আমেরিকার আইন অনুযায়ী, নিজেরা আক্রমণের মুখে না-পড়া সত্ত্বেও অন্য দেশের ভূখণ্ডে সামরিক হামলা চালাতে হলে কংগ্রেসের অনুমোদন অপরিহার্য। কিন্তু ইরানের ফোরডো, নাতানজ, ইসফাহান পরমাণুকেন্দ্রে পেন্টাগন হামলা চালানোর আগে মার্কিন আইনসভাকে পুরোপুরি অন্ধকারে রাখা হয়েছিল। প্রেসিডেন্টের নিজের দল রিপাবলিকান পার্টির প্রভাবশালী কংগ্রেসম্যান ওয়ারেন ডেভিডসন মঙ্গলবার ট্রাম্পকে নিশানা করে সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, এই কাজ সাংবিধানিকভাবে বৈধ, এমন কোনও যুক্তি কল্পনা করাই কঠিন। ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’-এর মতোই ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধবিরতি ঘোষণার ক্ষেত্রেও যে ট্রাম্প অহেতুক তড়িঘড়ি করেছেন, তাও স্পষ্ট হয়েছে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই। তিনি নিজেই সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন তেহরান-তেল আভিভ, দু’পক্ষের বিরুদ্ধেই। ঘটনাচক্রে তাঁর যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পরেও তেল আভিভ হামলা চালিয়েছে ইরানে। সেজন্য বিরক্তিও প্রকাশ করেন ইজরায়েলের বন্ধু ট্রাম্প।
আরও পড়ুন-জন্মদিনে জয় অধরা মেসির, জিতল পিএসজি, বিদায় অ্যাটলেটিকোর
দেখা যাচ্ছে, গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পকে ঢেলে ভোট দিয়েছেন এমন রিপাবলিকান সমর্থকরাও ইরান ইস্যুতে তাঁর ভূমিকায় হতাশ। ইরানে হামলা প্রসঙ্গে জনতার মতামত সংগ্রহ করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস। তাতে উঠে আসে, অনেক ট্রাম্প-সমর্থকই তাঁর এখনকার ভূমিকার বিরোধিতা করেছেন। অনেকেই বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে পশ্চিম এশিয়া আমাদের অগ্রাধিকারের তালিকাতেই থাকা উচিত নয়। কারও যুক্তি, ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছিলাম, কারণ মনে করেছিলাম যে উনি উপসাগরীর অঞ্চলের সংকট থেকে আমেরিকাকে দূরে রাখবেন। কিন্তু উনি সেখানে নাক গলিয়ে আমেরিকাকে অনর্থক যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে এনে ফেললেন। এই পদক্ষেপ সমর্থনযোগ্য নয়।