ইডেন জুড়ে জয়ধ্বনি, কার্যত বিদায় নাইটদের

সময়টা ইতিহাসের পাতায় উঠে যাওয়া উচিত। ৪৩-এর এক তরুণ এই মাত্র ১৮ বলে ১৭ নট আউট থেকে চেন্নাইকে জিতিয়ে দিলেন।

Must read

অলোক সরকার: দুম করে গ্যালারি হলুদ হয়ে গেল। হলুদ পতাকাগুলো উড়তে শুরু করল। তিনি ফিরছেন। পাশে সারিবদ্ধ কেকেআর। মনে হচ্ছে এটাই গার্ড অফ অনার। আর হয়তো কোনওদিন ইডেনে খেলবেন না এমএস ধোনি।
ঘড়ি বলছে সওয়া এগারোটা। সময়টা ইতিহাসের পাতায় উঠে যাওয়া উচিত। ৪৩-এর এক তরুণ এই মাত্র ১৮ বলে ১৭ নট আউট থেকে চেন্নাইকে জিতিয়ে দিলেন। অঙ্কের হিসেব বলছে এই জয়ে সিএসকের লাভ হল না। কিন্তু কেকেআরের যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেল। প্লে অফের রাস্তা কার্যত বন্ধ হল তাদের। গতবারের চ্যাম্পিয়নদের এখন বাকি দুই ম্যাচ জিতলেও কিছু হওয়ার নেই। অঙ্কের হিসাব যাই বলুক, নাইটরা কার্যত বিদায় নিয়েছে।
ঝিমিয়ে থাকা ইডেন একটু আগেও সিএসকে…সিএসকে শুরু করেছিল। ডিওয়াল্ড ব্রেভিস তখন দমাদম মারছেন। ৩২ বলে হাফ সেঞ্চুরি। রাজস্থান ম্যাচের স্মৃতি ঝুপ করে ফিরে এসেছে। বোঝাই যাচ্ছে না ব্রেভিস রিয়ান পরাগের সেই ব্যাট নিয়ে নেমেছেন কিনা!
পাওয়ার প্লে-তে চেন্নাই ৬০ রানে অর্ধেক ইনিংস শেষ করে ফেলেছিল। খেলা কত তাড়াতাড়ি শেষ হবে এই হিসেব-নিকেশের মধ্যে বাইশ গজে ঝড়। ব্রেভিসকে (৫২) একটু পরে ফিরিয়ে দেন বরুণ। এবার ইডেন জুড়ে ধোনি…ধোনি…ধোনি। ব্রেভিস আউটের পর নেমেছিলেন এমএস। দু-বছর আগে তাঁর বিদায় ম্যাচ ভেবে কী কাণ্ড হয়েছিল ইডেনে! এদিন সেটা হয়নি। কিন্তু শিবমকে নিয়ে যা করে গেলেন, তা এই ঘাসে থেকেই যাবে।

আরও পড়ুন-সিঁদুরে মেঘ দেখে প্রলাপ শাহবাজের

সহজ ম্যাচ কঠিন করে ফেলার অভ্যেস করেছে কেকেআর। না হলে রাজস্থান ম্যাচের পরিস্থিতি আসবে কেন। সমস্যা হচ্ছে নারিন-বরুণকে একসঙ্গে উইকেট নিতে হবে। তা হলে দলটা দাঁড়িয়ে যাবে। এদিন নারিন উইকেট পাননি। বরুণ ২ উইকেট নিয়েছেন। কিন্তু ব্রেভিস যখন ম্যাচ ঘোরাচ্ছেন, তখনই উইকেট দরকার ছিল। সেটা হয়নি। তাও তাঁকে ফেরান বরুণ। কিন্তু শিবম দুবেকে থামানোর লোক পাওয়া যাচ্ছিল না। তবু ১০ রান দূরে থেকে তিনি আউট হলেন ৪৫ রানে। বাকিটা ধোনি। তিনিই চেন্নাইকে জেতালেন ২ উইকেটে।
দুই ওভারে দুই উইকেট চলে যাওয়া যাওয়া চেন্নাইকে দেখে কিন্তু বোঝা যাচ্ছিল না এটা পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন দল কিনা। কোথায় যেন সবকিছু গুলিয়ে গিয়েছে ওদের। ক’টা ম্যাচ বাইরে থাকা রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে চারে নিয়ে আসা হল। তাতে ভাবনা কম, বার্তা স্পষ্ট। এই দলটা এখন খেলতে হয় খেলছে। বোলিং কোচ এরিক সিমন্স আগের দিন দাবি করছিলেন, তাঁদের নাকি মোটিভেশনের অভাব নেই। নতুন ছেলেরা এত বড় টুর্নামেন্টে খেলছে সেটাই মোটিভেশন। এদের একজন আয়ুষ মাত্রে। ভাল খেলেছিলেন টুর্নামেন্টে নেমেই। অনেক কথা হয়েছে তাঁকে নিয়ে। এদিন বৈভব তাঁকে ফিরিয়ে দেন শূন্য রানে। চেন্নাইয়ের তখন একটা রানও হয়নি।
বৈভবের ব্যাপার হল শুরুতে রোজ ব্রেক থ্রু দিচ্ছেন। মঈনও এরপর কনওয়েকে (০) ফেরত পাঠান খাতা খুলতে না দিয়েই। পারিবারিক কারণে দেশে ফিরে গিয়েছিলেন। ফিরে আসার পরেও দেখা যাচ্ছে তাঁর ব্যাটে রানের খরা। উর্ভিল প্যাটেলকে তিন নামিয়েছিল সিএসকে। নতুন রিক্রুট। খেলছিলেন বেশ ভাল। তবে ১১ বলে ৩১ করে সবে যখন সেট হয়েছেন, তখনই হর্ষিত তাঁর উইকেট তুলে নেন। চারে অশ্বিন কেন, এই প্রশ্ন আসতে বাধ্য। বিশেষ করে জাদেজা, শিবম দুবে থাকতে। অশ্বিন (৮) অবশ্য বেশিক্ষণ টিকে থাকেননি। বল হাতেও তিন ওভারে তিনি কিছু করতে পারেননি।

