চালু হয়ে গেল ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতি, মহাবিপাকে ভারতের শ্রমনির্ভর ক্ষেত্রগুলি

মার্কিন নির্দেশ উপেক্ষা করে ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে অপরিশোধিত তেল কেনা অব্যাহত রাখায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।

Must read

প্রতিবেদন: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে বুধবার থেকে ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হয়েছে, যার ফলে ভারতের উপর মোট শাস্তিমূলক শুল্ক ৫০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মার্কিন নির্দেশ উপেক্ষা করে ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে অপরিশোধিত তেল কেনা অব্যাহত রাখায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। বুধবার সকাল ৯:৩০ থেকে কার্যকর হওয়া এই উচ্চ শুল্ক ভারতের রফতানিকারকদের ওপর তীব্র চাপ সৃষ্টি করবে বলে বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন। এই শুল্কনীতি দেশের রফতানি-সম্ভাবনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে বলে আশঙ্কা।
গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (জিটিআরআই)-এর মতে, উচ্চ হারে মার্কিন শুল্ক বলবৎ হওয়ার ফলে ৬০.২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ভারতীয় রফতানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশেষত বস্ত্র, রত্ন, গয়না, চিংড়ি, কার্পেট এবং আসবাবপত্রের মতো শ্রমনির্ভর শিল্পখাতগুলিতে রফতানি ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে, যা লক্ষ লক্ষ কর্মীর জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করবে। এই শুল্ক ভারতের মোট ৮৬.৫ বিলিয়ন ডলারের রফতানির প্রায় ৬৬ শতাংশ পণ্যের ওপর প্রযোজ্য হবে। যদি এই শুল্কহার বহাল থাকে, তাহলে আগামী বছর রফতানি কমে ৪৯.৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসতে পারে। এতে চিন, ভিয়েতনাম এবং মেক্সিকোর মতো প্রতিদ্বন্দ্বীরা মার্কিন বাজারে নিজেদের অবস্থান আরও জোরদার করার সুযোগ পাবে।

আরও পড়ুন-সাত লুকের চ্যালেঞ্জে, কাল সোহমের নতুন ছবি বহুরূপ

রফতানিকারক গোষ্ঠীগুলি আশঙ্কা করছে যে এই শুল্ক বৃদ্ধিতে প্রায় ৮৭ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ভারতীয় পণ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যা বাংলাদেশ, চিন এবং ভিয়েতনামের মতো দেশগুলিকে সুবিধা দেবে। মুডি’স অ্যানালিটিক্সের এক বিশ্লেষণে সতর্ক করা হয়েছে যে, নতুন মার্কিন শুল্কহার ভারতীয় পণ্যের চাহিদা মারাত্মকভাবে হ্রাস করবে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, মার্কিন মুলুকে সবচেয়ে বড় ক্লায়েন্টের কাছে বিক্রি কমে যাওয়ায় রফতানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মুডি’স আরও জানিয়েছে, কিছু সংস্থা বিক্রি ধরে রাখতে পণ্যের দাম কমাতে পারে, কিন্তু এতে তাদের মুনাফার মার্জিন কমে যাবে, মজুরি বৃদ্ধি সীমিত হবে এবং বিনিয়োগ হ্রাস পাবে, যা সামগ্রিক ব্যবসায়িক কর্মক্ষমতাকে প্রভাবিত করবে। বিশ্লেষকরা বলছেন ওষুধ, স্মার্টফোন এবং ইস্পাতের মতো খাতগুলি মার্কিন শুল্কনীতির জেরে তুলনামূলক কম প্রভাবিত হবে। এই খাতগুলিতে শুল্ক কাঠামোর ছাড় এবং ভারতে নিরবচ্ছিন্ন অভ্যন্তরীণ চাহিদার কারণে এই অর্থনৈতিক ধাক্কা কিছুটা সামাল দেওয়া সম্ভব হতে পারে। এই শুল্কবৃদ্ধি উভয় দেশের কৌশলগত সম্পর্কেও গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা।

আরও পড়ুন-দুই জেলার তিন সমবায় ভোটে বিরাট জয় তৃণমূল কংগ্রেসের, নন্দীগ্রামে খাতা খুলতেই পারল না গোহারা বিজেপি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘকাল ধরে ‘কোয়াড’-এর মতো উদ্যোগের মাধ্যমে ভারতকে নিজেদের আরও কাছে টানতে চেয়েছে, যা অস্ট্রেলিয়া এবং জাপানকে সঙ্গে নিয়ে চিনকে মোকাবিলা করার জন্য একটি নিরাপত্তা জোট। চলতি বছরের শুরুতে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর কোয়াডের প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা বিষয়ক ফোকাসকে শক্তিশালী করার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। তবে এখন এই শুল্ক উত্তেজনা সেই প্রচেষ্টাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। আমেদাবাদে একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ভারত কৃষক, ক্ষুদ্রশিল্প এবং দেশীয় উৎপাদকদের স্বার্থের সঙ্গে আপস করবে না। তিনি বলেন, আমাদের উপর চাপ বাড়তে পারে, কিন্তু আমরা তা সবই সহ্য করব। নতুন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকার নাগরিক ও ব্যবসায়ীদের ‘স্বদেশি’ পণ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ওয়াশিংটনের অর্থনৈতিক চাপ যাই হোক না কেন, সরকার এর একটি সমাধান খুঁজে বের করবে। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এনবিসি’র ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে এই কৌশলকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ‘আক্রমণাত্মক অর্থনৈতিক চাপ’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি আরও বলেন, হয়তো আমরা আরও চাপ প্রয়োগ করব, অথবা আমরা মনে করব যে আমরা অগ্রগতি করছি এবং সেই চাপ কমিয়ে আনব। আমাদের হাতে এখনও অনেক কিছু করার আছে। এর আগে, গত মার্চ থেকে জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত ভারতীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে পাঁচ দফা নিবিড় আলোচনা সত্ত্বেও কোনও সুনির্দিষ্ট ফলাফল আসেনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ জুলাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের উচ্চশুল্ক এবং বাণিজ্যিক বাধার কথা উল্লেখ করে ভারতীয় আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন, যা ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হয়। তিনি ভারতের অর্থনীতিকে ‘মৃত’ বলেও অভিহিত করেছিলেন। এর জবাবে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক এই শুল্ককে অন্যায়, অযৌক্তিক এবং অসংগত বলে অভিহিত করে এবং সতর্ক করে যে ভারত তার জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করার জন্য সমস্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। রাশিয়া থেকে তেল কেনা নিয়ে ভারত এখনও কোনও নতুন নির্দেশ জারি করেনি। মস্কোতে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, ভারতীয় পণ্যের উপর মার্কিন শুল্ক বাড়লেও ভারত সেই উৎস থেকে তেল কেনা চালিয়ে যাবে যা ‘সর্বোত্তম চুক্তি’ প্রদান করে। তিনি আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য হল ভারতের ১.৪ বিলিয়ন মানুষের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং রাশিয়া ও অন্যান্য দেশের সাথে ভারতের সহযোগিতা আন্তর্জাতিক তেলের বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে সাহায্য করেছে। অর্থাৎ মার্কিন শুল্কচাপের মুখেও রাশিয়া থেকে তেল কেনায় ছেদ দিতে নারাজ নয়াদিল্লি।

Latest article