উদার আকাশের দুই নক্ষত্র

করতে চেয়েছিলেন আত্মহত্যা, হয়ে গেলেন অমর। মহেন্দ্রনাথ গুপ্তের জীবনে জীবনদায়ী হয়ে উঠেছিল শ্রীরামকৃষ্ণকথা। ঠাকুর তাঁকে করেছিলেন শান্ত, আলোকিত। পরম আশ্রয় দিয়ে, সান্নিধ্য, উপদেশ দিয়ে। তারই ফল 'শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত'। এই গ্রন্থের মাধ্যমে মহেন্দ্রনাথ অগণিত মানুষের জন্য রেখে গিয়েছেন বাণীরূপ অমৃত। আজ প্রয়াণদিবসে তাঁকে স্মরণ করলেন পূর্বা সেনগুপ্ত

Must read

আকাশ জুড়ে মেঘের ঘনঘটা। প্রচণ্ড বৃষ্টিতে ভেসে যাচ্ছে চারদিক। ঘন ঘন মেঘের গর্জনে হৃৎপিণ্ড কেঁপে কেঁপে উঠছে। তারই মধ্যে কোন‌ওরকমে একটা ঘোড়ার গাড়ি ভাড়া করতে পারলেন মহেন্দ্রনাথ। একান্নবর্তী পরিবারের সঙ্গে একত্রে বাস করা অসম্ভব হয়ে উঠেছে। পরিস্থিতি এমনই খারাপ যে, দুর্যোগের দিনে স্ত্রীকে নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছেন তিনি। বাইরের থেকেও কষ্টদায়ক মনের দুর্যোগ। হৃদয় ভারাক্রান্ত। তবু বিধাতার দয়া হয় না। সেই দুর্যোগে বেরিয়ে ভেবেছিলেন এক বন্ধুর গৃহে রাতটুকুর মতো আশ্রয় গ্রহণ করবেন। পথে ঘোড়া অসুস্থ হল, তার আর কী দোষ! মানুষের গতিবিধিরই ঠিক নেই। আর সে তো একটা অবলা জীব মাত্র। কোন‌ওমতে মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত বন্ধুর বাড়ি পৌঁছলেন।

আরও পড়ুন-মনের ডাক্তার

কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই বন্ধু বুঝিয়ে দিলেন, তাঁর পক্ষে একরাতও আশ্রয় দেওয়া সম্ভব নয়। আবার দুর্যোগ মাথায় করে অবশেষে পৌঁছলেন বরানগরে এক আত্মীয়ের বাড়ি। সেখানে রাত কাটালেন। পরদিন মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এই শরীর আর রাখবেন না। তাই তাঁর মনের অবস্থা বুঝে সিদ্ধেশ্বর নামে এক আত্মীয় ও বন্ধু তাঁর সর্বক্ষণের সঙ্গী হলেন। ইতস্তত কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরির পর তিনিই বলে উঠলেন, ‘‘কাছেই রানি রাসমণির দেবালয় ও উদ্যান। চল আজ সেখানে যাই।’’ মনের জ্বালা জুড়াতে উপস্থিত হলেন সেই দেবালয়ে। যিনি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন তিনি অমর হয়ে থাকার জন্য অমৃত লাভ করলেন আর জগৎকে দিয়ে গেলেন সেই বাণী রূপ অমৃত— কথামৃত। যে গ্রন্থের ভূমিকায় তিনি লিখছেন সেই তাপহরা, দুঃখহরা অমৃতময় বাণীর কথা। সেই ত্রেতাযুগে গোপীগণ তাঁদের মনোহর শ্যামকে বলেছিলেন, তোমার কথা আমাদের জীবনে অমৃতসমান। ঠিক যা বলেছিলেন তাঁরা তাই-ই তুলে দিয়েছেন কথামৃতকার মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত—
‘‘তব কথামৃতম তপ্তজীবনম কবিভিরীড়িতম কল্মষাপহম
শ্রবণমঙ্গলম শ্রীমদাততম,ভুবি গৃণন্তি যে ভূরিদা জনা।”

