রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এসেছে স্বাধীনতা। আন্দোলনের সময় রচিত হয়েছে অসংখ্য কবিতা, গান। উদ্বুদ্ধ করেছে স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং জনসাধারণকে। সেই দেশাত্মবোধক কবিতা, গানগুলো আজও পরম শ্রদ্ধায় উচ্চারিত হয়। স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং বীর বিপ্লবীদের স্মরণে এই সময়েও লেখা হচ্ছে বহু কবিতা, গান। পাশাপাশি লেখা হচ্ছে নাটক, শ্রুতি নাটক, গীতি-আলেখ্য, স্মৃতিকথা। সেই সব লেখা সংকলিতও হচ্ছে। তেমনই একটি সংকলন ‘স্বাধীনতা আন্দোলনে ভারত’। দুটি খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। কাব্যপথিক থেকে। প্রীতিশেখরের সম্পাদনায়। হাতে এসেছে দ্বিতীয় খণ্ডটি। আছে ৫৪টি কবিতা। ‘আমাদের স্বাধীনতা’ কবিতায় শ্যামলকান্তি দাশ লিখেছেন, ‘‘হিংসা বিভেদ অসাম্য দূর হোক,/ চাইছি একটা ভালোবাসাভরা দেশ,/ সেখানে বহিঃশত্রু পাবে না পার—/ থাকবে না কোনো বিরোধ ও বিদ্বেষ।’’ এই প্রার্থনা আমাদের প্রত্যেকের। অভীক বসু, আরণ্যক বসু, প্রদীপরঞ্জন দাস, মৃত্যুঞ্জয় দেবনাথ, জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়, স্বপনকুমার রায়, মোনালিসা পাহাড়ি, সুজান মিঠি প্রমুখের কবিতা মনে রাখার মতো। ১০টি নাটকের মধ্যে হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের ‘স্বাধীনতার স্বাদ’, বাঁশরী মুখোপাধ্যায়ের ‘সবারে আমি নমি’ রেখাপাত করে। মাতঙ্গিনী হাজরাকে নিয়ে নাটক ‘আগুন-মা’ লিখেছেন সৌম্যেন্দু সামন্ত। মৌসুমী চন্দ্রর ‘সাঁওতাল বিদ্রোহ’, তনুশ্রী মুখার্জীর ‘রাখিবন্ধন’ নাটক দুটিও উল্লেখ করার মতো। মন্মথনাথ দাস, নীহাররঞ্জন সেনগুপ্ত, পার্থপ্রতিম পাঁজা, শুভ্রা গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখের গীতি-আলেখ্য এবং রুবি সিনহা, প্রদীপ রায়, শর্মিলা সেন প্রমুখের আবৃত্তি-আলেখ্য মঞ্চ সফল হতে পারে। অসিতাভ দাশ সংকলিত করেছেন স্বাধীনতা আন্দোলনে ভারতবর্ষের ঘটনাপঞ্জির শেষ পর্ব। সবমিলিয়ে ২৫৬ পৃষ্ঠার এক অনবদ্য সংকলন। বাচিক শিল্পীদের তো কাজে লাগবেই। সংগ্রহে রাখতে পারেন সাধারণ পাঠকও। দাম ৩৭৫ টাকা।
আরও পড়ুন-ঝাড়খণ্ডের চাইবাসায় আইইডি বিস্ফোরণে আহত সিআরপিএফ সাব-ইন্সপেক্টর প্রয়াত
রোহিণী নন্দন থেকে প্রকাশিত হয়েছে ১৩৬ পৃষ্ঠার একটি অনবদ্য সংকলন ‘কবিতায় সুন্দরবন’। অমল নায়েকের সম্পাদনায়। ১১২ জন কবির ছড়া ও কবিতায় ধরা পড়েছে সুন্দরবনের প্রকৃতি, বাদাবন, নদী, খাঁড়ি, জোয়ার, ভাটা, জীববৈচিত্র, বাঘ-মানুষের লড়াই, বাঘ-বিধবা, মৎস্যজীবী-মৌলেদের জীবন, বনবিবি, দক্ষিণরায়, নদীর মাছ, বনের মধু, পাখি, নদী চর, নদী ভাঙন, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, দ্বীপবাসীর জীবন, আন্দোলন, পর্যটন প্রভৃতি। ভূমিকা লিখেছেন বিশ্বজিৎ মিত্র। সংকলনটি ভাগ করা হয়েছে দুটি পর্বে। ছড়া এবং কবিতা। ‘বন্দনা’ ছড়ায় শেখ মোবারক আলি লিখেছেন, ‘‘ছন্দে জাগে বনবনানী,/ ছন্দে জাগে নদী/ ছন্দে জাগে জোয়ার ভাটা,/ ছন্দ নিরবধি।’’ সুন্দরবনের চমৎকার ছবি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ‘সোঁদরবনে’ ছড়ায় হাননান আহসান লিখেছেন, ‘‘ঘুরতে যাবো সজনেখালি/ ব্যাগ-বিছানা গুছিয়ে কালই/ সুন্দরী ঢেউ নদীর পাড়ে/ ঝিলিকমিলিক শরীর নাড়ে।’’ সববয়সি পাঠকের মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো। এছাড়াও ছন্দ-ছড়ার ঢেউ তুলেছেন রবীন ভট্টাচার্য, নির্মল করণ, স্বপনকুমার বিজলী, বরুণ চক্রবর্তী, নিতাই মৃধা প্রমুখ। কবিতার শুরুতেই আছে বিনোদ বেরা-র ‘সুন্দরবন আবাদের কথা’। পঙ্ক্তির পর পঙ্ক্তি সাজিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বসতি স্থাপনের ইতিহাস—‘‘একদা কয়েক জেলার নিরাশ্রয়/ সমুদ্র উপকূলে সুন্দরবনে/ এসে— নোনা জল বাঁধ দিয়ে আটকিয়ে/ বাঁচবার জেদে ঝোপঝাড় সাফ করে/ শস্য প্রয়াস আরম্ভ করেছিল।’’ অরুণকুমার চক্রবর্তীর ‘সুন্দরবনের কবিতা’, সোমনাথ মিত্রের ‘সুন্দরবনের রোজনামচা’, হিমাংশু মিস্ত্রির ‘ভাটি দেশ’ কবিতার মধ্যে ধরা পড়েছে সুন্দরবনের মানুষের জীবন যন্ত্রণা, লড়াই করে বাঁচার ছবি। তপন বন্দ্যোপাধ্যায়, সত্যপ্রিয় মুখোপাধ্যায়, সৈয়দ হাসমত জালাল, তাজিমুর রহমান, যতীন্দ্রনাথ সরকার, কল্যাণ গঙ্গোপাধ্যায়, সৌমিত বসু, ব্রজেন্দ্রনাথ ধর, ইউসুফ মোল্লা প্রমুখের কবিতাগুলো মর্মস্পর্শী। আশা করা যায়, সংকলনটি সমাদৃত হবে। দাম ২০০ টাকা।