প্রতিবেদন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ইজরায়েলের সম্ভাব্য একটি সামরিক অভিযানের ইঙ্গিত উঠে এসেছে, যা ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলিকে লক্ষ্যবস্তু বানাতে পারে বলে আশঙ্কা। সিএনএন-এর একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলি ধারণা করছে যে ইজরায়েল গোপনে এই ধরনের অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। যদিও ইজরায়েলি নেতৃত্ব এই বিষয়ে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত নিয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত নয়, তবুও মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা, যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পারমাণবিক আলোচনা স্থবির হয়ে পড়া, এবং ইরানের সাম্প্রতিক দুর্বলতা এই সম্ভাবনাকে আরও জোরালো করে তুলেছে।
আরও পড়ুন-বৃষ্টি-ধসে বিধ্বস্ত উত্তর সিকিম, বিপাকে পর্যটকরা, দুর্গতদের উদ্ধারে নামল সেনা
প্রতিবেদনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক সরকারি কর্মকর্তার সূত্র উল্লেখ করে জানা গেছে যে ইজরায়েল এরই মধ্যে অস্ত্র মজুত, সামরিক বাহিনীর তৎপরতা এবং বিমান মহড়ার মতো পদক্ষেপ শুরু করেছে। তবে কিছু বিশ্লেষকের মতে, এসব পদক্ষেপ হয়তো কৌশলগত বা মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরির জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে যাতে ইরান তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে সরে আসে। তবে মার্কিন গোয়েন্দা মহলের মধ্যে এ-ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন ইজরায়েল হামলা চালাতেই পারে, আবার অনেকের মতে এটি এখনও অনুমানের পর্যায়েই রয়েছে। একজন উচ্চপদস্থ সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছেন, গত কয়েক মাসে ইজরায়েলি হামলার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বিশেষত, ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরানের সঙ্গে এমন একটি চুক্তি করে যাতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ পুরোপুরি বন্ধ না করা হয়, তবে ইজরায়েলের পক্ষে আক্রমণ আরও যৌক্তিক হয়ে উঠবে। ট্রাম্প ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনিকে ৬০ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন পারমাণবিক আলোচনা এগোনোর জন্য, যা ইতিমধ্যে পেরিয়ে গেছে। একটি পশ্চিমি কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, ট্রাম্প আরও কয়েক সপ্তাহ সময় দিতে ইচ্ছুক, তবে তারপরই সামরিক পদক্ষেপের দিকে যেতে পারেন।
ইরান বর্তমানে একাধিক দিক থেকে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। অক্টোবর মাসে ইজরায়েল ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ও ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কারখানাগুলিতে হামলা চালিয়েছে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও আঞ্চলিক মিত্রদের ওপর চাপ ইরানকে কৌশলগতভাবে পেছনে ঠেলে দিয়েছে। মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মতে, এই মুহূর্তে ইজরায়েল একে একটি কৌশলগত সুযোগ হিসেবে দেখছে। তবে ইজরায়েলের পক্ষে এককভাবে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলিকে ধ্বংস করা সম্ভব নয়। এর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা প্রয়োজন। বিশেষ করে মাঝ-আকাশে জ্বালানি সরবরাহ এবং ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় আঘাত হানতে সক্ষম উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বোমা। যদিও ট্রাম্প প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ এক সূত্রের মতে, ইরান যদি বড় ধরনের উসকানি না দেয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ইজরায়েলকে সামরিক সহায়তা দেবে না। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে চলমান আলোচনা কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ইরানকে অবশ্যই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে— যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহারযোগ্য হলেও কিছু বেসামরিক কাজেও লাগে। মার্কিন আলোচক স্টিভ উইটকফ এই বিষয়ে বলেছেন, আমরা এমনকী ১ শতাংশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের সুযোগও রাখতে পারি না। এর জবাবে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনি যুক্তরাষ্ট্রের এই দাবিকে একটি গুরুতর ভুল বলে অভিহিত করেছেন এবং জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক পরমাণু চুক্তির অধীনে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ইরানের অধিকার এবং তেহরান তা বজায় রাখবে।
এই পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। ইজরায়েল যদি হামলার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে তা কেবল ইরান-ইজরায়েল সংঘাতকেই নয়, পুরো অঞ্চলকেই অস্থিরতার মধ্যে ফেলে দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক কৌশল এবং ইরানের প্রতিক্রিয়াই এখন ঠিক করে দেবে, এই উত্তেজনা একটি যুদ্ধের দিকে গড়াবে, নাকি শেষ পর্যন্ত তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছাবে।