সাংবিধানিক ক্ষমতার ‘অপব্যবহার’ করে নিজের ইচ্ছেমতো রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ করতে পারবেন না রাজ্যপাল। খর্ব হল ক্ষমতা। রাজ্যে উপাচার্য নিয়োগের জট কাটাতে পদক্ষেপ সুপ্রিম কোর্টের। শীর্ষ আদালত জানাল, ৩ মাসের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগের প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। একইসঙ্গে কীভাবে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে, তাও বলে দিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত। পাশাপাশি সার্চ কমিটি গঠনের নির্দেশ দিল আদালত। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ইউইউ ললিতের নেতৃত্বে তিন সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করতে হবে। কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ললিত সব ক’টি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটিই কমিটি গঠন করতে পারেন অথবা আলাদা আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আলাদা আলাদা কমিটিও গঠন করা যেতে পারে। কমিটিতে প্রয়োজনে আরও ৪ বিশেষজ্ঞকে রাখা যেতে পারে।
সার্চ কমিটি প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বাছাইয়ের জন্য অ্যালফাবেটিক্যালি ৩ জনের নাম বাছাই করবে। তাঁদের নাম যাবে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। সেখান থেকে ‘অর্ডার অফ প্রেফারেন্স’ বাছাই করবেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পর এই তালিকা যাবে রাজ্যপালের কাছে। আগামী ১৪ দিনের মধ্যে এই প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। ৩ মাসের মধ্যে সরকারকে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে।
মুখ্যমন্ত্রী সুপারিশ করা নামের প্যানেল থেকেই উপাচার্য নিয়োগ করতে হবে, নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের। যদি সেই নামের মধ্যে থেকে উপাচার্য নিয়োগ না করা হয় তাহলে তার কারণ এবং প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে হবে। শিক্ষাজগতের বিভিন্ন শাখা থেকেই উপাচার্য নিয়োগ হতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় আগেকার কোনও সমস্যা মেটানোর থাকলে তা সুপ্রিম কোর্টে উত্থাপন করা যাবে। উচ্চশিক্ষা বিভাগ নোডাল বিভাগ হিসেবে কাজ করবে।
আরও পড়ুন- আদ্যাপীঠ আলিপুরদুয়ার শাখার ভার্চুয়াল উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী
রাজ্যের উপাচার্য নিয়োগে বারবার নিজের পছন্দকে গুরুত্ব দিতে চেয়েছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস বলে অভিযোগ উঠেছে। রাজ্যের তরফে সুপারিশ করার নাম বাতিল করে দিয়ে নিজের পছন্দমত বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য নিয়োগ করেছেন বোস। গোটা ঘটনার বিরুদ্ধে আগেই সরব হয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। এদিন শীর্ষ আদালতের নির্দেশের পর রাজ্যপালের ক্ষমতা যে অনেকটাই খর্ব হয়ে গেল সে কথা মানছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।শীর্ষ আদালতের নির্দেশ, উপাচার্য পদে নিয়োগের জন্য দেওয়া বিজ্ঞাপনে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের কথা উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক।
চেয়ারম্যানকে প্রতি কমিটির জন্য ৩ লক্ষ টাকা করে পারিশ্রমিক দেওয়া হবে। এছাড়াও মিলবে ইকোনমি ক্লাসের বিমান ভাড়া। ৩ মাসের মধ্যে রাজ্যের ২১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগের কাজ শেষ করতে হবে বলে শীর্ষ আদালতের নির্দেশ। এ দিন উপাচার্য নিয়োগ মামলার শুনানির পর এক্স হ্যান্ডেলে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু লেখেন, ‘আরও একবার গণতন্ত্রের জয় হল’।
রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগে সুপ্রিম নির্দেশ
* উপাচার্য নিয়োগে রাজ্যের পছন্দকে গুরুত্ব দিল সুপ্রিম কোর্ট
* রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগের সার্চ কমিটি
* সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে সার্চ কমিটি গঠন করতে হবে
* মুখ্যমন্ত্রীর কাছে নাম পাঠাবে সার্চ কমিটি
* প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য তিন জনের নামের তালিকা
* মুখ্যমন্ত্রীর বেছে দেওয়া নামের তালিকা থেকে উপাচার্য নিয়োগ করতে হবে রাজ্যপালকে
* বিজ্ঞাপন দেওয়া থেকে তিন মাসের মধ্যেই নিয়োগ সম্পন্ন করতে হবে