বিরাট মুঠোয় প্রথম আইপিএল

টসের সময় দুই অধিনায়কের গলায় ভিন্ন সুর। শ্রেয়স মেনে নিলেন যতই আর একটা ম্যাচ বলুন না কেন, ফাইনাল বলে চাপ সেই আছেই।

Must read

আমেদাবাদ, ৩ জুন : তিনি যখন কাঁদছিলেন, লুকানোর চেষ্টাই করেননি। কেন করবেন, ১৮ বছরের অপেক্ষার শেষে এই জল। জায়ান্ট স্ক্রিনে তখনও জ্বলজ্বল করছে, দ্য ওয়েট ইজ ওভার! আর তিনি, বিরাট কোহলি? জয় নিশ্চিত হতেই মাটিতে মাথা ঠেকালেন। তাঁর উপর গোটা দল। যখন উঠে দাঁড়াতে পারলেন, গিয়ে জড়িয়ে ধরলেন এবি ডি’ভিলিয়ার্সকে। প্রাক্তন আরসিবিকে খেলার আগে বলে এসেছিলেন, জিতলে ট্রফি তোমারও। তোমাকে পোডিয়ামে দেখতে চাই আমি।
এসব ম্যাচ শেষের ছবি। তার আগে শ্রেয়সের উইকেট পেয়ে বিরাট যে লাফটা দিলেন, পরে বোঝা গেল ওটা ট্রেলার। পিকচার বাকি ছিল ফাইনাল শেষের জন্য। উড়ন্ত হাতে হাই ফাইভ করলেন বোলার রোমারিও শেফার্ডের সঙ্গে। রাজার ঝুলিতে সব আছে, শুধু আইপিএল ট্রফিটাই নেই। ১৮ নম্বর আইপিএল। পিঠে ১৮ লেখা জার্সি। কিন্তু অপেক্ষার লম্বা সরণি। আর সামান্য ক্রিকেট পড়ে আছে। টেস্ট নেই। টি-২০ নেই। টিমটিম করে আছে শুধু ওয়ান ডে। আইপিএল। অতঃপর মুকুট পড়ে থাকবে, রাজা থাকবে না। এই ব্যাকুলতা তাই তাঁকেই মানায়।

আরও পড়ুন-তৃণমূল-সহ ১৬ দলের চিঠি প্রধানমন্ত্রীকে, সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকুন

বিরাট বলছিলেন, এই একটা ট্রফি জন্য পুরো যৌবন দিয়েছি। আমার সব ছিল, শুধু ট্রফিটা ছিল না। লোকে আমার কথা বলে, কিন্তু আমাদের সবার কথা বলতে হবে। প্রত্যেকে এই দিনটার জন্য মুখিয়ে ছিল। এরমধ্যে স্ত্রী অনুষ্কাকে জড়িয়ে ধরলেন। স্ত্রীর হৃদয়ের খুব কাছে বেঙ্গালুরু। অনুষ্কার কলেজ জীবন কেটেছে বেঙ্গালুরুতে। বিরাট নিজেও এখন গার্ডেন সিটিকে নিজের সেকেন্ড হোম বলেন। একটা চেন রেস্তোরাঁও আছে। তাই ট্রফি জিতে বারবার বলছিলেন, এটা বেঙ্গালুরুর জন্য।
১৯১ রান টার্গেট ছিল পাঞ্জাবের। বিনা উইকেটে ৪৩ রান তুলে ফেলেছিল তারা। পরে ৭১/১। তখন মনে হচ্ছিল এগোচ্ছে পাঞ্জাব। কিন্তু এই আরসিবি দলে এমন এক বাঁহাতি আছেন, যিনি সানি গাভাসকরের প্রিয়। কতবার প্রশংসায় ভরিয়েছেন ইউটিলিটি অলরাউন্ডারকে। ক্রুনাল পাণ্ডিয়া। আরসিবির উচিত হার্দিকের দাদার বাঁ হাতটা সোনা দিয়ে মুড়ে দেওয়া। ক্রুনাল সেই যে প্রথম স্পেলে পরপর প্রভসিমরন (২৬) আর ইনগ্লিশকে (৩৯) তুলে নিলেন, আসলে ট্রফিটাও তখনই লেখা হয়ে যায় আরসিবির নামে।
আগের ম্যাচে শ্রেয়সের কাছে খুব বকুনি খেয়েছিলেন শশাঙ্ক সিং। এদিন ৬১ নট আউট থাকলেন। কিন্তু তাঁর এই লড়াই অনেক আগেই হামারি অধুরা কাহিনি হয়ে গিয়েছিল পাশে কাউকে না পেয়ে। তার আগে শ্রেয়সের উইকেট খুব দামি হয়ে গেল আরসিবির জন্য। বিরাট ওই লাফটা দিলেন, কারণ তিনি জানতেন পারলে শ্রেয়সই পারবেন। নাহলে কেউ না। ক্রুনাল ১৭ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন। ২ উইকেট ভুবনেশ্বরেরও। সবার অলক্ষ্যে স্টার হ্যাজলউড ৪ ওভারে ৫৪ রান দিয়ে গেলেন। কিন্তু জয়ের আবেগে এসব ততক্ষণে তুচ্ছ হয়ে গিয়েছে।
টসের সময় দুই অধিনায়কের গলায় ভিন্ন সুর। শ্রেয়স মেনে নিলেন যতই আর একটা ম্যাচ বলুন না কেন, ফাইনাল বলে চাপ সেই আছেই। কে জানে আগের রাতে কতক্ষণ ঘুমিয়েছেন! আগের দিন বলেছেন, বড়জোর চার ঘণ্টা ঘুমিয়েছিলাম। রজত আবার শাস্ত্রীকে সোজাসুজি বলে দিলেন, এটা আর একটা অ্যাওয়ে ম্যাচ। আমরা এভাবেই দেখছি।
শ্রেয়স টসে জিতে যে জন্য আরসিবিকে ব্যাট করতে দিলেন তাতে মোটামুটি সফল। দ্বিতীয় ওভারেই ফিল সল্টকে (১৬) তুলে নেন জেমিসন। পরে দেখা গেল ১০ ওভারের মধ্যে ৯৬ রানে বেঙ্গালুরুর ৩ উইকেট চলে গিয়েছে। ময়াঙ্ক আগরওয়াল (২৪) চোট থেকে ফিরে বেশ ভাল খেলছেন। কিন্তু চাহাল বল করতে এসে তুলে নেন তাঁকে। এরপর পাতিদার(২৬)। জেমিসনের শিকার।
গত কয়েকদিন বৃষ্টি হয়েছে। উইকেট ঢাকা ছিল। ফলে নিচে ময়েশ্চার ছিল। এমন উইকেটে সিমাররা শুরুতে সুবিধা পাবে। দীর্ঘকায় জেমিসন সেই অ্যাডভান্টেজ নিয়ে গেলেন। তবে আরসিবির জন্য সবথেকে বড় ধাক্কা ছিল বিরাটের চলে যাওয়া। ওমরজাইকে মিড উইকেটের বাইরে ফেলতে গিয়েছিলেন। বল ব্যাটের উপরে লেগে বোলারের হাতে উঁচু ক্যাচ গেল।

আরও পড়ুন-সবটুকু দিয়েছি, চোখে জল কিংয়ের

বিরাট ধরে খেলছিলেন। তিনি জানতেন একদিক ধরে রাখতে হবে। কিন্তু ১৫তম ওভারে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। প্রচণ্ড হতাশা নিয়ে ফিরলেন বিরাট। তাঁকে নিয়ে জল্পনা ছিল, হয়তো এটাই তাঁর শেষ আইপিএল। ১৭ বছরে কাপ হয়নি। ১৮ বারে এসে তিনি চেষ্টা করবেনই। এরমধ্যে আবার মঙ্গলবারই ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সিইও টড গ্রিনবার্গ বলেছেন, তাঁরা আশা করছেন বিরাট বিগ ব্যাশে খেলবেন। এর আগে মিডলসেক্সও প্রস্তাব দিয়েছে কোহলিকে। বিরাট আইপিএলের মধ্যে কিছুই বলেননি।
এই উইকেটে অন্তত দুশো রান দরকার ছিল। সেটা হয়নি। বিরাট আউট হওয়ার পর চাপ এসে পড়ে লিভিংস্টোনের উপর। কিন্তু চাহাল, ওমরজাই আর বিজয় কুমার আগাগোড়া চাপ রেখে দিয়েছিলেন তাঁদের। জিতেশ আগের ম্যাচগুলোতে ভাল খেলেছিলেন। এখানে ২৪ করে দিয়ে গেলেন। এরপর শেফার্ড (১৭), ক্রুনাল (৪) সবাই পরপর আউট। আরসিবি শেষ পাঁচ উইকেট হারিয়েছে ২৩ রানে। ১৯ বলে। এটা তখন আরসিবিকে চাপে ফেলে দিয়েছিল। শেষপর্যন্ত ১৯০/৯-এর বেশি যেতে পারেনি তারা। কিন্তু এতেই পরে ৬ রানে জয় ও প্রথম সাফল্য।

Latest article