আরও পড়ুন-রেলের গাফিলতির বলি ৩২৩ জন, বালেশ্বরে অসাধারণ টিম বাংলা

হে প্রভু, তোমার কথা তপ্তজীবনে অমৃতসমান। এই কথা জ্ঞানীজনের মতে আমাদের মনের কালিমা দূর করে। যে কথা শুনলে মঙ্গল হয়, শ্রীবৃদ্ধি পায়, সম্পদশালী হয় জীব— সেই কথাই জ্ঞানীরা প্রচার করে গিয়েছেন।
সত্যিই মহেন্দ্রনাথ গুপ্তের জীবনে শ্রীরামকৃষ্ণকথা জীবনদায়ী হয়ে উঠেছিল। কিন্তু সেখানেই শেষ হয়ে যায়নি, সেই অমৃতলাভ করে মাস্টার মহেন্দ্র নিজে কেবল অমর হননি, সেই যুগের, আগামী যুগের অগণিত মানুষের জন্য তিনি সেই বাণীরূপ অমৃতকে তিনি রেখে গিয়েছেন। সেইযুগের তীব্র যুগমন্থনে যে বিষ, যে হলাহল উঠে এসেছিল সেই বিষের ওষুধ এই কথামৃত। যুগদ্বন্দ্বে সৃষ্টি, যুগ প্রয়োজনে তার বিস্তৃতি।
কথামৃতকার মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত ১৮৫৪ সালের ১৪ জুলাই উচ্চ বৈদ্য বংশে জন্মগ্রহণ করেন। পারিবারিক দিক দিয়ে তিনি তৎকালের বিখ্যাত ব্রাহ্মনেতা কেশব সেনের আত্মীয় ছিলেন। নিজেও ছিলেন ব্রাহ্মভাবাপন্ন। পিতার নাম মধুসূদন গুপ্ত, মাতা চন্দ্রময়ী দেবী। হেয়ার স্কুলে পড়াশুনার শেষে তিনি প্রসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৮৭৪ সালে বিএ পাশ করেন। সেই বছরই তাঁর সঙ্গে নিকুঞ্জদেবীর বিবাহ হয়। প্রথম জীবনে কিছুদিন মার্চেন্ট অফিসে কাজ করেন মহেন্দ্রনাথ এবং পরবর্তী কালে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের হাইস্কুলে হেডমাস্টারমশাই ছিলেন। সেই থেকে মাস্টার মহাশয় নামে পরিচিত হতে থাকেন। ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে ২৬ ফেব্রুয়ারি তিনি দক্ষিণেশ্বর প্রথম যান ও শ্রীরামকৃষ্ণকে দর্শন করেন। যদিও এই তারিখ নিয়ে গবেষকদের মধ্যে মতভেদ দেখা যায়। তবে খুব ছোটবেলায় তিনি এক ভয়ানক ঝড়ের দিন দক্ষিণেশ্বরে গিয়েছিলেন এবং সেইদিন তাঁর আত্মীয়দের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে ভয় পেয়ে যান ও কাঁদতে থাকেন। মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত মনে করতেন সেদিন শ্রীরামকৃষ্ণই তাঁকে আত্মীয়দের কাছে যেতে সাহায্য করেছিলেন। এ নিশ্চয়ই এক আশ্চর্য সমাপতন। প্রথম জীবনে যিনি সংসারের সঙ্গে যোগ করিয়ে দিলেন, এক বিশেষ ক্ষণে তিনিই সর্বহারার দুঃখ দিয়ে কাছে টেনে নিলেন।

