প্রতিবেদন : তিনি রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান, শাসকদলের সুপ্রিমো, তামাম দেশ তাঁকে জানে লড়াকু নেত্রী হিসেবে। তবে সেইসব পরিচয় দূরে সরিয়ে রেখে বুধবার রাজ্য সরকার আয়োজিত বিজয়া সম্মিলনীতে গানে-গল্পে ঘরোয়া মেজাজে ধরা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন, ইকো পার্কের মিষ্টিকাতে বিজয়া সম্মিলনীতে (Mistika- Vijaya Sammilani) চাঁদের হাট বসে। মহানগরের তাবড় বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন সেখানে। ছিলেন রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য থেকে শুরু করে শাসকদলের নেতৃত্ব, রাজ্যের শিল্পপতিরা, সাংস্কৃতিক জগতের বিশিষ্টরা। এই আনন্দ অনুষ্ঠানে একেবারে ঘরোয়া মেজাজে ধরা দিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী।
শারদোৎসবের পরে প্রতিবছরই মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে বিজয়া সম্মিলনী করা হয়। এবারও সেই আয়োজন করে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী-সহ সব দফতরের সচিবরা ছিলেন। ছিলেন সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, ব্রাত্য বসু, সুজিত বসু, শশী পাঁজা, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। ছিলেন অমিত মিত্র, পার্থ ভৌমিক, প্রদীপ মজুমদার।
রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি বিজয়া সম্মিলনীতে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের বিশিষ্ট শিল্পপতিরা। সঞ্জীব গোয়েঙ্কা, হর্ষ নেওটিয়া, সঞ্জয় বুধিয়া, সি কে ধনুকা, চন্দ্রশেখর ঘোষ, তরুণ ঝুনঝুনওয়ালা, রুদ্র চট্টোপাধ্যায়, উমেশ চৌধুরি— কে ছিলেন না সেখানে।
সাংস্কৃতিক জগতের তাবড় তারকারা উপস্থিত ছিলেন বিজয়ের সম্মিলনীতে (Mistika- Vijaya Sammilani)। ছিলেন পরিচালক-বিধায়ক রাজ চক্রবর্তী, পরিচালক গৌতম ঘোষ, চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্ন, সাহিত্যিক নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী, সংগীতশিল্পী পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী, রূপঙ্কর, ইমন-সহ টলি ও টেলি জগতের তারকারা।
এদিন কোনও রাজনীতির কথা নয়। নিতান্ত ব্যক্তিগত আলাপচারিতা করতে দেখা যায় মমতাকে। সবার সঙ্গে পুজো কেমন কাটল, পরিবারের সবাই কেমন আছে— এইসব নিয়েই কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রীকে ঘিরে রীতিমতো গানের আসর বসে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গান খুবই ভালবাসেন। নিজে গান লেখেন, সুর দেন। এবার পুজোতে একটি গানে স্তোত্রপাঠও করেছেন তিনি। এদিন তাঁর কথায় প্রথমে গান ধরেন ইমন। তারপরে শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার অনুরোধে “এ কী লাবণ্যে” পরিবেশন করেন শান্তনু রায়চৌধুরি, রশিদ খানও। গলা মেলান স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। এরপর উষা উত্থুপ ধরেন ‘কলকাতা কলকাতা’। সবাই গলা মেলান তাতে। ছিলেন অরিন্দম শীল, জুন মালিয়ারাও। অনুপম রায়কে তাঁর সিগনেচার সং ‘আমাকে আমার মতো থাকতে দাও’ গাইতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। গায়ক অভিনেতা সাহেব চট্টোপাধ্যায় গান ধরেন ‘দুর্গে দুর্গতিনাশিনী’। এরমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর লেখা কবিতা আবৃত্তি করেন প্রণতি ঠাকুর।
আরও পড়ুন-ইকো পার্কের মিষ্টিকাতে সরকারের বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠানে চাঁদের হাট
গায়িকা-বিধায়ক অদিতি মুন্সি মুখ্যমন্ত্রীর স্নেহধন্যা। তাঁকে গান করার কথা বললে, তিনি উল্টে মমতাকে জিজ্ঞাসা করেন, কী গান গাইব? উত্তরে মমতা বলেন, যা ইচ্ছে। অদিতি গান ধরেন, ‘বৃন্দাবনও বিলাসিনী রাই আমাদের’। আরেক গায়ক-বিধায়ক বাবুল সুপ্রিয় তাঁর সবচেয়ে জনপ্রিয় গান ‘কহনা পেয়ার হ্যায়’ গেয়ে আসর জমিয়ে দেন।
গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে বরাবরই অত্যন্ত শ্রদ্ধা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রয়াত সংগীতশিল্পীর গান এদিন পরিবেশন করেন মধুরিমা চৌধুরি। গায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনকে ডেকে মাটির গান গাইতে বললেন মমতা। ‘পিন্দারে পলাশের বন গেয়ে’ মাতিয়ে দেন সায়নী ঘোষ। সবাই তাল মেলালেন তাঁর সঙ্গেই। ‘আয়রে আয় লগন বয়ে যায়’— এই গানের সঙ্গে গলা মেলান খোদ মুখ্যমন্ত্রী। ইকো পার্কের চারদিকে তখন জমজমাট অনুষ্ঠানের আভা ছড়িয়ে পড়ছে। ৬-১০ নাগাদ মধুরেণ সমাপায়েৎ হয় এ-বছরের রাজ্য সরকার আয়োজিত বিজয়া সম্মিলনীর।