শুরুর দিকে ইন্ডাস্ট্রিতে সেইভাবে কল্কে পাননি টোটা রায়চৌধুরী। কাজ করেছেন প্রচুর। ‘লাঠি’, ‘চোখের বালি’র মতো ব্লকবাস্টার ছবিতে দুর্দান্ত অভিনয় করলেও, কিছুটা যেন ঢাকা পড়েছিলেন অন্যদের আড়ালে। তবে হাল ছাড়েননি। কাজ করে গেছেন মুখ বুজে। দাঁতে দাঁত চেপে।
বড়পর্দার পাশাপাশি অভিনয় করেছেন ছোটপর্দায়। ‘এখানে আকাশ নীল’ ধারাবাহিকের ডাঃ রোমিত সেন তিনি। মার্জিত চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলে হয়ে উঠেছিলেন বহু সুন্দরীর ক্রাশ। তবু কিছুতেই যেন পূরণ করতে পারছিলেন না কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য। কোথায় যেন আটকে পড়ছিলেন। সময় যত পেরোচ্ছিল, তত বাড়ছিল খিদে। একটা সময় নিজেকে আরও গড়ে-পিঠে নিলেন। বদলে ফেললেন লুক। অ্যাক্টিং স্টাইল। ঠিক সেইসময় হুড়মুড়িয়ে এসে পড়ল ডিজিটাল মাধ্যম। শুরু হল ওয়েব সিরিজের যুগ। টোটা বুঝে গেলেন, এবার তিনি পারবেন। টলিউডে তো বটেই, বলিউডেও শক্ত করলেন মাটি। এখন তাঁর হাতে প্রচুর কাজ। বেশিরভাগ উল্লেখ করার মতো। দ্বিগুণ বেড়েছে ব্যস্ততা। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, এখন একদিনে তাঁর অভিনীত দুটি ছবি বা সিরিজ মুক্তি পাচ্ছে।
গত ২০ ডিসেম্বর হইচই ওয়েব প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেয়েছিল সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘ভূস্বর্গ ভয়ঙ্কর’ সিরিজটি। টোটা এখানে ‘ফেলুদা’ চরিত্রে অভিনয় করেছেন। একই দিনে তাঁকে দেখা গেছে বড় পর্দাতেও, প্রতিম ডি গুপ্তর বড়দিনের ছবি ‘চালচিত্র’য় কড়া পুলিশ প্রধান কণিষ্ক চট্টোপাধ্যায়ের ভূমিকায়।
টোটা জানিয়েছেন, বছর শেষে এই দুই চরিত্রের জন্য আপনাদের অফুরান ভালবাসায় আমি আপ্লুত, কৃতজ্ঞ।
অশেষ ধন্যবাদ সৃজিত মুখোপাধ্যায়কে— আমায় ফেলুদার মতো আইকনিক চরিত্রে সুযোগ দেওয়ার জন্য। আর অকুণ্ঠ ধন্যবাদ জানাই প্রীতম ডি গুপ্তকে, ‘চালচিত্র’ ছবিতে আমায় কণিষ্ক চট্টোপাধ্যায়ের মতো এক বলিষ্ঠ চরিত্রে কাস্ট করার জন্য। সকল সহ-অভিনেতা, সহ-অভিনেত্রী ও কলাকুশলীবৃন্দকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। আমার দুই প্রযোজক হইচই ও ফ্রেন্ডস কমিউনিকেশনকে জানাই আমার অপার মুগ্ধতা। সর্বোপরি আমার প্রিয় দর্শক বন্ধুদের জানাই আন্তরিক প্রীতি।
অনেকেই বলছেন, রায়চৌধুরী মহাশয় পর্দায় ‘চট্টোপাধ্যায়’ হলেই ছবি হিট। করণ জোহরের ‘রকি ঔর রানি কি প্রেম কাহানি’ ছবিতে তিনি ছিলেন ‘চন্দন চট্টোপাধ্যায়’। সুপারহিট হয়েছিল ছবিটি।
আবারও একদিনে জোড়া টোটা দর্শকের সামনে হাজির হলেন। ১০ জানুয়ারি। ওইদিন নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেল বিক্রম মোতওয়ানের সিরিজ ‘ব্ল্যাক ওয়ারেন্ট’ এবং হইচইয়ে মুক্তি পেল বাংলা সিরিজ ‘নিখোঁজ ২’। দুটো সিরিজই অপরাধ দুনিয়ার ঘটনা নিয়ে।