আরও পড়ুন-দেশের ১৭টি বিমানবন্দরে বাণিজ্যিক উড়ান স্থগিত

আগের দু’দিন কলকাতায় থেকেও ভক্তদের দর্শন দেননি এমএস ধোনি। বুধবার আবার বহু জায়গা ফাঁকা থাকল গ্যালারির। থালা ম্যাজিক কি ফিকে হয়ে আসছে? এই মাঠ ২০২৩-এর হলুদ বসন্ত দেখেছে। এদিনের ছবিটা তার সঙ্গে মিলল না। ধোনি অবশ্য দুটো দিনের বিশ্রামে প্রচুর নড়াচড়া করলেন উইকেটের পিছনে। নুরের বলে লাইটনিং স্ট্যাম্প করলেন নারিনকে (২৬)। কিন্তু কেকেআর আগে ব্যাট নেওয়ার পর তাদের চাপে রাখতে পারেননি। সেই বোলিং তাঁর হাতে নেই। ১১ রানে গুরবাজকে ফেরত পাঠিয়েছিলেন কম্বোজ। কিন্তু রাহানে ও নারিন পাওয়ার প্লে-তে ৬৭/১ করে দ্রুত পরিস্থিতি সামলে নেন।
তবে ছবিটা বদলে যায় পাওয়ার প্লে-র পরই। যখন নুর আমেদ বল করতে এলেন। আফগান স্পিনারের জন্য প্রচুর প্রস্তুতি নিয়েছিলেন নাইটরা। কিন্তু দেখা গেল তাতে কাজ হয়নি। নারিন লাইন মিস করলেন। অঙ্গকৃষ (১) কট বিহাইন্ড হলেন বলের টার্ন ধরতে না পেরে। এই উইকেটে যে একটা টার্ন আছে সেটা আগেই বোঝা গিয়েছিল। কেকেআর যেমন মঈন না নরখিয়া করতে করতে প্রথম জনকেই রেখে দিল। চেন্নাইও ফিরিয়েছিল অশ্বিনকে। তিনি বল করতে এলেন একাদশ ওভারে। পরের ওভারে জাদেজা তুলে নেন রাহানেকে (৪৮)।
ধোনির ম্যাচ বলে এদিন দর্শকদের বাঁশি দেওয়া হয়েছিল। চেন্নাইয়ে ইয়েলো ব্রিগেড থালার ম্যাচে হুইসল বাজাবেই। এখানে এদিন এমন অবস্থা হল যে চতুর্দিক থেকে ভুভুজেলার মতো আওয়াজ এসে ডিজের আওয়াজকেও ঢেকে দিচ্ছিল। অনেকে মাঠে এসেছিলেন হলুদ জার্সি পরে। তবে দু’বছর আগের সেই ম্যাচে হলুদে ঢেকে গিয়েছিল ইডেন। অনেকে ভেবেছিলেন কেকেআর বুঝি চেন্নাইয়ে খেলছে! বুধবার অন্তত দুটো ব্লক প্রায় ফাঁকাই থেকে গেল। সিএবির এক কর্তা অবশ্য এজন্য টিকিটের দামকেই দায়ী করলেন। চেন্নাই ম্যাচে টিকিটের দাম আবার বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।
রাসেলকে আবার পাঁচে নামানো হল চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত আগের দিন বলছিলেন, রাসেল পাঁচে আসবে কিনা পরিস্থিতি ঠিক করবে। কিন্তু ১২.২ ওভারে রাহানে যখন ফিরে গেলেন, কেকেআর তখন ১০৩/৪। এখন থেকে রান বাড়াতে হলে রাসেলকেই দরকার ছিল। আর তিনি শুরুও সেভাবেই করেছিলেন। কিন্তু ২১ বলে ৩৮ রানের বেশি এগোতে পারেননি। নুরের বলটা শরীরের থেকে দূরে ছিল। তাতেই কভারের উপর দিয়ে গ্যালারিতে ফেলতে গিয়ে ধরা পড়ে যান ব্রেভিসের হাতে। রিঙ্কু অতঃপর ৯ রান করেছেন। নাইটরা যে এরপরও ১৭৯/৬ করেছে সেটা মণীশ পান্ডের জন্য। তিনি ২৮ বলে ৩৬ রান করে নট আউট থেকে যান।

Latest article