রোদ-বৃষ্টি গায়ে মেখে মণ্ডপে দর্শনার্থীর ঢল

টালা প্রত্যয় নাকি শ্রীভূমি নাকি সুরুচি! কোনটা দিয়ে শুরু করব! নর্থ না সাউথ! তৃতীয়া থেকেই এই কোনটা দিয়ে শুরু করা যায় তা নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত ছিল আমজনতা

Must read

মণীশ কীর্তনীয়া: টালা প্রত্যয় নাকি শ্রীভূমি নাকি সুরুচি! কোনটা দিয়ে শুরু করব! নর্থ না সাউথ! তৃতীয়া থেকেই এই কোনটা দিয়ে শুরু করা যায় তা নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত ছিল আমজনতা। আর পঞ্চমীতে এসে সেসব চুলোয় দিয়ে যার যেমন সুবিধে সেই মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছে উত্তর থেকে দক্ষিণের মণ্ডপে। রোদ-বৃষ্টি গায়ে মেখে সঙ্গীসাথীদের সঙ্গে নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে পড়া। আর যাঁদের হাতে ভিআইপি পাস রয়েছে, তাঁদের তো আলাদাই কেতা! পাড়ায়-বন্ধু মহলে-অফিসে তাঁদের দর এই ক’টা দিনের জন্য একটু হলেও ওপরের দিকে! আর যাঁদের পাস ভাগ্য খারাপ তাঁদের মনের জোর আর হাঁটুর জোরই ভরসা। তবে এঁদের সংখ্যাটাই অনুপাতে অনেক বেশি। নইলে ট্রেন-মেট্রো-বাসে এরকম উত্তুঙ্গ লাগামছাড়া ভিড় হয়! আচমকা ধেয়ে আসা বৃষ্টি এঁদের কাছে কিছুই না। সঙ্গের ব্যাগে ছাতা তো আছেই। আর যাঁদের সঙ্গী বাইক-স্কুটি তাঁদের ডিকিতে রাখা রেইনকোট। ফলে রোদ-বৃষ্টির পরোয়া করে কে! টালা থেকে টালিগঞ্জ অন্তবিহীন পথে শুধুই চলা। মাত্র তিনদিন আগে কলকাতার উপর দিয়ে যে দুর্যোগ বয়ে গিয়েছে, পঞ্চমীর কলকাতাকে দেখে তা বোঝার উপায় নেই। জল তো কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নামানো গেছে। যেসব রাস্তা-মণ্ডপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল কোন এক ভোজবাজিতে যেন সব নতুনরূপে সেজে উঠেছে। সৌজন্যে রাজ্য সরকার ও কলকাতা কর্পোরেশনের টিম।

আরও পড়ুন-দিনের কবিতা

অনেকদিন হয়ে গেল রাত জাগার অভ্যেস তৈরি করে ফেলেছে কলকাতা। আর পুজোর এই ক’টা দিন তো বিরামহীন অনাবিল আনন্দ চেটেপুটে নেওয়া। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৌজন্যে এখন শারদোৎসব শুরু হয় মহালয়ার পর থেকেই। তৃতীয়া-চতুর্থী পর্যন্ত জেলা ও কলকাতা মিলিয়ে কয়েক হাজার পুজো উদ্বোধনের পর মুখ্যমন্ত্রী থাকেন অতন্দ্র প্রহরী হয়ে। গোটা বাংলা মেতে থাকে উৎসবে আর কালীঘাটের বাড়িতে বিনিদ্র রজনী কাটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ঘন ঘন ফোন যায় প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকদের কাছে। আর তিনি বাংলার মানুষের পাহারাদার হয়ে সবটা সামলান নীরবে, যাতে নির্বিঘ্নে উৎসব হয় বাংলায়। সজাগ থাকেন লালবাজার-নবান্নের শীর্ষ কর্তারা। এই সময়টায় পুলিশের ওই ‘তোমার ছুটি আমার ছুটি নয়’। পরিবার-পরিজন-সন্তানসন্ততি নিয়ে ঠাকুর দেখতে পথে নামে বাংলা। আর তাদের সামলাতে দিন-রাত রাস্তায় থাকেন পুলিশের সর্বস্তরের অফিসার-কর্মীরা। এরই মাঝে গোসাবার প্রত্যন্ত অঞ্চলের ৪২ জন শিশুকে নিয়ে পঞ্চমীর দিন কলকাতার বুকে পুজো পরিক্রমা করল সুন্দরী ট্রাস্ট। সঙ্গে ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের আইটি সেলের প্রধান দেবাংশু ভট্টাচার্য। কলকাতা ৮টি নামকরা পুজোতে শিশুদের নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এও এক অন্য ছবি বাংলার-তিলোত্তমার।
আজ রবিবার, মহাষষ্ঠী। জনসমুদ্রে ভাসবে বাংলা। হাওয়া অফিস যতই অষ্টমীতে ঘূর্ণাবর্ত আর নবমী-দশমীতে উত্তর-দক্ষিণবঙ্গ মিলিয়ে ভারী-মাঝারি বৃষ্টির সতর্কতা শুনিয়ে রাখুক না কেন, বাংলার মানুষের তাতে বয়েই গেছে! বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবে কোনও বাধাই বাধা নয়। মা এসেছেন যে! তাঁকে বরণ করে তাঁর সঙ্গে এই ক’টা দিন কাটিয়ে দশমী শেষে উমাকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে তবেই বাঙালি ক্ষান্ত হবে। তারপরই শুরু হবে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর প্রস্তুতি।

Latest article