সৌমেন মল্লিক বারুইপুর: জন্মিলে মরিতে হবে অমর কে কোথা কবে… এ জগতে কেউই অমর নেই। জীবনের শেষ যেখানে হয়, সেখান থেকেই জীবনে নতুন করে বাঁচার লড়াই চালাচ্ছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরের টুম্পা দাস। রাজ্যে তিনিই একমাত্র মহিলা ডোম। বাবার মৃত্যুর পর ১০ বছর ধরে তিনি সংসার সংগ্রামে বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন ডোমের কাজ করেই।
আরও পড়ুন-মোদি জমানায় ‘বিশ্বমানের স্বাস্থ্য’ বিপর্যয়েরই সমার্থক
একা হাতে বারুইপুরের পুরন্দরপুর মহাশ্মশানের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন বছর ২৯-এর টুম্পা। নাম নথিভুক্ত থেকে চুল্লিতে ঢোকানো পর্যন্ত সবটাই নিজ দায়িত্বে পালন করেন তিনি। ২০১৪ সালে বাবাকে হারান তিনি। তারপরই সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে তাঁর কাঁধে। বাড়ির বড় মেয়ে। সংসার সামলাতে কিছু না ভেবেই যোগ দেন বাবার চাকরিতে। কল্যাণপুর অঞ্চলের পুরন্দরপুরেই তাঁর বাড়ি। ছোট বোন, মা ও ভাইকে নিয়ে তাঁর সংসার। সেই সংসার বাঁচাতে কোনও ভয়ভীতিকেই মনে আমল দেননি টুম্পা। কর্তব্যে অবিচল হয়ে সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দেহ সৎকার করে চলেন তিনি। মাসিক বেতন সাড়ে তিন হাজার টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫ হাজার। এখন শ্মশানে বসেছে ইলেকট্রিক চুল্লি। তার আগে কাঠের চুল্লিতেই হত শেষকৃত্য। সেই অভিজ্ঞতাও রয়েছে টুম্পার। তাঁর কথায়, কোনও কাজই কঠিন বলে ভাবিনি। বাবা মারা যাওয়ার পর ভেবেছি সংসারকে বাঁচাতে হবে। তাই যে করেই হোক এই কাজ করতে হবে। প্রথম প্রথম ভয় লাগত, একটু সমস্যা হত। এখন আর হয় না। পরিস্থিতি ও সময় থেকেই শিখেছি। দেখেছি, মরা মানুষের থেকে জীবিত মানুষকে নিয়ে ভয় বেশি। তবুও কুছ পরোয়া নেহি মনোভাবে টুম্পা জানিয়ে দিলেন, সব প্রতিকূলতা মানিয়ে নিয়েছি। এখন শ্মশানের ভেতরেই বেশি সুরক্ষিত বলে মনে হয় টুম্পার। টু্পা জানান, একাধিক সম্বন্ধ এসেছে বিয়ের, কিন্তু তাঁর কাজ সম্পর্কে জেনেই সবাই পিছপা হয়ে যায়। তাতেও কষ্ট নেই টুম্পার। কারণ দিনের শেষে সংসার সংগ্রামে তিনি জয়ী। রাজ্যের একমাত্র মহিলা ডোম হিসেবে তাঁর একটাই আবেদন, যদি এই কাজটা স্থায়ী করা যায়!