প্রতিবেদন : দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবিরকে সাসপেন্ড করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। আর তার কয়েক ঘণ্টা পরেই বহরমপুরের সভা থেকে নাম না-করে কড়া বার্তা দিলেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, একটা ধান পচে গেলে সরিয়ে দিতে হয়! না-হলে বাকিগুলোও পচে যায়। নেত্রী বলেন, সব ধর্মেই কিছু গদ্দার থাকে। তিনি মিরজাফরের বেইমানির কাহিনিও শোনান। বললেন, শাকের বান্ডিলে একটা পচা থাকলে সেটা ফেলে দিন। একটা ধান পচে গেলে সরিয়ে দিতে হয়। নাহলে বাকিগুলো পচে যায়। কিছু পোকামাকড় থাকবেই। তাদের সরিয়ে দিলে দেশ, রাজ্য চলবে, সব চলবে। তাঁর সংযোজন, নির্বাচনের আগে কেউ কেউ টাকা খেয়ে বিজেপির তাঁবেদারি করে। ব্ল্যাকমেল করে। ওরা দেশের শত্রু। বিজেপির পাল্লায় পড়ে টাকা খেয়ে নির্বাচনের ২ মাস আগে থেকে এই সব রাজনীতি করে।
আরও পড়ুন-বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু ১০ ডিসেম্বর
তিনি এও স্পষ্ট করে দেন, এসব করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ক্ষুণ্ণ করা যাবে না। মুর্শিদাবাদ অশান্তি চায় না। নিজের মন্তব্যে মমতা বুঝিয়ে দিলেন, হুমায়ুনকে সাসপেন্ডের কোনও প্রভাব পড়বে না আসন্ন নির্বাচনে। তৃণমূল সুপ্রিমোর স্পষ্ট বার্তা, আমরা সব ধর্মকে সম্মান জানাই। আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে রক্ষা করতে চাই। সংবিধান আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করতে শিখিয়েছে৷ বাংলার মাটি স্বাধীনতা আন্দোলন করেছে। সাম্প্রদায়িকতা বরদাস্ত করব না।
আরও পড়ুন-”কথা দিলে কথা রাখি”, কেন নিজের এনুমারেশন ফর্ম ফিল আপ করেননি মুখ্যমন্ত্রী
বৃহস্পতিবার সকালে তৃণমূল ভবনে মন্ত্রী আখরুজ্জামান ও বিধায়ক নিয়ামত শেখকে পাশে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম হুমায়ুনকে সাসপেন্ডের কথা ঘোষণা করেন। বলেন, দল হুমায়ুনের সঙ্গে কোনওরকম সম্পর্ক রাখবে না। ঘটনাচক্রে দল এই সিদ্ধান্ত ঘোষণার সময় বহরমপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাস্থলেই ছিলেন হুমায়ুন। বিষয়টা জানামাত্রই সভাস্থল ছাড়েন তিনি। সম্প্রতি হুমায়ুন কবিরের বেলডাঙায় বাবরি মসজিদ তৈরি-সংক্রান্ত মন্তব্যে নতুন করে বিতর্ক দানা বাঁধে। তার জেরেই কড়া পদক্ষেপ নিল দল। ফিরহাদ প্রশ্ন তোলেন, কেউ কোথাও নিজের টাকায় মসজিদ করতেই পারেন। দলের বিধায়ক সংহতি দিবসের তারিখ শিলান্যাসের জন্য কেন বেছে নিলেন? আপনি তো স্কুল-কলেজও করতে পারতেন? বাবরি মসজিদ কেন? মানুষকে ধর্মান্ধ করে রাখতে চাইছেন? পাশাপাশি ফিরহাদ অভিযোগ করেন, বাংলায় দাঙ্গা পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছেন হুমায়ুন। তাঁর কথায়, বাবরি মসজিদ করার কথা বলে বাবরি ধ্বংসের স্মৃতি উসকে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে ওঁর। আমরা মনে করি এর পিছনে বিজেপি রয়েছে। ওরা হুমায়ুনকে সামনে রেখে হিন্দু-মুসলিম বিভাজনের রাজনীতি করছে। এদিন ওয়াকফ প্রসঙ্গও উঠে এসেছে ফিরহাদের বক্তব্যে। কিছুমাস আগে এই ইস্যুতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল মুর্শিদাবাদের একাধিক এলাকা। সেই কথা টেনে হুমায়ুনকে বিঁধে ফিরহাদ বলেন, উনি থাকেন রেজিনগরে, বিধায়ক ভরতপুরের— তাহলে বেলডাঙায় কেন মসজিদ করবেন! কারণ ওখানে কিছু মাস আগেও অশান্তি তৈরির চেষ্টা করেছিল বিজেপি। উনি সেটাকে উসকে দিতে চাইছেন।

