খুন-ধর্ষণ-মুক্ত সমাজ গড়ে উঠুক সেটা সবাই চায়। আদি অনন্ত কাল থেকে আজ অবধি। ব্যাধি আকারে সমাজের মধ্যে এগুলি যে অবস্থান করছে, সে-বিষয়ে সন্দেহ নেই। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি ১৫ মিনিটে একজন নারী ধর্ষিতা হন এই দেশে। দিন- প্রতি ৯০ জন। দেশে এগুলি প্রতিরোধ করার আইনকানুন আছে, বিচারব্যবস্থা আছে, তবুও এগুলো সম্পূর্ণ নির্মূল করা যাচ্ছে না। কারণ অপরাধপ্রবণতা আর্থিক, সামাজিক অবস্থানের ওপর সম্পূর্ণটা নির্ভর করে না। মানুষের শিক্ষা-সাংস্কৃতির মান বৃদ্ধি, সমাজ জীবন থেকে এগুলি কমাতে পারে কিন্তু সম্পূর্ণ নির্মূল করতে পারে না। তাই এগুলি প্রতিহত করার সরকারি ব্যবস্থাপনা থাকলেও এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীর দেশে প্রতিদিন কোথাও না কোথাও, কোনও না কোনও মানুষ অপরাধ সংঘটিত করে চলেছে। খুন, ধর্ষণ, ধর্ষণ করে খুন-এর মতো নারকীয় অপরাধ প্রতিদিন আজও বর্তমান।
আরও পড়ুন-জীবনবিমা-স্বাস্থ্যবিমায় জিএসটি প্রত্যাহারের সুপারিশ মন্ত্রিগোষ্ঠীর
এমপাওয়ারমেন্ট টু উইমেন, নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে দেশ জুড়ে অনেক আলোচনা হয়েছে অতীত থেকে, কিন্তু কোনও সরকারই প্রকৃত পক্ষে নারীর ক্ষমতা বৃদ্ধির কোনও উদ্যোগ সেই অর্থে গ্রহণ করেনি। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হয়েই নারীকল্যাণ ও মেয়েদের শিক্ষাদীক্ষায় বড় করে তোলার সরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তাই শিক্ষাশ্রী, কন্যাশ্রী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প আজ সমাদৃত।
দেশের বড় বড় কিছু রাজ্যের তুলনায় এই বাংলার নারীরা আজ সুরক্ষিত। কলকাতা মহানগর মহিলাদের নিরাপদ শহর হিসেবে দেশের মধ্যে এক নম্বরে। তবুও তার মধ্যে আরজি করের ঘটনা বাংলার মানুষের সাথে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও ব্যথিত করেছে। তাই আরজি করের ঘটনা ঘটার পরই তিনি ছুটে গেছেন মৃতার পরিবারের কাছে। পুলিশি পদক্ষেপ নিয়ে ১২ ঘণ্টার মধ্যে মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছেন। হাসপাতালে ডাক্তারদের নিরাপত্তার জন্য একাধিক ব্যবস্থা-সহ পরিকাঠামোর সংস্কারের জন্য ১০০ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ করে দ্রুত কাজ শুরু করিয়েছেন। আন্দোলন রত ধরনামঞ্চে ছুটে গেছেন। বারবার আলোচনার করেছেন। এই ধরনের অপরাধীদের কঠোর শাস্তির জন্য বিধানসভায় বিল এনেছেন। প্রতিবাদীর প্রতি সহনশীলতার ক্ষেত্রে নজির স্থাপন করেছেন তিনি। দশটি দাবির মধ্যে সাতটি দাবি ইতিমধ্যেই পূরণ করা হয়েছে। আন্দোলন তুলে নিয়ে চিকিৎসায় ফেরার জন্য জুনিয়র ডাক্তারদের অনুরোধের ভূমিকায় থেকেছেন তিনি। যা আর কোনও সরকারকে এ-ধরনের পদক্ষেপ নিতে দেখেনি রাজ্যবাসী অতীতে। এই মুহূর্তে একটা সরকার এর বেশি আর কী করতে পারে! তবুও অনশন চলছে।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জুনিয়র ডাক্তারদের দাবিগুলির মধ্যে অধিকাংশই ইতিমধ্যে পূরণ করেছেন এবং বাকিগুলি কিছু সময়সাপেক্ষে পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন। একজন প্রকৃত অভিভাবকের মতো জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন করেই তিনি বারবার অনশন প্রত্যাহার করার অনুরোধ রেখে চলেছেন। মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিবকে ধরনামঞ্চে পাঠিয়ে আবারও তিনি ফোনের মাধ্যমে আন্দোলনরত ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করেছেন। প্রতিবাদীর প্রতি শাসকের এই সহনশীলতা, সহমর্মিতার উদাহরণ আমাদের দেশে খুব একটা নেই।
আরও পড়ুন-কটকের হাসপাতালে মৃতের অঙ্গপাচার!
