ফোগট রহস্যে উত্তাল দেশ: চক্রান্তের গন্ধ, ওজনের অজুহাতে বাতিল, পদকের স্বপ্নভঙ্গ

Must read

প্রতিবেদন : গোটা দেশ তাকিয়ে ছিল তাঁর দিকে। বুধবার রাতেই অলিম্পিকে মেয়েদের কুস্তির ৫০ কেজি ফ্রিস্টাইল বিভাগের ফাইনালে নামার কথা ছিল ভারতের তারকা কুস্তিগির বিনেশ ফোগটের। কিন্তু তার আগেই হৃদয় ভাঙল ভারতবাসীর। বিনেশকে (Vinesh Phogat) নিয়ে স্বপ্নের অপমৃত্যু। ওজন ১০০ গ্রাম বেড়ে যাওয়ায় অলিম্পিক থেকে বাতিল হলেন বিনেশ। ফাইনালে নামতে পারছেন না। রুপো হাতছাড়া তো হলই, এমনকী কোনও পদক ছাড়াই খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে ‘দঙ্গল’ কন্যাকে। ঘটনায় উত্তাল গোটা দেশ। জনমানসে এখন একটাই আলোচনা— এই অবিশ্বাস্য কাণ্ড ঘটল কীভাবে। বিনেশের কোচ এবং ট্রেনাররা কী করছিলেন সেখানে? অফিসিয়ালরাই বা কেন লক্ষ্য রাখেননি?

বিনেশের প্যারিস অলিম্পিক থেকে ডিসকোয়ালিফাই হওয়ার পিছনে রহস্যের গন্ধ! তৃণমূল কংগ্রেস প্রশ্ন তুলেছে বিনেশ ফোগট এমনিতেই বাতিল হল, নাকি ও পদক জিতলে মোদি কোম্পানির মুখ পুড়ত, তাই সর্বোচ্চস্তরে অন্তর্ঘাত হল? রহস্য থাকছে। এই ঘটনায় বুধবার উত্তাল রাজ্যসভা ও লোকসভা। তৃণমূল-সহ ইন্ডিয়া জোটের শরিকরা সংসদ চত্বরে এ-নিয়ে বিক্ষোভও দেখান। তাঁরা স্লোগান তোলেন, বিনেশ ফোগতের (Vinesh Phogat) বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র বরদাস্ত করা হবে না। ভিনেশের ন্যায়ের দাবিতে বেশ খানিকক্ষণ এই বিক্ষোভ চলে।
তৃণমূলের স্পষ্ট বক্তব্য, যেহেতু এই মেয়েটি মহিলা কুস্তিগিরদের আন্দোলনের সাক্ষী মালিকের পাশে অন্যতম মুখ ছিল। এদেরকেই অমিত শাহ-নরেন্দ্র মোদির পুলিশ ধরপাকড় করে জোর করে সরিয়েছিল। এরাই বলেছিল বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণ শ্লীলতাহানির সঙ্গে যুক্ত। এই মেয়েটি যদি পদক পেয়ে যেত তাহলে দেশের মুখ উজ্জ্বল হত, বিজেপি কোম্পানির মুখ পুড়ে যেত। এরপরে তুলনা আসত এই নির্যাতিতারাই পদক নিয়ে আসে। সেই বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার জন্য কোনও বৃহত্তর চক্রান্তে মেয়েটিকে ছিটকে দেওয়া হল কিনা সেটা খেলা প্রশাসনে যে ব্যক্তিরা আছেন তাঁরা তদন্ত করে দেখুন। এদিন সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ বলেন, যদি ১০০ গ্রাম বেড়েছে ধরাও পড়ত, মেয়েটি যদি ফাইনালে না গিয়ে ওয়াকওভার দিত তাহলেও রুপো জিতে ফিরে আসত। মোদি কোম্পানির মুখরক্ষার জন্য ওই কুস্তি আন্দোলনের পদক পেতে দেওয়া হবে না সেজন্য চক্রান্তমূলকভাবে ফাঁদে ফেলা হয়েছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা উচিত
অলিম্পিকে পদকজয়ী প্রাক্তন বক্সার বিজেন্দ্র সিং ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না। তিনি কাঠগড়ায় তুলেছেন আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি)-কে। বিজেন্দ্র বলেছেন, আইওসি দোষী হতেই পারে। মনে হচ্ছে, বিনেশ পদক জিতুক ওরা সেটা চায় না। কুস্তিতে যে আমরা পদক পাই, সেটা ওরা চায় না। আমার মনে হচ্ছে, ভারতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে।

