সমালোচনাকারীদের মুখে চুনকালি। বাংলার প্রাণের উৎসবের বিশ্বজনীন স্বীকৃতি। সারা দুনিয়া আজ আনন্দময়ীর আনন্দময় বন্দনায় মুগ্ধ। ইউনেস্কোর হেরিটেজ স্বীকৃতিতে তারই সুস্পষ্ট ইঙ্গিত। লিখছেন চিত্র সাংবাদিক অশোক মজুমদার
‘‘আমি যখন বলছি আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছে!! নিশ্চয় আপনাদের গায়েও দিচ্ছে।” মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্গাপুজো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হওয়ার কথাগুলি আজ কর্পোরেশন ইলেকশনের ক্যাম্পেনে গিয়ে যখন বলছিলেন, দর্শকরা কয়েক সেকেন্ড স্তম্ভিত হয়ে গেছিলেন। আমি সাংবাদিক হিসেবে বলতে পারি তাঁরা থম হয়ে ভাবছিলেন, একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বর কতটা আবেগ থাকলে এভাবে বলতে পারেন।
‘‘বাংলা একদিন বিশ্ববাংলা হবে। বিশ্বের দরবারে সমাদৃত হবে বাংলার কৃষ্টি সংস্কৃতি”…বারবার বলতেন। আজ ইউনেস্কোর ঐতিহ্যবাহী উৎসবের তালিকায় কলকাতার দুর্গাপুজো। বাঙালি হিসেবে বড় আনন্দের বিষয়। বড় গর্বের। দিদি আজ আরও একবার বাংলার সাফল্যের মুকুটে যুক্ত করে দিলেন আরও একটি পালক। আজ যে যাই বলুক, এটা একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য সম্ভব হয়েছে। বাংলার ইতিহাসে উনিই এই দিনটি দেখানোর কান্ডারি।
আরও পড়ুন-ছায়াছবির ছায়া
চারদিনের দুর্গাপুজো হলেও দূর গ্রাম-গঞ্জের সাধারণ গরিব মানুষের পক্ষে কলকাতার ভাল ভাল পুজোগুলি একদিনে দেখা সম্ভব নয়। এই ভাবনাকে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে উনি কলকাতার বিখ্যাত কয়েকটি পুজোকে নিয়ে ২০১৬ সালে রেড রোডে শুরু করলেন কার্নিভাল। স্বাভাবিকভাবেই উনি যে কোনও কিছু করলে যা হয়, সমালোচক ও বিরোধীরা শুরু করে দিল… এই কীসব কার্নিভাল! কোনও মানে হয়। সরকারি পয়সায় মোচ্ছব। নানা উক্তি-কটূক্তির চাপানউতোর। কিন্তু আজ সেই কার্নিভালই এনে দিল ইউনেস্কোর সম্মান। এই কার্নিভাল দেখেই ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক টিম দুর্গাপুজো কভার করেছিল। এই কার্নিভাল দেখেই ইউনেস্কো টিম এসেছিল। পরপর চারবছর রেড রোডে আয়োজন করা হয়েছিল দুর্গাপুজো কার্নিভাল। অবশেষে এল সেই স্বীকৃতি। এটা একবাক্যে স্বীকার করতে হবে এই কৃতিত্ব শুধুমাত্র মুখ্যমন্ত্রীর। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টাতেই বাঙালির এই চিরন্তনী প্রাণের উৎসব আজ আন্তর্জাতিক।
আরও পড়ুন-অবিচলিত
দিদি সকল জাতি, সকল ধর্মের ঊর্ধ্বে উঠে উৎসবকে সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার উদযাপন করেন সর্বদা। বিরোধীদের হাজার কটূক্তিও তাই দিনের শেষে ফিকে হয়ে আসে। শূন্য হাতে তাঁরা আঙুর ফল টকের গল্পের ডালি খোলেন। আর দিদি ‘ওরা কাজ করে’র মতো চুপচাপ বাংলাকে বুকে নিয়ে উৎকর্ষের সিঁড়ি ভাঙতে থাকেন।
আজ মনে পড়ছে, এই পুজো নিয়েই তো মাত্র কয়েকমাস আগে বিধানসভা নির্বাচনে… ‘‘বঙ্গাল মে দুর্গাপূজা নেহি করনে দেতে হ্যায় দিদি, হাম আয়েঙ্গে তো দুর্গাপূজা বহুত ধুমধামসে করেঙ্গে।”… জনৈক বক্তা সহ তাঁর পারিষদবর্গ বাংলা দখলের চেষ্টায় এই কথাগুলি রোজ মুখস্থের মতো বলে যেতেন। জাতীয় মিডিয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কী কী অভূষণে ভূষিত করেছিল তা সবার অবগত। আজ তারাই ফেসবুক ট্যুইটারে শুভেচ্ছার বন্যা বইয়ে দিচ্ছে। কিন্তু যাই করুন বাংলার মানুষ বুঝে গেছে বাংলার শিক্ষা, সংস্কৃতি কার হাতে সুরক্ষিত।
আরও পড়ুন-কলকাতায় ১৩৫টার বেশি আসন পেয়ে জয়ী হবে তৃণমূল কংগ্রেস, আত্মবিশ্বাসী অভিষেক
আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই নিজেকে একটি ব্র্যান্ড নেমে পরিণত করেছেন। আর এই সাফল্য সম্পূর্ণ ওঁর ভাবনা ও পরিশ্রমের ফল। মানুষের প্রতি সম্পূর্ণ নিবেদিত দিদির রাজনীতি। সবাইকে নিয়ে মিলেমিশে চলার সাংস্কৃতিক পথই ওঁর পথ। তাই উনিই একমাত্র বলতে পারেন, ‘‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।”
পরিবর্তনের বাংলা গড়ার স্বপ্ন নিয়ে যে পথচলা উনি শুরু করেছিলেন দশ বছর আগে মুখ্যমন্ত্রী হয়ে…আজ একটু একটু করে সেই স্বপ্ন সফল হতে শুরু করেছে। দুর্গাপুজো প্রতি বাঙালির কাছে শুধু একটি পুজো নয়…কবির কথায় অনেকটাই প্রাণের আরাম, মনের আনন্দ, আত্মার শান্তি। সেই পুজোকেই তিনি বিশ্বজনীন রূপ দিয়েছেন।
আরও পড়ুন-সব নদী মহাসমুদ্রে প্রচারে ঝড় তুললেন অভিষেক
সাংবাদিক হিসেবে আশির দশক থেকে আমি দিদিকে দেখে আসছি। উনি যখনই নিজের মস্তিষ্কপ্রসূত কোনওকিছু করার কথা বলেন, তখন চারিদিকে বিরোধীদের রে রে পড়ে যায়। কেউ একবারও ভেবেও দেখেন না এর পিছনে যুক্তিটা কী? কিন্তু আজ উনি তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী। দেশের অন্যতম শক্তিশালী বিরোধী মুখ। ওঁর কাজ, ভাবনা, যেকোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া সবই যে সুদূরপ্রসারী ফলাফল বুঝেই তা সাংবাদিক হিসেবে প্রথম থেকে দেখেছি আমি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একদিন আকাশ ছোঁবেন তা বুঝতে পারতাম বলে গর্বিত আমি। সে আপনারা আমাকে চটিচাটা, দালাল বললেও সত্য বদলাবে না।
আরও পড়ুন-KMC Elections : বুড়িমার যোগ্য উত্তরসূরি সাংবাদিকতার ছাত্রী মোনালিসা-ই প্রার্থী তৃণমূল কংগ্রেসের
আজ আমার সবথেকে ভাল লাগছে এই ভেবে যে, এক বাঙালি কন্যার ভাবনা ছড়িয়ে পড়ছে দেশের সীমানা ডিঙিয়ে দূরদেশে। আমার সোনার বাংলা তার মেঠো শিক্ষা সংস্কৃতির আভিজাত্য চেনাচ্ছে পৃথিবীতে। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী তথা সকলের প্রিয় দিদিকে ধন্যবাদ জানাই বাঙালি হিসেবে আমাদের এমন একটি উপহার দেওয়ার জন্য যা বাংলাকে আন্তর্জাতিক করে তোলার লক্ষ্যে আরও এক পা এগিয়ে দিল।