সংবাদদাতা, হুগলি : স্বপ্ন ছিল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার। ভাল বাড়ি তৈরি করে অভাবের সংসারে বাবা-মায়ের পাশে দাঁড়ানোর। কিন্তু তাঁর সেই স্বপ্ন বাস্তবে পূরণ হয়নি। কারণ জন্ম থেকেই দৃষ্টিহীন পান্ডুয়ার সরাই গ্রামের বাসিন্দা অনিল দাস। কিন্তু চোখে না দেখতে পেলে কী হয়েছে, মনের জোরই তাঁর মূলমন্ত্র। সেই জোরেই আর পাঁচটা মিস্ত্রির মতোই অনায়াসে কাঠের জিনিসপত্র বানিয়ে তাক লাগান বছর ষাটের অনিল। টালির চালের ছোট্ট ঘরে বসেই ৪৫ বছর ধরে কাঠের তৈরি বিভিন্ন ধরনের ঠাকুরের চৌকি ও সিংহাসন বানিয়ে আসছেন তিনি।
আরও পড়ুন-ভুটানে ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস, বন্যা মোকাবিলায় তৈরি আলিপুরদুয়ার
ছোটবেলায় অভাবের সংসারে সেভাবে পড়াশোনার সুযোগ পাননি। তৃতীয় শ্রেণির পরই পড়াশোনায় ইতি টানতে হয়েছিল তাঁকে। এরপরেই বাবার দোকানে কাঠের কাজে হাতেখড়ি হয় তাঁর। প্রথমদিকে দোকানে অন্যদের হাতের অনুভূতির সাহায্যেই কাজ শেখা শুরু। নির্দিষ্ট মাপকাঠি দিয়ে সমস্ত ধরনের আসবাবপত্র তৈরি করতেন। পরবর্তীকালে নিজেই দোকান খুলে বসেন। তারপর থেকেই তিনি কাঠের ঠাকুরের ছোট চৌকি, লক্ষ্মী ও গোপালের সিংহাসন তৈরি করেন। যদিও তাঁর কাছে সবচেয়ে বেশি অর্ডার আসে চৌকি। বর্ধমান, মেমারি, চন্দননগর-সহ বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে যায় তাঁর হাতের তৈরি কাঠের জিনিস। কাঠ কাটা থেকে পেঁরেক মারা সবেতেই সিদ্ধহস্ত অনিল। বর্তমানে তাঁর কাছে দুজন কারিগর কাজ করে। অনিল বলেন, ছোটবেলাতেই বাবার দোকানে কাজে হাতেখড়ি। ১৫ বছর বয়স থেকেই এই কাজ করে আসছি। জলচৌকি তৈরি করাই আমার মূল কাজ। তার সঙ্গে লক্ষ্মীর সিংহাসন, গোপালের খাট সবই আমরা তৈরি করি। বাবার দোকানে থাকার সময় খাট, দরজা-জানলা, বেঞ্চিও তৈরি করতাম। কিন্তু এখন আমার কাছে সিংহাসন, গোপালের খাট এসবের অর্ডার আসে। প্রতিবন্ধী হিসেবে সরকারি সাহায্যও পাই হাজার টাকা করে। যদিও এই ব্যবসায় সেভাবে কিছু উপার্জন হয় না। অন্য কাজ জানা নেই, তাই এই কাজই করে দুবেলা দু’মুঠো অন্ন যোগাই। সরকার যদি আমাকে আরেকটু সাহায্য করে তাহলে ভাল হয়। অনিলের ভাইপো সৌমেন দাস বলেন, জেঠুই আমাকে হাতে ধরে কাজ শিখিয়েছেন। তাঁর কাজে কোনও ভুল হয় না। আমারও কোনও ক্ষেত্রে ভুল হয়, কিন্তু ওনার কোনও ভুল হয় না।