প্রতিবেদন : মুম্বইয়ে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করতে যাওয়াই যেন কাল হয়েছিল মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা মেহবুব শেখের। স্রেফ ধর্মের অজুহাতে আইনের তোয়াক্কা না করেই বিএসএফের মাধ্যমে মেহবুবকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছিল অমানবিক ডবল ইঞ্জিন রাজ্য মহারাষ্ট্রের পুলিশ। বাংলায় কথা বলায় সহজেই বাংলাদেশি তকমা দিয়ে ৩৭ বছরের মেহবুবকে বেধড়ক মারধরের পর বিএসএফের হাতে তুলে দেয় মুম্বই পুলিশ। আর বিএসএফও কোনও কিছু খতিয়ে না দেখেই বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয় মুর্শিদাবাদের ওই বাসিন্দাকে। তবে শেষ পর্যন্ত চারদিক থেকে প্রবল চাপে পড়ে সেই বিএসএফই মেহবুবকে ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হচ্ছে। রবিবারের মধ্যেই তাঁকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। মেহবুবের সঙ্গে মুর্শিদাবাদের আরও দুই পরিযায়ী শ্রমিক নাজিমুদ্দিন মণ্ডল ও মিনারুল শেখকেও মুম্বই পুলিশ বাংলাদেশি তকমা দিয়ে গ্রেফতার করে। কোচবিহারের মেখলিগঞ্জ ব্লকের রতনপুর চেকপোস্ট দিয়ে ওই দুই শ্রমিককেও বাংলাদেশে পাঠিয়েছে বিএসএফ!
আরও পড়ুন-কালীগঞ্জে রবিবাসরীয় প্রচারে আলিফার সঙ্গে দিদি নং ওয়ান
মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলা থানার মহিশাসথালি পঞ্চায়েতের বাসিন্দা মেহবুব শেখ। মুম্বইয়ে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি মুম্বই পুলিশ ধর্মের ভিত্তিতে মেহবুবকে বাংলাদেশি বলে গ্রেফতার করে। ১০ জুন গ্রেফতারির পর তাঁর বাড়ি থেকে মুম্বই পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে মেহবুবের আধার কার্ড, ভোটার আইডি, রেশন কার্ড-সহ সব ধরনের বৈধ পরিচয়পত্র পাঠানো হয়। কিন্তু সেসব না দেখেই শুক্রবার রাতারাতি মুম্বই পুলিশ মেহবুবকে শিলিগুড়ি বিএসএফ-এর হাতে তুলে দেয়। এবং নিয়মবিরুদ্ধভাবে তারপর মুম্বই পুলিশের তরফে খবর দেওয়া হয় ভগবানগোলা থানাকে। এখানেই দিশাহারা মেহবুবের পরিবারের প্রশ্ন, কোনও অপরাধ করলে মুম্বই পুলিশের তরফে আগে ভগবানগোলা থানার সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত ছিল। তাহলে কেন বিএসএফ-এর হাতে তুলে দেওয়ার পর স্থানীয় পুলিশকে জানানো হল? আর বৈধ পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও মুর্শিদাবাদের বাসিন্দাকে কেন বিএসএফ-এর হাতে তুলে দেওয়া হবে? কেন তাঁকে বিনা তদন্তে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে? শুধুই ধর্মের কারণে?
রবিবার কাকভোরে কাউকে কিছু না জানিয়েই মেহবুবকে মারধর করে সীমান্তের ওপারে পাঠিয়ে দেয় বিএসএফ। শনিবার স্থানীয় তৃণমূলের কাছে এই অভিযোগ পৌঁছয়। তৃণমূলের তরফে দ্রুত যোগাযোগ করা হয় মুম্বই পুলিশ ও বিএসএফের সঙ্গে। মুম্বই পুলিশের সঙ্গে কথা হয় রাজ্য পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকদেরও। সর্বস্তরের তরফেই এখন মেহবুবকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। কিন্তু বাকি দুই শ্রমিক নাজিমুদ্দিন ও মিনারুলকেও ফেরানো হবে কি? তবে এই গোটা ঘটনায় প্রমাণিত, বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলি থেকে যেভাবে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশিদের যে দেশের ফেরত পাঠানোর কাজ চলছে, তা আসলে আইওয়াশ! আদতে ধর্মের ভিত্তিতে নির্বিচারে পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর অকথ্য অত্যাচার চালানো হয়!