তাঁর কবিতা ছিল সরল এবং গভীর। গদ্যভাষা ছিল আধুনিক। ছোটদের জন্য নিয়মিত লিখেছেন মৌলিক উপন্যাস। অনুবাদ করেছেন বিদেশি শিকার কাহিনি, বাইবেল এবং গীতা। নির্মাণ করেছেন লোককথাভিত্তিক গল্প সংকলন। সমাজসেবামূলক কাজেও ছিলেন সক্রিয়। তিনি প্রিয়ম্বদা দেবী। কবি প্রসন্নময়ী দেবীর কন্যা, প্রমথ চৌধুরীর ভাগনি, বেথুন কলেজের কৃতী স্নাতক। গিরিন্দ্রমোহিনী দাসী, মানকুমারী বসু, কামিনী রায়ের সার্থক উত্তরসূরি। অকালবৈধব্য ও সন্তানবিয়োগের কষ্ট সঙ্গী করে বাংলার সাহিত্যজগতে তাঁর প্রবেশ।
আরও পড়ুন-ইদের ছুটিতে রেকর্ড ভিড় উপচে পড়ল দিঘায়, তৎপর পুলিশ
মানবিক অনুভূতি, প্রকৃতিপ্রেম অথবা ঈশ্বরের প্রতি আত্মনিবেদন— সব কিছুকেই কবিতায় স্থান দিয়েছিলেন। প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় ‘ভারতী’ এবং ‘বালক’ পত্রিকায়। রবীন্দ্রনাথের থেকে এক দশকের ছোট ছিলেন। তাঁর কবিতা ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকার জন্য মনোনীত করেন কবিগুরু। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘রেণু’ প্রকাশিত এবং বিখ্যাত হয়েছিল সনেটধর্মী কবিতার জন্য। পরবর্তী সময়ে প্রকাশিত হয়েছে আরও কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ। জাপানি চিত্রশিল্পী ও পণ্ডিত ওকাকুরা কাকুজোর সঙ্গে রচিত হয়েছিল নিবিড় বন্ধুতা। এককথায় প্রিয়ম্বদা দেবী ছিলেন সময়ের থেকে এগিয়ে আধুনিকমনস্কা এক নারী। কয়েক বছর আগে নীরবেই পেরিয়ে গেছে তাঁর সার্ধশতবর্ষ। নদিয়ার ‘কথাকৃতি’ পত্রিকা বৈশাখে তাঁকে নিয়ে প্রকাশ করেছে বিশেষ সংখ্যা ‘সার্ধশতবর্ষ পেরিয়ে উপেক্ষার অন্তরালে প্রিয়ম্বদা দেবী’। সম্পাদনা করেছেন নীলাদ্রিশেখর সরকার। অতিথি সম্পাদক তপন বাগচী। এই সংখ্যার ‘প্রসঙ্গ: প্রিয়ম্বদা’ বিভাগে সংকলিত হয়েছে উৎকৃষ্টমানের বেশকিছু নতুন লেখা। কলম ধরেছেন বারিদবরণ ঘোষ, সুমিতা চক্রবর্তী, তরুণ মুখোপাধ্যায়, পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, ঈশিতা ভাদুড়ী, শ্যামাপ্রসাদ ঘোষ, ফরিদ আহমেদ দুলাল, অমিত মজুমদার, গৌতম সাহা প্রমুখ। প্রবন্ধগুলোয় আলোচিত হয়েছে এক-একটি বিষয়। জানা যায় অজানাকে। প্রিয়ম্বদা দেবীর শেষ কাব্যগ্রন্থ ‘চম্পা ও পাটল’ প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৩৯ সালে, তাঁর মৃত্যুর চার বছর পর। এই কাব্যগ্রন্থের ভূমিকা লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ভূমিকাটি মুদ্রিত হয়েছে ‘অনুসন্ধানের আলোয় প্রিয়ম্বদা’ বিভাগে। এছাড়াও মুদ্রিত হয়েছে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রমথনাথ বিশী, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, মন্মথনাথ সেন প্রমুখের মূল্যবান লেখা। ‘অগ্রন্থিত প্রিয়ম্বদা’ বিভাগে আছে উপন্যাস ‘পঞ্চুলাল’, কবিতা, ভ্রমণ কাহিনি, কাব্যনাটিকা, চিঠিপত্র ইত্যাদি। সবমিলিয়ে ৩৬৮ পৃষ্ঠার অনবদ্য একটি সংখ্যা। দাম ৩০০ টাকা।
গৌতম ঘোষদস্তিদারের সম্পাদনায় প্রকাশিত হত ‘রক্তমাংস’। একসময়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই লিটল ম্যাগাজিন ১৯৮৯ থেকে শুরু করে ২০১৯ সাল— এই ৩০ বছর নিরবচ্ছিন্নভাবে দেখেছিল আলোর মুখ। কয়েক বছর আগে সম্পাদকের প্রয়াণে পত্রিকাটির প্রকাশ বন্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি সেই পত্রিকার সম্পাদনার ভার গ্রহণ করেছেন কবি-প্রাবন্ধিক অরুণাংশু ভট্টাচার্য। ২৬০ পাতার ২৮০ টাকা দামের পত্রিকাটি প্রকাশনার দায়িত্ব নিয়েছেন আলোপৃথিবীর পক্ষে শুভদীপ সেনশর্মা এবং মৌমিতা পাল। বৈশাখে ৪৫তম সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। প্রচ্ছদকাহিনি হিসেবে রয়েছে ১২ জন বাঙালি ব্যক্তিত্বের শতবর্ষ উপলক্ষে শ্রদ্ধার্ঘ্য। বাদল সরকার, ইলা মিত্র, কেদার ভাদুড়ী, অরুণ ভট্টাচার্য, গুণময় মান্না, রাম বসু, গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার, জ্যোতিভূষণ চাকী, ভবতোষ দত্ত, সলিল চৌধুরী, ঋত্বিক ঘটক, তৃপ্তি মিত্রকে নিয়ে গদ্য লিখেছেন যথাক্রমে বিশ্বদেব মুখোপাধ্যায়, ভুবন মুরমু, কিশোর ঘোষ, মুহম্মদ মতিউল্লাহ, পুরুষোত্তম সিংহ, দেবকুমার সোম, পার্থজিৎ চন্দ, হিন্দোল ভট্টাচার্য, কৌশিক চক্রবর্তী, প্রদীপ চক্রবর্তী ও স্বপন মজুমদার। প্রতিটি লেখার পিছনে রয়েছে গভীর অধ্যয়ন, অন্বেষণ। মনে রাখার মতো কবিতা উপহার দিয়েছেন প্রত্যুষপ্রসূন ঘোষ, রামচন্দ্র প্রামাণিক, অরণি বসু, সৈয়দ কওসর জামাল, রামকিশোর ভট্টাচার্য, দীপক রায়, সুজিত সরকার, সমরেশ মণ্ডল, চৈতালি চট্টোপাধ্যায়, প্রবালকুমার বসু প্রমুখ। এছাড়াও আছে দীর্ঘ কবিতা এবং অন্য ভাষার কবিতা। ‘কেতাবদুরস্ত’ বিভাগে দুটি বইয়ের উপর আন্তরিক আলোচনা করা হয়েছে। নতুন সংযোজন ‘পুনর্মুদ্রণ’ বিভাগ। এই বিভাগে ছাপা হয়েছে বিপিনচন্দ্র পালের একটি দুষ্প্রাপ্য রচনা ‘কবিতার কষ্টিপাথর’। পত্রিকাটি নিয়ে প্রবীণ-নবীনদের আগ্রহ তুঙ্গে।