ডিজিটাল ইন্ডিয়ার নামে ভোট চুরি ধরা পড়তেই সাফাই দেওয়া শুরু করল নির্বাচন কমিশন (Election commission)। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী একেবারে তালিকা ধরে ধরে ভোটার তালিকার গলমিল তুলে ধরতেই সামনে এসেছে কীভাবে প্রত্যেক রাজ্যে বাইরের ভোটার ঢুকিয়ে যোগ্য ভোটারদের ভোট বাতিল করার কারচুপি শুরু করেছিল নির্বাচন কমিশন। তথ্য প্রকাশ্যে আসতেই সাফাই দিতে মাঠে নামল দিল্লির নির্বাচন কমিশন। বিবৃতি দিয়ে জানানো হল, হাতে কলমে যে কাজ হতো, সেই কাজ যন্ত্রে প্রতিস্থাপন করতে গিয়ে একই এপিক নম্বরে একাধিক ব্যক্তির নাম উঠে গিয়েছে। আদতে এই সাফাইয়ের যৌক্তিকতা নিয়ে যদিও প্রশ্ন তুলেছে রাজনৈতিক দলগুলি। কীভাবে ভোটার তালিকার মতো দেশের এত বড় গুরুত্বপূর্ণ কাজে এরকম ভুল হল, আর তা কারো চোখেই পড়ল না কেন, তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। রাজনীতিকদের দাবি, এভাবে কাজ হাসিল করার চেষ্টা করতে চাওয়া বিজেপির পর্দাফাঁস হতেই সাফাই দিতে মাঠে নামানো হয়েছে নির্বাচন কমিশনকে।
আরও পড়ুন-হরিণঘাটায় অ্যাম্বুল্যান্স এবং লরির মুখোমুখি সংঘর্ষ, মৃত ৩
রবিবার তড়িঘড়ি নির্বাচন কমিশনের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, একাধিক রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সিইও-রা একই অক্ষর-নম্বরের সিরিজ ব্যবহার করে ফেলাতেই বিপত্তি হয়েছে। বিবৃতিতে দেশের নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা জানাচ্ছে, এতদিন ভোটার তালিকা তৈরির কাজ ম্যানুয়ালি বা মানুষ হাতে কলমে করতেন। পরবর্তীকালে সেই গোটা ভোটার তালিকাকে ডেটাবেসে তোলার কাজ শুরু হয়। দাবি করা হয়েছে, কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণে ডেটাবেস তৈরির কাজ করার সময় এপিক কার্ডের নম্বরে গরমিল হয়েছে। স্পষ্ট বলা হয়েছে একই অ্যালফা-নিউমেরিক সিরিজ একাধিক রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সিইও অফিসগুলি ব্যবহার করেছে। যে কারণে একই এপিক নম্বর একাধিক ব্যক্তি পেয়ে গিয়েছেন।
সেখানেই প্রশ্ন উঠেছে, এই গরমিল কবে জানতে পেরেছে নির্বাচন কমিশন। লোকসভা নির্বাচনের পরে, এমনকি হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র নির্বাচনের সময় থেকে বিরোধীরা দাবি করে এসেছেন ভোটার তালিকা তৈরিতে কোনও গরমিল নেই। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় নির্বাচন আধিকারিক রাজীব কুমারও বিরোধীদের এই দাবি নস্যাৎ করে দিয়েছিলেন। অবশেষে বাংলা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিটি বুথে ঘুরে ভুয়ো ভোটার ধরার কাজ করার জন্য তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেওয়ার পর হঠাৎই দিল্লির নির্বাচন কমিশনের তরফে ছুটির দিনে রবিবার তড়িঘড়ি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হল। এত দ্রুত যে ভুল ধরে ফেলতে পারল ইসি, সেই ভুল এতদিন কী তবে জেনেও না জানার ভান করে ছিলেন আধিকারিকরা, সেই প্রশ্নও উঠেছে।
আরও পড়ুন-হরিয়ানায় পরিত্যক্ত সুটকেস থেকে কংগ্রেস নেত্রীর দেহ উদ্ধার
এই সাফাইয়ের পরে অবশ্য নির্বাচন কমিশন বিবৃতিতেই দাবি করেছে, দ্রুত এপিক নম্বরের ভুল সংশোধন করা হবে। জানানো হয়েছে এরোনেট নামে যে প্ল্যাটফর্মটিতে তথ্য তোলা হচ্ছিল তার বদলে এবার আনা হবে এরোনেট-২। রাতারাতি এই প্ল্যাটফর্ম বদলের সিদ্ধান্ত নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। নতুন প্ল্যাটফর্ম আদৌ কতটা নির্ভুল হবে, সেই প্রশ্ন যেমন থাকছে। তেমনই নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে নতুন কোনও কারচুপি হবে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা।
আরও পড়ুন-প্রয়াত আলতাফ, শোক মুখ্যমন্ত্রীর
এপিক কার্ডের ডুপ্লিকেট নম্বর দেখিয়ে বাংলার ন্যায্য ভোটারদের ভোট বাতিল করার যে চক্রান্ত বিজেপির কেন্দ্রীয় সরকার করেছিল, তার পর্দাফাঁস হতেই বাংলার নির্বাচনের আগে সাফাইয়ের ঝুড়ি নির্বাচন কমিশনের। প্রকাশিত বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, এপিক নম্বর নির্বিশেষে যে ভোটার যে কেন্দ্রের তালিকার অন্তর্ভুক্ত হবেন সেখানেই তাঁরা ভোট দিতে পারবেন। অর্থাৎ সেক্ষেত্রে এপিক নম্বর দেখা হবে না। তালিকাভুক্ত হলেই ভোটার নিজের এলাকায় ভোট দিতে পারবেন। সেখানেও বিতর্কের অবকাশ রেখে দিয়েছে কমিশন। লোকসভা নির্বাচনে যাঁরা ভোট দিতে পারেননি এপিক নম্বরের সমস্যায়, তাঁদের নাম তালিকা থেকে মুছে দেওয়ার প্রক্রিয়া চালানো হলে, তাঁরা কী বিধানসভা নির্বাচনে আদৌ অংশ নিতে পারবেন, এই প্রশ্নও তৈরি হয়েছে।