ট্রাম্পের শুল্কনীতি ও কেন্দ্রের উদাসীনতা ১৩ হাজার কোটি ক্ষতির মুখে রপ্তানি

ভারতের চিংড়ি রপ্তানির বড় বাজার আমেরিকা, বাড়তি শুল্কের চাপে সেই ব্যবসায়ীদের এখন মাথায় হাত। ক্ষতির মুখে বাংলার চিংড়ি চাষীরা।

Must read

প্রতিবেদন: গত কয়েক বছর ধরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘বন্ধু’ বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আর সেই ‘বন্ধু’ ট্রাম্পই চড়া শুল্ক আরোপ করে কার্যত পথে বসিয়ে দিয়েছেন মোদিকে। আর দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক টানাপোড়েনের জেরে খনিজ সম্পদ থেকে ইলেক্ট্রনিক্স, সব ধরনের ব্যবসায় ক্ষতির মুখে গোটা দেশের ছোট, বড় ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। সবচেয়ে বড় ধাক্কা নেমে এসেছে ভারতের রপ্তানিক্ষেত্রে। ভারতের চিংড়ি রপ্তানির বড় বাজার আমেরিকা, বাড়তি শুল্কের চাপে সেই ব্যবসায়ীদের এখন মাথায় হাত। ক্ষতির মুখে বাংলার চিংড়ি চাষীরা। বাধ্য হয়ে আমেরিকার বিকল্প হিসাবে ইউরোপ ও পূর্ব এশিয়ার বাজার খুঁজছেন চাষিরা। তবে শুধু বাংলা নয়, একই পরিস্থিতির শিকার অন্ধ্র ও ওড়িশার উপকূল এলাকার চিংড়ি চাষিদেরও।

আরও পড়ুন-দুর্যোগ মোকাবিলা খাতেও বাংলাকে বঞ্চনা কেন্দ্রের

ভারত থেকে প্রতিবছর প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকার চিংড়ি মাছের ব্যবসা হয় আমেরিকায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের উপর যেসব সামগ্রীতে ৫০ শতাংশ শুল্ক লাগু করেছেন তার মধ্যে অন্যতম এই সামুদ্রিক প্রাণি। শুল্ক লাগু হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই আমেরিকার বাজারে বেড়ে গিয়েছে ভারতীয় চিংড়ির দাম। স্বাভাবিকভাবেই ভারতীয় ব্যবসায়ীদের কঠিন প্রতিযোগিতায় পড়তে হচ্ছে আমেরিকায়।
পরিস্থিতি এমন যে ইতিমধ্যেই আমেরিকা থেকে ব্যবসা সরানোর ভাবনাচিন্তা শুরু করেছেন বাংলার চিংড়ি ব্যবসায়ীরা। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুর থেকেই মূলত বাংলার চিংড়ি বিদেশে পাড়ি দেয়। প্রতি বছর প্রায় ৯০০ কোটি টাকার ব্যবসা করেন বাংলার চিংড়ি ব্যবসায়ীরা। এই ব্যবসায়ীদের দাবি, চলতি পরিস্থিতিতে তাঁরা ইউরোপের অন্য দেশে ব্যবসা সরানোর চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন। যদি দ্রুত ব্যবসা সরানো না সম্ভব হয় তবে এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত চাষিরা সরাসরি ক্ষতির মুখে পড়বেন, যা ইতিমধ্যেই টের পেতে শুরু করেছেন দিঘার ব্যবসায়ীরাও। বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করার পরে লোকসান হলে তাঁরা চাষিদের থেকে কেনার পরিমাণ কমানোর পথে যেতে বাধ্য হবেন।

আরও পড়ুন-মাঠে এল না মোহনবাগান

তবে শুধু বাংলা নয়, ভারতের উপর ট্রাম্পের ৫০% শুল্ক আরোপের জেরে ক্ষতির মুখে বিজেপি শাসিত ওড়িশার চিংড়ি চাষি ও ব্যবসায়ীরাও। লোকসান ঠেকাতে দেশের বৃহৎ ঋণদান সংস্থার থেকে তাঁরা অতিরিক্ত ঋণ ও মোরাটোরিয়ামের আবেদন করে রেখেছেন। সেইসঙ্গে চিংড়ি ও অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ মিলিয়ে ১৭ হাজার কোটির ক্ষতির মুখে পড়বে দক্ষিণ ভারতের ব্যবসায়ীরা, প্রাথমিক অনুমান সিফুড এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার। শুধুমাত্র বাংলা ও ওড়িশার চাষি ও ব্যবসায়ী পরিবার মিলিয়ে ৪০ লক্ষ মানুষের উপর আমেরিকায় ব্যবসায় লোকসানের সরাসরি প্রভাব পড়েছে বলে দাবি বাংলা ও ওড়িশার চিংড়ি চাষ ও রফতানির সব ক’টি সংস্থাই। আমেরিকার ব্যবসা বন্ধ হলে অন্যত্র লাভের মুখ দেখতে বিস্তর কাঠখড় পোড়াতে হবে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। প্রথমত, বাকি সব বাজারেই মার্কিন শুল্ক যুদ্ধের জন্য প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হচ্ছে চিংড়ির ব্যবসাকে। দ্বিতীয়ত, লাভজনক বাজার হিসাবে যে ইউরোপের কথা ভাবছেন ভারতের তথা বাংলার ব্যবসায়ীরা, সেই ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলিও শুল্কের পরিমাণ সম্প্রতি বাড়িয়েছে। এমনকী ইংল্যান্ডের সঙ্গে ভারতের শুল্কমুক্ত বাণিজ্যের যে চুক্তি হয়েছে, তা কার্যকর হতে এখনও অনেক সময় বাকি। সেই সময়ের মধ্যে প্রতি মাসে লোকসানের মুখে পড়তে হবে বাংলা তথা সমুদ্র উপকূলবর্তী সব রাজ্যের মৎস্যজীবীদেরই।

Latest article