ভান্সের মন্তব্য ও ট্রাম্পের ঘোষণায় সংঘর্ষবিরতি নিয়ে নাটকীয় মোড় ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বে

ভারত-পাক দ্বন্দ্বে আমেরিকার তরফে গত আটঘণ্টা ধরে সর্বোচ্চ পর্যায়ে মধ্যস্থতা চলছিল বলে শনিবার বিকেলে নিজের ট্রুথ হ্যান্ডেলে প্রথম ঘোষণা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

Must read

প্রতিবেদন: নাটকীয় মোড়। ভারত-পাক দ্বন্দ্বে আমেরিকার তরফে গত আটঘণ্টা ধরে সর্বোচ্চ পর্যায়ে মধ্যস্থতা চলছিল বলে শনিবার বিকেলে নিজের ট্রুথ হ্যান্ডেলে প্রথম ঘোষণা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর এরপরই মার্কিন বিদেশ সচিব মার্কো রুবিও জানান, দুদেশেরই শীর্ষ পর্যায়ের আধিকারিকদের সঙ্গে সংঘর্ষবিরতি নিয়ে কথা হয়েছে। আমেরিকার দাবি, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্স ও মার্কিন বিদেশ সচিব মার্কো রুবিও শুক্রবার থেকেই ব্যাক চ্যানেলে দফায় দফায় যোগাযোগ রেখে চলছিলেন। কথা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, পাক সেনাপ্রধান আসিম মুনির, ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে। লাগাতার কূটনৈতিক

আরও পড়ুন-মাহেশে জগন্নাথ মন্দিরের চূড়ায় বসছে নীলচক্র

দৌত্যের ফলাফল : শনিবার বিকেলে ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি সরকারিভাবে জানিয়ে দিলেন, এদিন বিকেল ৫টা থেকেই সংঘর্ষবিরতি শুরু হল। এর আগে পাকিস্তানের ডিজি মিলিটারি অপারেশনস বিকেল ৩টে ৫৫ মিনিটে ভারতের আধিকারিককে জানান, স্থল, জল ও আকাশপথে সংঘর্ষবিরতিতে তাঁরা রাজি। তবে এই প্রসঙ্গে মার্কো রুবিও জানিয়েছিলেন, দু’দেশের সংঘাত ইস্যুতে কোনও নিরপেক্ষ স্থানে আলোচনায় বসবেন ভারত-পাক শীর্ষ আধিকারিকরা। যদিও ভারতের পক্ষ থেকে সটান সেই দাবি খারিজ করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে আপাতত শুধু সংঘর্ষবিরতিরই সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা ভাবা হচ্ছে না। এদিকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা ঘিরে যখন দক্ষিণ এশিয়ায় কূটনৈতিক অনিশ্চয়তা বাড়ছে, তখন শনিবারের সংঘর্ষবিরতির কয়েক ঘণ্টা আগে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্সের মন্তব্য দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনায় এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। রিপাবলিকান রাজনীতিক ভান্স সোজাসাপ্টা ভাষায় বলেছেন, ভারত-পাকিস্তান সংঘাত আমাদের (আমেরিকার) কোনও ব্যাপার নয়। ফক্স নিউজের এক সাক্ষাৎকারে ভান্স আরও বলেন, আমরা এই দেশগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। ভারতের তরফে পাকিস্তান নিয়ে কিছু অভিযোগ রয়েছে, পাকিস্তান তার জবাব দিচ্ছে। আমরা চাই এই সংঘাত যত দ্রুত সম্ভব স্তিমিত হোক। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোনওভাবেই এমন একটি যুদ্ধের অংশ হবে না যার উপর আমাদের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। ভারত-পাকিস্তানের দ্বন্দ্ব নিয়ে ভান্সের মন্তব্য এবং শনিবার ট্রাম্পের ঘোষণা চলমান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশনীতির এক নতুন রূপরেখা তুলে ধরল বলা যায়। দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্র নানা সময়ে মধ্যস্থতা বা হস্তক্ষেপ করেছে। কিন্তু এবার মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট স্পষ্ট বার্তা—আমরা শুধু আহ্বান জানাতে পারি, চাপ সৃষ্টি করতে পারি, কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। ওয়াশিংটনের এই তাৎপর্যপূর্ণ অবস্থান যে এখন অনেক বেশি ‘হাত গুটিয়ে’ রাখার দিকে ঝুঁকছে, তা স্পষ্ট। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদে জেডি ভান্সের মতো ‘অভ্যন্তরীণ অগ্রাধিকার’-নির্ভর নীতিনির্ধারকরা আন্তর্জাতিক সংঘাতে সরাসরি জড়িত না হওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরছেন। এর ফলে ভারত ও পাকিস্তানকে নিজেদের কূটনৈতিক এবং সামরিক সিদ্ধান্ত নিজস্ব পরিসরে নিতে হতে পারে। যা সংঘাত প্রশমনের চেয়ে নতুন সংঘর্ষের ঝুঁকিও বাড়াতে পারে। দিল্লি ও ইসলামাবাদ থেকে এখনও এই মার্কিন অবস্থানের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি, তবে কূটনৈতিক মহলে আলোচনার ঝড় উঠেছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র যদি সত্যিই এই অঞ্চলের ‘নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক’ হয়ে যায়, তবে তা এই দুই দেশের জন্য এক বড় কৌশলগত পরিবর্তন হতে পারে। ইতিহাস বলছে, ভারত-পাকিস্তান যখনই সরাসরি সংঘাতে লিপ্ত হয়েছে, তখন ওয়াশিংটনের সক্রিয় ভূমিকা বা হস্তক্ষেপ উত্তেজনা হ্রাসে সহায়ক হয়েছে। এবার পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, সেটাই এখন দেখার। তবে জেডি ভান্সের বক্তব্য যে শুধু তাৎক্ষণিক নয়, বরং মার্কিন প্রশাসনের দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন, তা নিয়ে সন্দেহ নেই।

Latest article