প্রতিবেদন: আন্দোলনকারীদের জন্য আলোচনার দরজা আরও প্রশস্ত করলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে হিংসাত্মক ঘটনা বন্ধ করতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে তাঁর সঙ্গে বসার আহ্বান জানিয়েছেন। শনিবার সকালে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকে স্পষ্ট ভাষাতেই তিনি জানিয়ে দেন, শান্তির স্বার্থে আলোচনার দরজা খোলা। তাঁর কথায়, গণভবনের দরজা খোলা। কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আমি বসতে চাই,তাদের কথা শুনতে চাই। আমি সংঘাত চাই না। প্রধানমন্ত্রী আটক সাধারণ শিক্ষার্থীদের মুক্তি দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় প্রতিটি হত্যাকান্ডের সুবিচারের আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী। জানিয়ে দেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট বক্তব্য, আমি আবারও বলছি, আন্দোলনকারীরা চাইলে আমি এখনও আলোচনায় রাজি। তারা যে কোনও সময় গণভবনে আসতে পারে। দরকার হলে তারা তাদের অভিভাবকদের নিয়েও আসতে পারে। লক্ষণীয়, বিশ্ববিদ্যালয়, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রস্তাবিত সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’ বাতিল করার কথা ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতাদের তা জানিয়েও দিয়েছেন।
আরও পড়ুন-যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে সাধুবাদ ব্রাত্যর, এবার অধ্যাপকরাই হবেন ওয়ার্ডেন
প্রধানমন্ত্রীর আলোচনার আহ্বান সত্ত্বেও কিন্তু থামছে না আন্দোলন। থেমে যায়নি হিংসাও। শনিবার কুমিল্লার চান্দ্রিনায়ে পড়ুয়াদের মিছিলে গুলি চালায় একদল সশস্ত্র দুষ্কৃতী। জখম হন ৫ জন। এদিকে ক্ষমতা হস্তান্তরেরও একটা প্রয়াস শুরু হয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
শুক্রবারই খুলনা এবং হবিগঞ্জে সঙ্ঘর্ষে নিহত হন ২ জন। সঙ্ঘর্ষ হয় সিলেট এবং লক্ষ্মীপুরেও। গুলিও চলে। শনিবার আন্দোলনের ধারা অব্যাহত রাজধানী ঢাকা, কোম্পানিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবেড়িয়া-সহ বিভিন্ন জায়গায়। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের সেলও ফাটিয়েছে পুলিশ। আবার গান্ধীগিরির অনুকরণে পুলিশের হাতে বিস্কুট এবং জলও তুলে দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। শনিবার সিলেটের কোম্পানিগঞ্জে আন্দোলনকারীরা রাস্তায় নামলে তাঁদের তাড়া করেন আওয়ামি লিগের ছাত্রলিগ এবং যুবলীগের সমর্থকরা। আন্দোলনকারীরা প্রতিরোধের চেষ্টা করলে লিগ-সমর্থক ছাত্রযুবরা ইটপাটকেল ছোড়েন বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন-ড্র করেও শীর্ষে ডায়মন্ড হারবার, শেষ মুহূর্তের পেনাল্টিতে হাতছাড়া জয়
গণ্ডগোলের মধ্যে পড়ে গিয়ে জখম হন এক সাংবাদিক। এর প্রতিবাদে আন্দোলনকারীরা সিলেট-কোম্পানিগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ হাইওয়ে অবরোধ করে দুপুরে। ঘন্টা দেড়েক পরে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। বিক্ষোভকারীরা এদিন মাথায় লাল কাপড় বেঁধে টুকের বাজার থেকে থানার বাজারের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় আওয়ামি লিগ সমর্থকদের প্রতিরোধের মুখে পড়েন। এদিন বেলা ১১টা নাগাদ ময়মনসিংহতেও বিক্ষোভ হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অংশ হিসাবে। টাউন হল মোড়ে বিক্ষোভ-সমাবেশে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেন সাধারণ মানুষও। ঢাকা থেকেও আসেন পড়ুয়া, অভিভাবক, শিক্ষক, কবি, সংস্কৃতিকর্মী এবং শিল্পীরা। শনিবার ঢাকার সায়েন্স ল্যাব মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয় দুপুর ১২টা নাগাদ। নীলখেত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা হয়ে মিছিল যায় শহিদ মিনারে। তবে বাধা দেয়নি পুলিশ। সরে দাঁড়ায় রাস্তার পাশে। ‘ভুয়া’ ‘ভুয়া’ স্লোগান ওঠে মিছিল থেকে। তবে আন্দোলনকারীদের একটা অংশই জল ও বিস্কুট তুলে দেন পুলিশকর্মীদের হাতে।