অমিতকুমার দাস: ইজরায়েলের মাটিতে হামাস জঙ্গিগোষ্ঠীর হামলা ও পরবর্তী প্রত্যাঘাতে ইজরায়েল ও গাজা ভূখণ্ডের কয়েক হাজার মানুষ অকালে প্রাণ হারিয়েছেন। হামাসের হামলার পর এখন ওই অঞ্চলে পুরোদস্তুর যুদ্ধের আবহ। গাজা ভূখণ্ড থেকে ইজরায়েলের জনপদ লক্ষ্য করে অন্তত ৫০০০-এর বেশি রকেট ছোঁড়ার পাশাপাশি স্থলপথে, জলপথে, আকাশপথে সমান্তরাল হামলা চালিয়েছে হামাস। আকস্মিক ভয়াবহ এই হামলায় কেঁপে উঠেছে গোটা বিশ্ব। ইজরায়েলের পক্ষ থেকে হামাসের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু কারা এই হামাস? ইজরায়েল সহ বিশ্বের একাধিক দেশ এদের জঙ্গি গোষ্ঠীর তকমা দিলেও প্যালেস্টাইনের মানুষের কাছেই আবার এই সংগঠন তাদের মুক্তিদাতা।
আরও পড়ুন-মোদিজি, বড্ড খিদে পাচ্ছে যে!
ইজরায়েলে সাম্প্রতিক হামলার কারণ হিসেবে হামাসের সামরিক কমান্ডার মহম্মদ দেইফ জানিয়েছেন, আল-আকসা মসজিদকে রক্ষা করতেই ইজরায়েলি ভূখণ্ডে হামলা শুরু করা হয়েছে। মুসলিমদের অন্যতম পবিত্র মসজিদ এই আল আকসা। কিছু দিন আগেই এই মসজিদে হামলা চালিয়েছিল ইজরায়েলি দখলদাররা। বস্তুত, বরাবরই প্যালেস্টাইন-ইজরায়েল দ্বন্দ্বের কেন্দ্রে রয়েছে এই আল আকসা মসজিদ। ইজরায়েলিদের দাবি, ইহুদিদের পবিত্র মন্দির ধ্বংস করেই এই মসজিদ স্থাপন করা হয়েছিল। গত ৭ অক্টোবরের হামলার পর হামাস কমান্ডার দেইফ জানিয়েছেন, জেরুজালেমে আল-আকসা মসজিদকে অপবিত্র করেছে ইজরায়লি দখলদাররা। তারই প্রতিশোধ হিসেবে এই হামলা চালানো হয়েছে।
আরও পড়ুন-১১১ বর্ষে সিকদারবাগানের পুজোর ভাবনা শুদ্ধ সূচি
ইজরায়েল ও হামাসের এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে দুই দেশের পক্ষ ও বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে একাধিক দেশ। হামাস গোষ্ঠীকে প্রথম থেকেই সমর্থন করে ইরান, সিরিয়া এবং ইয়েমেন। হামলার পর হামাস গোষ্ঠীর পক্ষে বিবৃতি দিয়ে ইরান জানিয়েছে, এই হামলা দখলকারীদের বিরুদ্ধে প্যালেস্টাইনি জনগণের প্রতিরোধ। হামলার পর, এই পরিস্থিতির জন্য ইজরায়েলকেই দায়ী করেছে কাতার। আরব লিগ এবং জর্ডনও বর্তমান সংঘাতের জন্য ইজরায়েলের নীতিকেই দায়ী করেছে। মরক্কো এবং সৌদি আরবও, ইজরায়েলকে সংযম রক্ষার আহ্বান জানিয়েছে। অন্যদিকে, ইজরায়েল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ব্রিটেন, কানাডা, মিশর এবং জাপান-সহ বেশ কয়েকটি দেশ হামাসকে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী হিসেবে গণ্য করে। এবং সাম্প্রতিক সময়ে তারা ইজরায়েলের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। হামাসকে জঙ্গিগোষ্ঠী আখ্যা দিয়ে ইজরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছে ভারতও। ইজরায়েলকে সামরিক সাহায্য ঘোষণা করেছে আমেরিকা।
আরও পড়ুন-গুজরাতে পিটিয়ে খুন বাংলার দুই শ্রমিককে, গ্রেফতার শূন্য
উল্লেখ্য, প্যালেস্টাইনের উগ্রপন্থী সংগঠন হামাস ২০০৭ সাল থেকে গাজা ভূখণ্ডের শাসনকর্তা। ১৯৮৭ সালে ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক এবং গাজা ভূখণ্ডে ইজরায়েলি দখলদারির বিরুদ্ধে যে প্যালেস্টাইনি আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সেই আন্দোলন থেকেই জন্ম নিয়েছিল হামাস গোষ্ঠী। ১৯৮৭ সালে আহমেদ ইয়াসিন এবং আবদেল আজিজ আল-রান্টিসি, মিশরীয় সংগঠন ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’-এর শাখা হিসেবে এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ২০০৭-এ, ৩৮ বছর পর গাজা ভূখণ্ড থেকে মিশরের দখলদারি উঠে যাওয়ার পর, সংসদীয় নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল হামাস। তারা সরকার গঠন করলেও, হিংসার পথ ছাড়বে না বলে জানিয়েছিল। ইজরায়েল রাষ্ট্রকেও স্বীকৃতি দেয়নি তারা। গোষ্ঠীর প্রধান লক্ষ্য হল প্যালেস্টাইনের স্বাধীনতা এবং ইসরায়েল, ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক এবং গাজা ভূখণ্ডের বিস্তৃত এলাকা জুড়ে একটি ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। এর জন্য ইজরায়েল রাষ্ট্রের ধ্বংস চায় হামাস।