আরও পড়ুন-শিক্ষায় টাটা ক্যানসার ও পিজি এক ধাপে

খুব ছোটবেলা থেকেই মাস্টার মহাশয়ের ডায়েরি লেখার অভ্যাস ছিল। সেই অভ্যাসের বশবর্তী হয়ে তিনি যেদিন, যখন দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে বা অন্যান্য স্থানে শ্রীরামকৃষ্ণের দেখা পেয়েছেন, উপদেশ লাভ করেছেন সেই উপদেশ ও অধ্যাত্মপ্রসঙ্গ লিখে রেখেছেন ডায়েরিতে। তাঁর নিজস্ব ধারায়, নিজস্ব সাঙ্কেতিক ভঙ্গিতে। যখন তিনি সেগুলি লিখেছেন তখন সেইদিনের আলোচনা, পরিবেশ সমস্ত কিছুকে তুলে এনেছেন গভীর ধ্যানের মাধ্যমে। এই কথামৃত গ্রন্থের উপস্থাপনায় কিছুটা বাইবেলের ভাব অনুসরণ করা হয়েছে। যেমন, বাইবেলে যিশুর যে-শিষ্য যিশুর উপদেশ বর্ণনা করছেন তাঁর নাম থাকে, ঠিক তেমনই কথামৃত গ্রন্থের শিরোনামে বলা হচ্ছে, ‘‘শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত, শ্রীম কথিত।”
তিনি ব্রাহ্ম-অনুরাগী ছিলেন। তথাপি শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁকে চিনেছিলেন পরম বৈষ্ণব রূপে। কারণ তিনি ভাবচক্ষে যে চৈতন্যের দলকে পঞ্চবটীতে দেখেছিলেন সেই দলের মধ্যে অনেকের সঙ্গে তিনি মাস্টারমশায়েরও দেখা পেয়েছিলেন। তাই কখনও কখনও বলতেন, ‘‘তোমায় আমি চৈতন্যের দলে দেখেছিলুম।”

আরও পড়ুন-সভা করে কৃতজ্ঞতা সরকারি কর্মীদের

ডায়েরি লেখার অভ্যাসই মাস্টারমশাইকে দিয়ে প্রস্তুত করিয়েছিল এক আধ্যাত্মিক দলিলের। যা পৃথিবীর এক চরম সত্যবস্তু। শ্রীম বা মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত যেভাবে শুনেছেন, বুঝেছেন, সেইভাবেই বর্ণনা করেছেন। তখন দক্ষিণেশ্বর গ্রাম। সন্ধের ভিড় সেখানে নেই। পঞ্চবটীর পাতায় পাতায় অমানিশার কালোবর্ণ গাঢ় থেকে আরও গাঢ় হয়ে ওঠে। সমস্ত মন্দির যেন ডুবে যায় তপস্যার গভীরতার মধ্যে। কেবল উপদেশ নয় সেই সব মাহেন্দ্রক্ষণগুলোকেও তুলে ধরেছেন মাস্টারমশাই। আমরা সেই গ্রন্থের মধ্যে কিছু অংশ তুলে ধরব। প্রথমেই মাস্টারমশাই মন্দিরের বর্ণনা দিচ্ছেন, ‘‘মার নাম ভবতারিণী”। সেই দেবালয়ের বর্ণনা দিচ্ছেন যেখানে সমাজের সমস্ত স্তরের মানুষের আনাগোনা। তারপর যখন প্রবেশ করছেন শ্রীরামকৃষ্ণের সেই ছোট ঘরে তখন ‘সন্ধ্যা হয় হয়’— এই সন্ধিক্ষণ তো তাঁর মনে-প্রাণে, তাঁর চেতনায়, ভাবনায়। দুঃখ তাঁকে গ্রহণের জন্য তৈরি করে রেখেছে। যেমন যুগ এক সন্ধিক্ষণে, ঠিক তেমন ভাবেই সন্ধিক্ষণ আজ বিশ্ব ভাবনার ক্ষেত্রেও। তাই এই দিন ও রাত্রির মেলবন্ধনে দাঁড়িয়ে মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত যেন তৎকালীন বিশ্বের প্রতিনিধি। তিনি বারান্দায় উঠে দেখছেন বৃন্দা নামে এক পরিচারিকাকে। মাস্টারমশাই পণ্ডিত মানুষ। তিনি জানেন গ্রন্থই দিতে পারে জ্ঞানের সন্ধান। তাই বৃন্দা ঝিকে জিজ্ঞাসা করছেন, ‘‘ইনি (শ্রীরামকৃষ্ণ) কি খুব বইটই পড়েন?” উত্তর এল সমাজের পুঁথিহীন জীবনধারায় লালিত-পালিত এক নিম্নবর্গের মানুষের কাছ থেকে, ‘‘আর বাবা বইটই, সবই ওঁর মুখে।” আমরা জানি কত সহস্র বছর পূর্বে বৈদিক সভ্যতার যুগে ঋষিগণ বেদ শিক্ষা দিতেন মুখে। তাই বেদ শ্রুতি। কলিযুগের নববেদ যিনি রচনা করবেন তিনিও মুখে মুখেই সেই অধ্যাত্মধারাকে বর্ণনা করবেন। পুঁথিপাঠ না করলেও যে ধর্মবিদ হওয়া যায়, তা প্রমাণ করলেন শ্রীরামকৃষ্ণ।

আরও পড়ুন-হাওড়ায় যাত্রীরা পেলেন শুশ্রূষা, রাজ্যের সহায়তা

প্রথম দর্শনেই মাস্টারমশায়ের মনে হয়েছে চৈতন্যদেব সপার্ষদ বসে আছেন। কিংবা সেই পুরাণ চরিত্র শুকদেব ভাগবত-কথা বলছেন। প্রথম দর্শনেই তিনি এত উচ্চধারণা পোষণ করেছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ সম্বন্ধে। তাই কথামৃতে বলছেন, ‘‘চল ভাই আবার তাঁকে দর্শন করিতে যাই। সেই মহাপুরুষকে, সেই বালককে দেখিব, যিনি মা বই আর কিছু জানেন না, যিনি আমাদের জন্য দেহধারণ করে এসেছেন। তিনি বলে দেবেন, কী করে এই কঠিন জীবনসমস্যা পূরণ করতে হবে। সন্ন্যাসীকে বলে দেবেন, গৃহীকে বলে দেবেন। অবারিত দ্বার! দক্ষিণেশ্বরের কালীবাড়িতে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন। চল চল, তাঁকে দেখব।” কী আকুতি তাঁর ভাষায়, আজও আমাদের যা স্পর্শ করে।

আরও পড়ুন-দুর্ঘটনায় শোকপ্রকাশ বিরাটদের

মাস্টারমশাই যখন লিখতে শুরু করলেন এবং সেই দিনলিপি প্রকাশ করতে শুরু করলেন তখন বেশ কয়েকটি পত্রিকার ধারাবাহিকে একসঙ্গে প্রকাশিত হতে থাকে। প্রথমে ইংরেজিতে, পরে বাংলায়। বাংলায় প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কথামৃত বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করল। একই বিষয়, যদিও তারিখ ভিন্ন। ভিন্নদিনের বর্ণনা একসঙ্গে দুটি— কখনও তিনটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। মাস্টারমশাই যেমন শ্রীরামকৃষ্ণের অনুগত ছিলেন। ঠিক তেমনই শ্রীমা সারদা দেবীরও অনুগত ছিলেন। শ্রীরামকৃষ্ণ ইহলোক ত্যাগ করার পর শ্রীমা তীর্থে গেলেন। সঙ্গী হয়েছিলেন অনেকের সঙ্গে সস্ত্রীক মাস্টারমশাই। শ্রীমা বৃন্দাবনে গিয়ে শ্রীরামকৃষ্ণের নির্দেশে প্রথম দীক্ষা দিলেন। সেই দীক্ষা দিয়েছিলেন ঠাকুরের ছেলেধরা মাস্টার মহেন্দ্রনাথ গুপ্তকে। পুত্রশোকে কাতর স্ত্রী নিকুঞ্জদেবীকে শ্রীরামকৃষ্ণ দক্ষিণেশ্বরে আনিয়ে নহবতে শ্রীমায়ের সঙ্গে কিছুদিন রেখেছিলেন। যাতে প্রবল শোকের কিছু কমতি হয়। সেই দুর্বিষহ শোক থেকে উতরে গিয়েছিলেন নিকুঞ্জদেবী। যদিও চিরকাল একটু ছিটগ্রস্ত ছিলেন।

