প্রতিবেদন: নজিরবিহীন! খালিস্তানপন্থী সংগঠন শিখস ফর জাস্টিস-এর নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুনকে হত্যার চেষ্টা সংক্রান্ত মামলায় ভারত সরকার ও শীর্ষ কর্মকর্তাদের সমন জারি করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদালত। সমন জারি হয়েছে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল ও ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থার প্রধানের বিরুদ্ধে। আমেরিকার আদালতের সমন জারির পরিপ্রেক্ষিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
নিউইয়র্কের দক্ষিণ জেলার মার্কিন জেলা আদালত পান্নুন মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সমন পাঠিয়ে ভারত সরকার, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল (Ajit Doval), প্রাক্তন ‘র’ প্রধান সামন্ত গোয়েল এর নাম দিয়েছে৷ সমন পাঠানো হয়েছে নিখিল গুপ্তা এবং বিক্রম যাদব নামে দুই ব্যক্তিকেও, যারা এই হত্যার চেষ্টা মামলায় অভিযুক্ত। ভারতের শীর্ষ সরকারি পদাধিকারীদের সমন পাঠানোর কড়া সমালোচনা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এক বিবৃতিতে ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিসরি বলেছেন, আমরা আগেই বলেছিলাম অযৌক্তিক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এভাবে সমন পাঠানো সম্পূর্ণরূপে অসমর্থনযোগ্য। অপ্রমাণিত অভিযোগের ভিত্তিতে অতি-সক্রিয় পদক্ষেপ বলে মত বিদেশ মন্ত্রকের। বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, এই বিশেষ মামলা দায়েরের পরও অন্তর্নিহিত পরিস্থিতি সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হবে না। মিসরি বলেন, শুধুমাত্র এই বিশেষ ক্ষেত্রে পিছনে থাকা ব্যক্তির (পান্নুন) প্রতি সকলের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাই, যার পূর্বসূরিরা সুপরিচিত। বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে, এই সত্যকে অস্বীকার করা যাবে না যে তথাকথিত যে সংস্থাটিকে এই ব্যক্তি (পান্নুন) প্রতিনিধিত্ব করেন সেটি একটি বেআইনি সংগঠন। এই সংগঠন দেশবিরোধী কাজে জড়িত থাকার কারণে এবং ভারতের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে ব্যাহত করার লক্ষ্যে নাশকতামূলক কার্যকলাপের জন্য ১৯৬৭ সালের বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনের অধীনে রয়েছে।
আরও পড়ুন-ক্ষতিগ্রস্তদের শস্যবিমা, দুর্গতদের বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর
প্রসঙ্গত, নিউইয়র্কে পান্নুনকে হত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে মার্কিন সরকারের অনুরোধে গত বছর চেক প্রজাতন্ত্রে গ্রেফতার হন ভারতীয় বংশোদ্ভূত নিখিল গুপ্ত। চলতি বছরের জুনে চেক প্রজাতন্ত্র থেকে তাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ করা হয়। এবছরের এপ্রিলে মার্কিন সংবাদপত্র ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’ রিপোর্ট করেছে যে ভারতের রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (আরএন্ডএডব্লিউ)-এর এক অফিসার বিক্রম যাদব এই চক্রান্তের পিছনে জড়িত ছিলেন। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে গুপ্তচর সংস্থা র-এর তৎকালীন প্রধান সামন্ত গোয়েল এই অভিযানের অনুমোদন দিয়েছিলেন। কেন্দ্র অবশ্য মার্কিন মিডিয়ার প্রতিবেদনটি প্রত্যাখ্যান করে। সরকারের বক্তব্য, পান্নুনকে হত্যার চক্রান্তে ভারতীয় এজেন্টরা জড়িত ছিল বলে দাবি অযৌক্তিক এবং অপ্রমাণিত অভিযোগ। গুরপতবন্ত সিং পান্নুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার দ্বৈত নাগরিকত্ব ধারণ করেছেন এবং সন্ত্রাসের অভিযোগে ভারত তাঁকে খুঁজছে। কঠোর সন্ত্রাসবিরোধী আইনের (বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন) অধীনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক তাকে সন্ত্রাসবাদী ঘোষণাও করেছে।