তুহিনশুভ্র আগুয়ান, তমলুক: দেশজুড়ে তখন ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলন চরম পর্যায়ে। সেই আন্দোলনে প্রথম সারি থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিল মেদিনীপুর। মেদিনীপুরের তৎকালীন স্বদেশি নেতা ও কর্মীদের আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করে দিতে তমলুকে এসেছিলেন স্বয়ং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। রাজবাড়ির মাঠে স্থানীয় নেতাদের নিয়ে সভাও করেন তিনি। পরে তমলুক পুরসভা, বর্গভীমা মন্দির-সহ একাধিক জায়গায় গিয়েছিলেন নেতাজি। সেই স্মৃতি আজও মনে ধরে রেখেছেন তমলুকের মানুষ। নেতাজির জন্মদিনে তাঁর স্মৃতিবিজড়িত চেয়ারটি আজও দেখতে ভিড় জমান নবীন থেকে প্রবীণেরা।
আরও পড়ুন-জমে থাকা মামলার নিস্পত্তির জন্য হাইকোর্টে এবার অস্থায়ী বিচারপতি
ইতিহাসের পাতা উল্টে জানা যায়, ১৯৩৮ সালের ১১ এপ্রিল তমলুকে আসেন নেতাজি। এখানকার পুরুষ থেকে মহিলারা বিভিন্ন আন্দোলনে বরাবর নিজেদের নিয়োজিত করেছিলেন। তাই তাঁদের পরবর্তী আন্দোলনের বিষয়ে সজাগ করতে তমলুকে আগমন হয় নেতাজির। কলকাতা থেকে ট্রেনে পাঁশকুড়া হয়ে পরে গাড়িতে তমলুকে পৌঁছান নেতাজি। প্রথমে ঠিক হয়, রাখাল মেমোরিয়াল মাঠে সভা করবেন তিনি। সেইমতো জমির মালিকের কাছ থেকে অনুমতিও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে ব্রিটিশ পুলিশ মালিককে ভয় দেখানোয় অনুমতি প্রত্যাহার করেন মাঠের মালিক। এই পরিস্থিতিতে তমলুকের তৎকালীন রাজা সুরেন্দ্রনারায়ণ রায়ের শরণাপন্ন হন নেতারা। তিনি রাজবাড়ির খোসরঙ মাঠে আমগাছ কেটে সভা করার কথা বলেন। সেখানেই শেষমেশ সভা করেন নেতাজি। সভায় উপস্থিত ছিলেন সতীশচন্দ্র সামন্ত, অজয় মুখোপাধ্যায়, সুশীল ধাড়া, মহেন্দ্রনাথ মাইতির মতো তৎকালীন প্রথম সারির নেতারা। এরপর তিনি গিয়েছিলেন তমলুক পুরসভায়। সেখানে একটি কাঠের চেয়ারে বসেছিলেন নেতাজি। সেই চেয়ারটি সংরক্ষিত করে রেখেছে পুরসভা। নেতাজির জন্মদিনে তাঁর ছবি বসিয়ে মালা দেন তমলুকবাসী। তাম্রলিপ্ত রাজ পরিবারের বর্তমান সদস্য তথা পুরপ্রধান ডঃ দীপেন্দ্রনারায়ণ রায় জানান, ‘এখনও বহু পর্যটক আসেন ওই চেয়ার দেখতে। রাজবাড়িতে নেতাজির আগমন উপলক্ষে আমরা সেখানে তাঁর মূর্তি বসিয়েছি। নেতাজি আমাদের তমলুক শহরে পা রেখেছিলেন বলে আমরা ভাগ্যবান। তাঁর জন্মদিন ধুমধাম করে গোটা তমলুকে পালন করা হয়।’