নবনীতা মণ্ডল, নয়াদিল্লি : একই রাজ্য, কিন্তু দুরকম চিত্র। একদিকে যখন উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় ধুমধাম করে পালন করা হয় দশেরার রাবণ দহন উৎসব, তখন অন্যদিকে এই রাজ্যেরই আরেক জায়গায় উল্টো ছবি। উত্তরপ্রদেশের গ্রেটার নয়ডার বিশ্রাখ গ্রামে নবরাত্রির ন’দিন কোনও উৎসব নেই, কোনও জাঁকজমকের রীতি নেই, হয় না রাবণ দহন উৎসবও। এই ক’দিন পুরো গ্রাম গভীর শোকে ডুবে থাকে।
প্রতি বছরের মতো এবারও উত্তরপ্রদেশের এই গ্রামে নেমেছে শোকের ছায়া। এবারেও দশেরার দিন রাবণ জ্বালানোর উৎসব পালন করা হয়নি। কারণ রাবণ তাদের ঘরের ছেলে। সারা দেশ যখন মাতে অশুভ শক্তি বিনাশের বিজয় উল্লাসে, তখন উত্তরপ্রদেশের গ্রেটার নয়ডার বিশ্রাখ গ্রামে আলোই জ্বলে না। এমনকি অধিকাংশ বাড়িতে হয় অরন্ধন পালন। রাবণ বধের জন্য রামই বরং চক্ষুশূল গ্রামবাসীদের কাছে।
আরও পড়ুন-পুলিশের ব্যারিকেডে হাত-পা কাটা যুবকের দেহ, উত্তেজনা সিঙ্ঘু সীমান্তে
গৌতম বুদ্ধ নগরের এই গ্রামের বাসিন্দাদের বিশ্বাস,এখানেই ছেলেবেলা কাটিয়েছিলেন লঙ্কাপতি রাবণ। রাবণের পিতা ঋষি বিশ্বশ্রবার নাম থেকেই এলাকার নামকরণ হয়েছে বিশ্রাখ। গ্রেটার নয়ডার এই গ্রামে আছে বহু প্রাচীন এক মন্দির। এরই মধ্যে একটি রাবণের মন্দির নামে বিখ্যাত। ভিতরে আছে শতাব্দীপ্রাচীন শিবলিঙ্গ। স্থানীয়দের বিশ্বাস, বিশ্বশ্রবা মুনির হাতেই স্থাপিত হয়েছিল এই মন্দির। শুধু যে নবরাত্রির ন’দিন ধরে এখানে শোক পালন করা হয় তাই নয়, দীপাবলির সময়েও এখানে থাকে না সে রকম জাঁকজমক। স্থানীয়দের এই বিশ্বাস আরও মজবুত হয় যখন ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের দ্বারা খনন কার্যের ফলে বেশ কিছু পুরনো মুদ্রার সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। অবশ্য রাবণের জন্মস্থান হিসেবে গ্রামবাসীদের দাবিকে বিতর্কিত বলেন অনেকেই। প্রমাণের চেয়ে বিশ্বাসের মাহাত্ম্যই বেশি এখানে।
গ্রামে রাবণ মন্দির নামে খ্যাত এক মন্দিরের পুরোহিত রামদাস জানালেন, প্রায় ৪০ বছর ধরে আমি এই গ্রামে আছি। কোনওদিন এখানে নবরাত্রির উৎসব বা দীপাবলির কোনও উৎসব হতে দেখিনি। রাবণই এখানকার ভগবান। রাবণই গ্রামবাসীদের ঘরের ছেলে। পুরো দেশ যেখানে রামনামে ব্যস্ত, সেখানে উত্তরপ্রদেশের এই ছোট্ট গ্রামটিতে আজও ব্রাত্য রাম।