উত্তাল বাংলাদেশ: কোটা আন্দোলনে মৃত্যু বেড়ে ১১

কোটা-আন্দোলেনের জেরে কাঁপছে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষে ১১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে।

Must read

সৌম্য সিংহ: কোটা-আন্দোলেনের জেরে কাঁপছে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষে ১১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৯ জনই ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ ও ছাত্রলিগ-যুবলিগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন। রাজধানীয় উত্তরায় মৃত্যুর খবর মিলেছে। ধানমণ্ডিতে সংঘর্ষে এক কলেজ পড়ুয়া ও এক পথচারী মারা যান। সাভারে এক পড়ুয়া, মাদারিপুরে এক শিক্ষার্থী, যাত্রাবাড়িতে এক রিকশাচালক প্রাণ হারান। সব মিলিয়ে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর।

আরও পড়ুন-‘চাঁদিপুরা’ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মোদীরাজ্যে মৃ.ত ৬ শিশু

ঢাকার যাত্রাবাড়ি এলাকায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পুলিশ এবং আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ চলে। ঢাকার উত্তরায় পুলিশ ও র‍্যাবের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ শুরু হয় বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার পর থেকে। বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের সামনে আন্দোলকারীরা বিক্ষোভ দেখান। সেখানেও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অনেক আহত। রামপুরায় বি-টিভি ভবনে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে। ধানমণ্ডিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামি লিগের নেতা-কর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে স্থানীয় স্কুলের একাদশ শ্রেণির এক পড়ুয়া নিহত হন। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা নাগাদ বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ এবং স্কুলের পড়ুয়ারা উত্তরার জমজম টাওয়ারের কাছে জড়ো হন। মিছিল করে তাঁরা মূল সড়কে উঠতে চেষ্টা করলে বাধা দেয় র‍্যাব এবং পুলিশ। শুরু হয় সংঘর্ষ। কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটিতে আন্দোলনকারীদের কবল থেকে পুলিশ কর্মীদের উদ্ধার করতে দুটি হেলিকপ্টার পাঠাতে হয় প্রশাসনকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই হিংসাত্মক আন্দোলনের তীব্র নিন্দা করে বলেছেন, এই আন্দোলনের আদৌ কোনও যুক্তি নেই। গন্ডগোল পাকাতেই বিরোধীদের এই চক্রান্ত। শান্ত বাংলাদেশকে অশান্ত করতে চাইছে ওরা। আইনমন্ত্রী বৃহস্পতিবার বিকেলেও আন্দোলনকারীদের বার্তা দিয়েছেন, হিংসা থামান। আলোচনার দরজা এখনও খোলা। বুধবার রাতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে কড়া বার্তা দিয়েছেন হিংসাত্মক আন্দোলনকারীদের। আন্দোলনে মৃত্যুর ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন মৃতদের পরিবারবর্গকে। তা সত্ত্বেও আরও হিংসাত্মক চেহারা নিচ্ছে সংরক্ষণ-বিরোধী আন্দোলন। এদিকে বাংলাদেশে বসবাসকারী ভারতীয় নাগরিক এবং পড়ুয়াদের উদ্দেশ্যে বৃহস্পতিবার সতর্কবার্তা জারি করেছে ভারতের বিদেশ দফতর। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ভ্রমণ বর্জন করতে এবং বাড়ির বাইরে বের হওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে। ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন এবং চট্টগ্রাম, সিলেট ও খুলনার উপ-দূতাবাসে প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন-১ মাসের মাথায় ফের ট্রেন দুর্ঘটনা, ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী

বৃহস্পতিবার দেশ জুড়ে সর্বাত্মক অবরোধ বা কমপ্লিট শাট-ডাউনের ডাক দিয়েছিল সংরক্ষণ-বিরোধী আন্দোলনকারীদের যৌথমঞ্চ ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা। আগেই ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে। বন্ধ দোকান-বাজার, অফিস-কাছারি। এটা ঘটনা, আন্দোলনকারীদের সরাসরি মদত দিচ্ছে বিরোধী দল বিএনপি। ফলে হিংসাত্মক হয়ে উঠছে আন্দোলন। আন্দোলনকারীদের সমঝে দিতে লাঠিসোঁটা নিয়ে নেমে পড়ে আওয়ামি লিগের ছাত্রলিগ এবং যুবলিগের সমর্থকরাও। সঙ্গে পুলিশ এবং র‍্যাব। মঙ্গলবারই দু’পক্ষের সংঘর্ষ ভয়াবহ রূপ নেয়। ঢাকা, রংপুর এবং চট্টগ্রামে মৃত্যু হয় মোট ৬ জনের। এর প্রেক্ষিতে বুধবারই সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। প্রশাসনের নির্দেশ সত্ত্বেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর এবং হস্টেল ছেড়ে যেতে রাজি হচ্ছেন না ছাত্রছাত্রীরা। বৃহস্পতিবার দুপুরের পরে পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়ে ওঠে যে মেরুল বাড্ডায় কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটির ভেতরে অভিযান চালাতে গিয়ে আটকে পড়ে পুলিশ। আন্দোলনকারীদের দিকে ছররা গুলি এবং রাবার বুলেট ছুঁড়েও সুবিধা করতে পারেনি পুলিশ। শেষে দুটি হেলিকপ্টারে উদ্ধার করা হয় আটকে থাকা পুলিশকর্মীদের।
এদিকে আওয়ামি লিগের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের রাজপথে থেকে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক তথা গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, কোটা আন্দোলন ধৈর্য ও সহনশীলতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে সরকার। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যা করণীয় করছেন নিরাপত্তারক্ষীরা। সন্ত্রাস ও সংহিসতার ষড়যন্ত্র যাঁরা করছেন তাঁদের মুখোশ খুলে দেওয়া হবে। কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে। তাঁর কথায়, কিছু কিছু গণমাধ্যম ভুল খবর পরিবেশন করছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কথা ভেবেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে।
বিএনপি ও জামাত সন্ত্রাসের আগুন লাগাতে চায়। আওয়ামি লিগ সরকার তা বরদাস্ত করবে না।

Latest article