আরও পড়ুন-‘মর্মান্তিক! জীবনে এতবড় রেল দু.র্ঘটনা দেখিনি’

শ্রীমা এই অসহায় নারীর একান্ত আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছিলেন। মাস্টারমশাই এবং নিকুঞ্জদেবীর আন্তরিক ইচ্ছায় বেশ কয়েকমাস তাঁদের আতিথ্যগ্রহণ করেছিলেন শ্রীমা। মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত কথামৃত রচনা করে সেই দিনলিপি প্রথম নিয়ে গিয়েছিলেন শ্রীমায়ের কাছে। শ্রীমা সেই রচনায় প্রামাণ্যতার সিলমোহর বসিয়েছিলেন, তিনি বলেছিলেন, ‘আহা! যেন সামনেই সব কথা হচ্ছে। গায়ে যেন কাঁটা দিয়ে উঠছে।’ আবার কখনও বলছেন, ‘‘মাস্টারের বইও বেশ— যেন ঠাকুরের কথাগুলো বসিয়ে দিয়েছে। কী মিষ্টি কথা।” কথামৃত পাঠ করে যে চিঠিটি মা লিখেছিলেন তা কথামৃতের সূচনাতেই মুদ্রিত রয়েছে। স্বামী বিবেকানন্দ বেশ কয়েকটি চিঠিতে আনন্দিত হয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। বিশেষত, মাস্টার মশাইয়ের গ্রন্থের মধ্যে নিজেকে গুপ্ত রাখার প্রচেষ্টাকে তিনি উচ্চকণ্ঠে প্রশংসা করেছেন। স্বামীজি লিখছেন, ‘‘সক্রেটিসের কথোপকথনগুলিতে যেন প্লেটোর কথাই সর্বত্র চোখে পড়ে; আপনার এই পুস্তিকায় আপনি নিজেকে সম্পুর্ণ গুপ্ত রেখেছেন। নাটকীয় অংশগুলি সত্যিই অপূর্ব। এদেশে এবং পাশ্চাত্যে প্রত্যেকেই বইটি পছন্দ করেছে।”

আরও পড়ুন-Balasore: ‘বালেশ্বরের হাসপাতালে জায়গা না হলে, আহতদের কলকাতায় এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন’ বালেশ্বরে পৌঁছে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

মাস্টারমশাইয়ের সঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণের দেখা হওয়া ও তাঁদের দু’জনের কথোপকথন এক বিস্ময়কর দলিল। এক নবজাগ্রত বুদ্ধিজীবীকে শ্রীরামকৃষ্ণ শোনাচ্ছেন আশ্চর্য সমন্বয়ের কথা। যখন ঈশ্বর নিরাকার না সাকার— এই দ্বন্দ্বে সকলে মেতে উঠেছেন তখন শ্রীরামকৃষ্ণ প্রথম দিনই জানিয়েছেন, ‘ঈশ্বর সাকার আবার নিরাকার— দুই-ই। দেখ না, যেমন জল ভক্তিহীমে জমে বরফ হয়ে যায়।’ এখানেই শেষ নয়। তারপর আরও এগিয়ে গিয়ে বলছেন, যে কোনও একটাতে বিশ্বাস থাকলেই হল। তবে আমারটা ঠিক আর অন্যেরটা ভুল এ-ভাব যেন না থাকে। এ হল মতুয়ার বুদ্ধি। যা আমাদের অগ্রসর হতে দেয় না। দেয় না সত্যকে সঠিকমাত্রায় উপলব্ধি করতে। মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত ও শ্রীরামকৃষ্ণের প্রথম দিনের আলোচনা আজও সমভাবে প্রাসঙ্গিক। তাই আজ‌ও প্রয়োজন তাঁদের স্মৃতি রোমন্থনের। যার মধ্য দিয়ে আমার এক বিবাদহীন উদার পৃথিবীর খোঁজ পাব। দ্বন্দ্ব মিটে যাবে, আসবে সমন্বয়ের ভাবনা।

Latest article