প্রতিবেদন : বিরোধীদের প্রবল প্ররোচনা আর চক্রান্তকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে শনিবার শেষ হল রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোট (Panchayat Election)। ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের মোট ৬১ হাজার ৫৪৩টি বুথে ভোটগ্রহণ হয়েছে। বহু জায়গায় ভোটারের সংখ্যা বেশি থাকায় সন্ধে গড়িয়ে যাওয়ার পরেও মানুষের লাইন চোখে পড়েছে। বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৬৬.২৮%। ১৩ থেকে ১৪টি জেলার ভোট ছিল কার্যত ঘটনাবিহীন। মাত্র ৬০-৬২টি বুথে কিছু অনভিপ্রেত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে তৃণমূল কর্মীর সংখ্যাই ৭৮%।
এদিন তৃণমূল ভবনে দুই মন্ত্রী ব্রাত্য বসু, ডাঃ শশী পাঁজা এবং দলের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ সাংবাদিক সম্মেলনে তথ্য দিয়ে বলেন—
১৭ তৃণমূলকর্মীর মৃত্যু : পঞ্চায়েত ভোট (Panchayat Election) ঘোষণা এবং তার পর থেকে শুরু করে শনিবার ভোটপর্ব পর্যন্ত ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনক। মৃতদের মধ্যে ১৭ জন তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী। অর্থাৎ মৃতদের ৬০ শতাংশই তৃণমূল কংগ্রেস পরিবারের। এক শ্রেণির মিডিয়া একপেশে সংবাদ পরিবেশন করে চলছে। তাদের দাবি, ঘটনাগুলির পিছনে রয়েছে শাসক দল। মিথ্যাচার। তৃণমূলই যদি ঘটনার পিছনে হয়, তাহলে তাদের ১৭ জন কর্মীর মৃত্যু হয় কীভাবে? বাস্তব ঘটনা হল, বিরোধীরা বুঝেছে, তাদের হার অনিবার্য। তাই নিজেদের পরাজয়ের যথার্থতা প্রমাণ করতে একটা নেতিবাচক ধারণা তৈরির চেষ্টা চলছে। দোসর একাংশের মিডিয়া। দুয়ে মিলে দেখানোর চেষ্টা রাজনৈতিক সংঘর্ষ কীভাবে নির্বাচনে প্রভাব ফেলেছে।
অন্তত ১১ জেলা সংঘর্ষহীন : একটিও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি হুগলি, পশ্চিম বর্ধমান, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, জলপাইগুড়ি, হাওড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, বীরভূমে। কই একবারও তো কেউ বলছেন না? গণতন্ত্রের উৎসবে মানুষ দীর্ঘ লাইন দিয়ে ভোট দিচ্ছেন, সে ছবি কোথায়?
আরও পড়ুন- রাজ্যসভার প্রস্তুতি তৃণমূলের, আগামিকালই বিধায়কদের তলব বিধানসভায়
প্রশ্ন করুন কেন্দ্রীয় বাহিনীকে : ভোট ঘোষণা হওয়ার পর থেকে বিরোধীরা একের পর এক দাবিদাওয়া জানিয়ে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি থেকে প্রশাসনিক নানা দাবিদাওয়া। কমিশন ও রাজ্য সেসব দাবি মিটিয়েছে। এক শ্রেণির মিডিয়া একপেশে ভঙ্গিমায় সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসকে প্রশ্ন করছে। কেন? তাদের তো প্রশ্ন করা উচিত ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনীকে। যারা ভোটে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য ভিন রাজ্য থেকে এসেছে।
৬০টি বুথে সংঘর্ষ : পঞ্চায়েতে বাংলা জুড়ে ৬১ হাজারের বেশি বুথ রয়েছে। তার মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে কম-বেশি ৬০টি বুথে। ৬১ হাজার বুথে ভোট আর ৬০টি বুথে সংঘর্ষের ঘটনা। নির্বাচনের যে ব্যাপকতা, সেই জায়গায় এই সংখ্যাটা শতাংশের হিসাবেও আসে না। বিরোধী আর এক শ্রেণির মিডিয়ার কাছে এর কোনও ব্যাখ্যা আছে? মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, বহু সীমান্ত এলাকায় বিএসএফ বিজেপিকে ভোট দেওয়ার জন্য প্রভাব খাটিয়েছে। যা খুবই দুঃখজনক। শুধু তাই নয়, যাদের কাজ সীমান্ত পাহারা দেওয়া তারা বিজেপির হয়ে তৃণমূল প্রার্থীদের, এজেন্টদের ও সীমান্তবর্তী এলাকার ভোটারদের ধমকেছে, চমকেছে। বহু জায়গা থেকে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। এটাই কি কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা?
বিরোধীদের একহাত নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব বলেন, রাম-বাম-শ্যাম অর্থাৎ বিরোধীদের রামধনু জোট এক হয়ে পরিকল্পিতভাবে বাংলাকে বদনাম করার জন্য এই সব ঘটনা ঘটিয়েছে। কিছু প্রাণের বিনিময়ে তারা এই কাজ করেছে। প্রকাশ্যে দাঁড়িয়ে তাদের মদত দিয়েছেন রাজ্যপাল। হার নিশ্চিত জেনেই এই পরিকল্পিত সংঘর্ষের প্লট তৈরি করেছে বিরোধীরা। সেইসঙ্গে এক শ্রেণির মিডিয়া এই ঘটনাগুলিকে বিপণন করে বাংলাকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করেছে। চোখের সামনে দেখা গিয়েছে খাতরার বিজেপির জেলাপরিষদ প্রার্থী শান্তনু সিং তরোয়াল হাতে ঘুরছে। বিজেপি কর্মীরা ব্যালটবাক্স পুকুরে ছুঁড়ে ফেলেছে। কোচবিহারে বিজেপি ব্যালট পেপারে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। সিপিএম ব্যালটে ছাপ্পা মারছে সেই ছবিও সামনে এসেছে। ভাঙড়ে আইএসএফ লাঠিসোঁটা নিয়ে তৃণমূল প্রার্থী ও ভোটারদের মেরেছে। হারের ভ্রুকুটি থেকেই লোডশেডিংয়ে জেতা তথাকথিত বিরোধী দলনেতা দলবদলু গদ্দার অধিকারীর মন্তব্য তিনি কোর্টে যাবেন। সেইসঙ্গে দিল্লিতে গিয়ে বাংলার টাকা আটকাবেন। তৃণমূলের বক্তব্য, হারবে জেনেই কোর্ট-কাছারি করছে। কোর্টে তো আগেও গিয়েছে। তাতে লাভ কী হয়েছে? বিজেপি যে বাংলার মানুষের ভাল চায় না তা টাকা আটকে দেওয়া মন্তব্যের মধ্যেই পরিষ্কার। বিজেপি প্রতিহিংসার রাজনীতি শুরু করেছে বাংলায়। সবচেয়ে লক্ষণীয় হল, ২০১৮ সালে যে জেলাগুলিতে গদ্দার দায়িত্বে ছিল সেখান থেকেই সবচেয়ে বেশি অভিযোগ এসেছে। এবং ভোটের লাইন থেকে মানুষকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। মানুষ ভোট দিতে পারেননি। এবার সেই সব জায়গা ঘটনাবিহীন। নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় বাহিনী সময় মতো আসেনি। তাই অনেক জায়গায় চাইলেও সংঘর্ষ ঠেকানো যায়নি।