আরও পড়ুন- ফের জিএসটি ইস্যুতে সংসদে সরব ডেরেক

এদিন লোকসভায় বিনেশ ইস্যুতে তুমুল শোরগোল হয়। ক্রীড়ামন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবীয় সাফাই দেওয়ার চেষ্টা করলেও বিশেষ সুবিধে করতে পারেননি। বিনেশ ফোগট ৫০ কেজি বিভাগে খেলছিলেন। ১০০ গ্রাম ওজন বেশি থাকার কারণে তাঁকে অলিম্পিক থেকে বাতিল করা হয়েছে। বুধবার সকালে কুস্তিগিরের ওজন মেপে দেখা যায়, ৫০ কেজি ১০০ গ্রাম। ভারত সরকার ভিনেশের অলিম্পিক প্রস্তুতির জন্য কী কী করেছে, তার দীর্ঘ বিবরণ দেন কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী। তাঁর বিবৃতির ব্যাখ্যা চায় সংসদে উপস্থিত বিরোধীরা। ব্যাখ্যা না পেয়ে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র সদস্যরা লোকসভা থেকে ওয়াক আউট করেন।

প্রশ্ন রয়েছে আরও। বাড়তি ১০০ গ্রাম ওজন কমানোর দিকে আগে থেকে কেন নজর দেওয়া হয়নি? ভারতীয় দলের সাপোর্ট স্টাফদের ভূমিকা তাহলে কী ছিল? নক আউট পর্বে তিনটি বাউটে সব ঠিক থাকার পর কেন ফাইনালের আগে বিপর্যয়? পিছনে কি ষড়যন্ত্র? জড়িত কি আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি)? দায় এড়াতে পারে ভারতীয় অলিম্পিক সংস্থা (আইওএ)? যদিও বিনেশ ইস্যুতে সরকারিভাবে আইওসি-র কাছে প্রতিবাদ জানিয়েছে আইওএ।
নিয়ম অনুযায়ী, ওয়েট ক্যাটেগরি ইভেন্টের দু’দিন অ্যাথলিটের ওজন নির্ধারিত পরিমাপের মধ্যে না থাকলে তিনি প্রতিযোগিতায় নামার এবং পদক পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হন না। ইউডব্লিউডব্লিউ-এর নিয়ম অনুযায়ী, বিনেশ প্রতিযোগিতা শেষ করছেন সবার শেষে।

যেহেতু এই মেয়েটি মহিলা কুস্তিগিরদের আন্দোলনের সাক্ষী মালিকের পাশে অন্যতম মুখ ছিল। এদেরকেই অমিত শাহ নরেন্দ্র মোদির পুলিশ ধরপাকড় করে জোর করে সরিয়েছিল। এরাই বলেছিল বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণ শ্লীলতাহানির সঙ্গে যুক্ত। এই মেয়েটি যদি পদক পেয়ে যেত তাহলে দেশের মুখ উজ্জ্বল হত, বিজেপি কোম্পানির মুখ পুড়ে যেত। এরপরে তুলনা আসতো এই নির্যাতিতারাই পদক নিয়ে আসে। সেই বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার জন্য কোনও বৃহত্তর চক্রান্তে মেয়েটিকে ছিটকে দেওয়া হলো কিনা সেটা খেলা প্রশাসনে যে ব্যক্তিরা আছে তারা তদন্ত করে দেখুন। যদি ১০০ গ্রাম বেড়েছে ধরাও পড়ত, মেয়েটি যদি ফাইনালে না গিয়ে ওয়াক ওভার দিত তাহলেও রুপো জিতে ফিরে আসত। মোদি কোম্পানির মুখরক্ষার জন্য ওই কুস্তি আন্দোলনের পদক পেতে দেওয়া হবে না সেজন্য চক্রান্তমূলকভাবে ফাঁদে ফেলা হয়েছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা উচিত।

Latest article