আসলে বিরোধী রাজনৈতিক দল বিশেষ করে সিপিএম, কিছু জুনিয়র ডাক্তারকে সামনে রেখে রাজ্যে অরাজকতা তৈরি করতে চায়। এই মুহূর্তে রাজ্যের সব স্তরের হাসপাতালগুলিতে ৯০ হাজারের বেশি ডাক্তারবাবু চিকিৎসা করে চলেছেন নিষ্ঠার সঙ্গে। বাংলার স্বাস্থ্যব্যবস্থার গুণগত মান উন্নয়নে, একদিকে যেমন গত তেরো বছরে গড়ে ওঠা পরিকাঠামোগত উন্নয়ন তেমনি আর-এক দিকে আছে আমাদের রাজ্যের দক্ষ ডাক্তারদের (জুনিয়র ও সিনিয়র) নিষ্ঠার সাথে রোগী পরিষেবা প্রদান। শুধু বামমনস্ক কিছু জুনিয়র ডাক্তার ও সিপিএম- ঘনিষ্ঠ কিছু সিনিয়র এই অনশন আন্দোলন চালিয়ে এর মাধ্যমে নৈরাজ্য তৈরির প্রেক্ষাপট তৈরি করতে চায়। যখন কেন্দ্রীয় সূচকে বাংলার স্বাস্থ্যব্যবস্থার গুণগত মান দেশের মধ্যে এক নম্বরে তখন পরিকল্পিত নৈরাজ্য তৈরি করা ছাড়া বিরোধীদের আর কোনও উপায় থাকে না। ২০০১ সালে এই আরজি করে ডাক্তার সৌমিত্র বিশ্বাস খুনে যারা অভিযুক্ত ছিল কিন্তু বাম সরকারের বদান্যতায় পার পেয়ে গিয়েছিল, আজ সেই সিপিএম অনুগামী ব্যক্তিরাই জুনিয়র ডাক্তারদের মূল পরামর্শ দাতা। এরা নৈরাজ্য তৈরি করে রাজ্যে ক্ষমতায় আসতে চায়।
আরও পড়ুন-২০২৬-এ ২৫০ আসন নিয়ে ক্ষমতায় ফের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার
আমাদের মতো দেশে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণ দ্বারা নির্বাচিত সরকার, আর্থিক সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি সমাজের মধ্যে নিহিত এই ব্যাধিগুলি দূর করার ক্ষেত্রেও ভূমিকা গ্রহণ করে। সাধারণ মানুষও লক্ষ্য রাখে এগুলি দূরীকরণের ক্ষেত্রে তার সরকারের ভূমিকা কী। ২০১১ সাল থেকে বাংলার মানুষের আশীর্বাদ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। ৩৪ বছরের বাম শাসনের অনুন্নয়ন ও একটি ভঙ্গুর অর্থনীতির সরকার হাতে নিয়ে তিনি যাত্রা শুরু করেছিলেন। মাত্র তেরো বছরের মধ্যে এই বাংলার সর্বত্র উন্নয়ন তৃণমূলস্তর পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। একদিকে পরিকাঠামো গড়ে তোলা, অপর দিকে ব্যক্তি-মানুষের পুষ্টি, শিক্ষা, চিকিৎসার মতো প্রাথমিক প্রয়োজনীয়তাগুলি বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে পূরণের ব্যবস্থা করেছেন তিনি। একদিকে বিভিন্ন ধর্মসম্প্রদায়ের মানুষকে এককরে রাখা, অপর দিকে বিভিন্ন জাতি-উপজাতি জনগোষ্ঠীর মানুষের নিজস্ব কৃষ্টি-সংস্কৃতি, ঐতিহ্যকে তুলে ধরার ব্যবস্থা আমাদের সরকার করেছে। আবার একদিকে রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখা, বাম আমলে জায়গায় জায়গায় ত্রাস সৃষ্টিকারী হাতকাটা দিলীপ, শ্মশানস্বপন, হুব্বাদের মতো সমাজবিরোধীদের টাইট করে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেওয়া অপর দিকে মহিলাদের নিরাপত্তা ও ক্ষমতায়নের কাজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে করেছেন। তাই এই সরকারের অনেক প্রকল্প জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে প্রশংসিত হয়েছে শুধু তাই নয়, বেশ কিছু প্রকল্প অন্যান্য রাজ্যগুলি অনুসরণও করার চেষ্টা করছে।