জানা গেছে, ২০১৯-এ সাংবাদিক সুনেত্রা চৌধুরী এবং তিহার জেলের প্রাক্তন সুপারিনটেনডেন্ট সুনীল গুপ্তার লেখা বই ‘ব্ল্যাক ওয়ারেন্ট : কনফেশনস অফ আ তিহার জেলর’ বিক্রমের সিরিজের বিষয়। কুখ্যাত আসামিদের সঙ্গে জেলরের জীবন কাটানোর অভিজ্ঞতা দেখানো হয়েছে সেখানে। এসপি মুখোপাধ্যায়ের চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন টোটা। এছাড়াও আছেন জাহান কাপুর, রাহুল ভাট, অনুরাগ ঠাকুর। ২০২৩-এর ডিসেম্বরের শুরুতে এই সিরিজের লুক প্রথম সামনে এনেছিলেন অভিনেতা। পরিচালকের সঙ্গে তাঁর তোলা একটি ছবি শেয়ার করেন সমাজমাধ্যমে। দুধসাদা শার্টের উপরে হালকা চকোলেট রঙের ব্লেজার, ট্রাউজার আর টাই। চুল উল্টে আঁচড়ানো। পরিষ্কার করে দাড়ি কামানো। ফলে, চোখ টেনেছে গোঁফ। সেই সময় সংবাদমাধ্যমে টোটা জানিয়েছিলেন, বিক্রমের কাজের অনুরাগী তিনি। ওঁর সঙ্গে কাজ করার পর চিন্তাধারা ও কর্মপদ্ধতি প্রভাবিত করেছে তাঁকে।
অন্যদিকে, বাংলা সিরিজ ‘নিখোঁজ ২’-এ তিনি একটি বেসরকারি চ্যানেল প্রধান ‘রোমিত সেন’। তাঁর বিরুদ্ধেই উঠেছে এক অধস্তন মহিলা সাংবাদিককে খুনের অভিযোগ। কন্যা দিতি হঠাৎ নিখোঁজ। মেয়ের খোঁজে মরিয়া মা বৃন্দা। প্রথম কিস্তি মুক্তির পর জনপ্রিয়তা পেয়েছিল ‘নিখোঁজ’। বৃন্দা কি খুঁজে পাবে তার মেয়েকে? এমন গল্প নিয়ে মুক্তি পেয়েছে সিরিজটির দ্বিতীয় ভাগ। বৃন্দার চরিত্রে অভিনয় করেছেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। পরিচালনা করেছেন অয়ন চক্রবর্তী।
একদিনে মুক্তি পাওয়া দুটি সিরিজই প্রশংসিত হয়েছে দর্শক এবং সমালোচক মহলে। টোটার প্রশংসায় পঞ্চমুখ প্রায় সবাই। খুশি টোটাও। উপভোগ করছেন জোড়া সাফল্য। সংবাদমাধ্যমে তিনি জানিয়েছেন, ২০২৪-এর ২০ ডিসেম্বর মুক্তি পেয়েছে আমার অভিনীত দুটি কাজ। একটি বড় পর্দায়, অন্যটি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে। আবারও ঘটল একই ঘটনা। ১০ জানুয়ারি। এ নির্ঘাৎ গ্রহ-নক্ষত্রের কারসাজি। তিনি এও জানিয়েছেন, কাজগুলো যে পরপর হয়েছে, তা নয়। তবে মুক্তি পাচ্ছে একদিনে। এইভাবে একদিনে দুটো করে কাজ মুক্তি পেলে আমারই চাপ। এত দিন ধীরেসুস্থে কাজ করে এসেছি। এখন দেখছি রে-রে করে ছুটতে হবে। নইলে কাজের ঝুলি শূন্য।
এখন চাপ নিতে শিখে গেছেন টোটা। বুঝে গেছেন কীভাবে চলতে হয়। হৃদয় নয়, ঘটাচ্ছেন মেধার প্রয়োগ। এইভাবে মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করে গেলে আশা করা যায় আগামী দিনে তিনি আরও অনেক সাফল্য পাবেন।
টোটার জোড়া সাফল্য
একই দিনে মুক্তি পেয়েছে টোটা রায়চৌধুরী অভিনীত জোড়া সিরিজ, ‘ব্ল্যাক ওয়ারেন্ট’ এবং ‘নিখোঁজ ২’। প্রথমটি হিন্দি, দ্বিতীয়টি বাংলা। অভিনেতার প্রশংসায় পঞ্চমুখ সবাই। বুঝে, মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করে গেলে আগামী দিনে তিনি আরও অনেক সাফল্য পাবেন। লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী