প্রতিবেদন : পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলার জবাব ‘অপারেশন সিন্দুর’-এ দিয়েছে ভারত। পাক অধিকৃত কাশ্মীরে এয়ার স্ট্রাইকের সেই বিবৃতি সংবাদমাধ্যমের সামনে তুলে ধরেছেন দুই মহিলা সেনা অফিসার। এর মাধ্যমে ভারত বিশ্বের কাছে ঐক্য ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শক্তিশালী বার্তা প্রদান করল। একই সঙ্গে ভারত বুঝিয়ে দিল, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যেমন ভারত দৃঢ়সংকল্প, তেমনই নিহতদের বিধবা স্ত্রীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রি, উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং এবং কর্নেল সোফিয়া কুরেশি অপারেশন সিন্দুর সম্পর্কে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারতের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আলোকপাত করেন। ব্রিফিংয়ে দুইজন মহিলা অফিসারের নেতৃত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্তটি ছিল বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
আরও পড়ুন-এবার উচ্চমাধ্যমিকে তৃতীয় সেমিস্টার শুরু ৮ সেপ্টেম্বর
সিঁদুর বা সিন্দুর বিবাহিত হিন্দু মহিলাদের প্রতীক। পহেলগাঁও গণহত্যায় নববিবাহিতরাও ছিলেন। পুরুষদের বেছে বেছে হত্যা করা হয়েছিল। বহু মহিলা স্বামী হারিয়েছেন, ছেলে হারিয়েছেন, বাবাকে হারিয়েছেন, দাদাকে হারিয়েছেন। তাঁদের প্রতীক হিসেবে
ভারতীয় সেনাবাহিনীর দুই অফিসারকে নেতৃত্বে রাখা হয়েছে। একজন হলেন সেনাবাহিনীর সিগন্যাল কর্পসের কর্নেল সোফিয়া কুরেশি। বেশ কিছু যুগান্তকারী কৃতিত্বের মাধ্যমে সামরিক ইতিহাসে তিনি ইতিমধ্যেই তাঁর স্থান তৈরি করেছেন। ৩৫ বছর বয়সি
সোফিয়া কুরেশি হলেন প্রথম মহিলা অফিসার যিনি বহুজাতিক সামরিক মহড়ায় সেনাবাহিনীর একটি দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এক্সারসাইজ ফোর্স ১৮ নামে এই মহড়াটি ছিল ভারত কর্তৃক আয়োজিত সর্ববৃহৎ বিদেশি সামরিক মহড়া।
২০১৬ সালের মার্চ মাসে তৎকালীন লেফটেন্যান্ট কর্নেল কুরেশি বহুজাতিক সামরিক মহড়ায় সেনাবাহিনীর প্রথম মহিলা অফিসার হিসেবে নেতৃত্ব দিয়ে একটি মাইলফলক তৈরি করেন। ২ মার্চ থেকে ৮ মার্চ পুনেতে অনুষ্ঠিত এই মহড়ায় আসিয়ান দেশ এবং জাপান, চিন, রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো বিশ্বশক্তি-সহ ১৮টি দেশ অংশগ্রহণ করে। কুরেশি ২০০৬ সালে কঙ্গোতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা অভিযানে সামরিক পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০১০ সাল থেকে শান্তিরক্ষা অভিযানের সঙ্গে যুক্ত আছেন।
আরও পড়ুন-প্রথম দশে হুগলিরই ১৪, উচ্চমাধ্যমিকেও কামাল জেলার, পিছিয়ে নেই কলকাতাও
উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং-এর বিমান বাহিনীতে যাত্রা শুরু হয়েছিল ছোটবেলার স্বপ্ন দিয়ে। স্কুলজীবন থেকেই তিনি বিমান চালাতে চেয়েছিলেন। তিনি ন্যাশনাল ক্যাডেট কর্পস (এনসিসি)-এ যোগদান করে তাঁর লক্ষ্য অর্জন করেন এবং পরে ইঞ্জিনিয়ারিং অধ্যয়ন সম্পন্ন করেন। তিনি ভারতীয় বিমান বাহিনীতে হেলিকপ্টার পাইলট হিসেবে কমিশন লাভ করেন। ২,৫০০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বিমান চালিয়েছেন। জম্মু ও কাশ্মীর এবং উত্তর-পূর্ব-সহ কিছু কঠিনতম অঞ্চলে চেতক এবং চিতার মতো হেলিকপ্টার পরিচালনা করেছেন। একাধিক উদ্ধার অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ২০২০ সালের নভেম্বরে অরুণাচল প্রদেশে তাঁর নেতৃত্বাধীন একটি প্রধান অভিযান ছিল। ২০২১ সালে তিনি ২১,৬৫০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত মাউন্ট মনিরং-এ ত্রি-সেনাবাহিনীর সর্ব-মহিলা পর্বতারোহণ অভিযানে যোগ দিয়েছিলেন।