আমরা অখণ্ড পশ্চিমবাংলাকে যেকোনও মূল্যে রক্ষা করব, বিধানসভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত, বিজেপির দ্বিমুখী রণকৌশল ব্যর্থ

এই মহতি সদন অবিভক্ত পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নে অঙ্গীকারবদ্ধ। এই দিনটি পাকাপাকিভাবে রাজ্য রাজনীতির ইতিহাসে জায়গা করে নিল।

Must read

প্রতিবেদন : ঐক্যবদ্ধ বাংলা ছিল, আছে, থাকবে। কোনওভাবেই বাংলাকে ভাগ করতে দেব না। যেকোনও মূল্যে একে রক্ষা করব। বাংলার উন্নয়নই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। সোমবার বিধানসভায় বঙ্গভঙ্গ বিরোধী প্রস্তাব নিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন তৃণমূলের দুরন্ত চালে বিধানসভায় কুপোকাত হল বিজেপি। ব্যর্থ হল তাদের দ্বিমুখী রণকৌশল। কোনওরকম ভোটাভুটি ছাড়াই সর্বসম্মতিতে বিধানসভায় পাশ হয়ে গেল তৃণমূলের আনা বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী প্রস্তাব। সেখানে লেখা হল, আমরা অখণ্ড পশ্চিমবাংলাকে যেকোনও মূল্যে রক্ষা করব। আমরা বিভাজন চাই না।

আরও পড়ুন-পদত্যাগ করে দেশ ছাড়লেন হাসিনা, আপাতত দিল্লিতে, লন্ডন যেতে বাধা

এই মহতি সদন অবিভক্ত পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নে অঙ্গীকারবদ্ধ। এই দিনটি পাকাপাকিভাবে রাজ্য রাজনীতির ইতিহাসে জায়গা করে নিল। তৃণমূলের সোচ্চার দাবি মেনে অখণ্ড বাংলার সপক্ষে সমর্থন জানাতে বাধ্য হল গদ্দার-সহ বিজেপিও। বঙ্গভঙ্গ নিয়ে তাদের দ্বিচারিতার সলিল সমাধি হল। এদিনের পর বাংলা ভাগের কথা বললেই মুখ পুড়বে তাদের।
সোমবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী গুরুত্ব দিলেন বিরোধী মতামতকেও। বক্তব্য রাখতে উঠে পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে অনুরোধ করলেন বিরোধী দলনেতার দেওয়া অখণ্ড বাংলার লাইন প্রস্তাবে যুক্ত করতে। তা করাও হল। এদিন তৃণমূলের কৌশলের কাছে নতজানু হওয়া ছাড়া কিছুই করার ছিল না বিজেপির। সম্মতি প্রস্তাবে লেখা হয়, আমরা অখণ্ড পশ্চিমবাংলাকে যেকোনও মূল্যে রক্ষা করব। আমরা বিভাজন চাই না। এই মহতি সদন অবিভক্ত পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নে অঙ্গীকারবদ্ধ। প্রস্তাবে সই করেন পরিষদীয় মন্ত্রী ও বিরোধী দলনেতা।

আরও পড়ুন-অনির্বাচিত সরকার কীভাবে দেশ চালাবে, প্রশ্ন সজীবের

সোমবার বিধানসভায় প্রস্তাব পেশ করেন রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। নাম না করে তিনি কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী তথা বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে আক্রমণ করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমি যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোয় বিশ্বাসী। কেন্দ্র যেমন সহযোগিতা করবে, তেমনই রাজ্য কেন্দ্রকে সহযোগিতা করবে। তাঁর সংযোজন, নর্থ ইস্টার্ন কাউন্সিলে যাবে কেন? পাহাড়ি রাজ্যগুলিকে সাহায্য করে। সিকিম আছে। সেখানে বাংলার গাড়ি না ঢুকলে সিকিম বন্ধ হয়ে যাবে। বৃহত্তর স্বার্থে বাংলা এক থাকা দরকার। উত্তরবঙ্গকে টাকার অঙ্কে মাপবেন না। এক লক্ষ ৬৭ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছি। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, বিভাজন করা আমার উদ্দেশ্য নয়। গাল দেওয়া উদ্দেশ্য নয়। আমি যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোয় বিশ্বাসী। রাজ্য শক্তিশালী হলে তবেই কেন্দ্র শক্তিশালী হবে। নীতি আয়োগের বৈঠকে গঠনমূলক প্রস্তাব দিয়েছিলাম। আর দু’মিনিট বলতে দিত! আমি নীতি আয়োগের বিরোধী নয়। কিন্তু ওদের কিছু করার নেই। মুখ্যমন্ত্রী যোগ করেন, পরিকাঠামো উন্নয়নে বাংলা এগিয়ে আছে। একশো দিনের টাকা, রাস্তার টাকা, স্কুলের টাকা, জলের টাকা, আবাসের টাকা বাংলা পাক চান মমতা। একই সঙ্গে তিনি জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়নের কাজ অনেক জায়গায় আটকে। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে বিষয়টি দেখতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, আমাদের বিধায়করা দুটো করে স্কুল বেছে নিয়ে যদি উন্নয়ন করে, তাহলে ভাল হবে। এছাড়া আমাদের রাজ্যসভার সাংসদদের ফান্ডের ৭৫ শতাংশ টাকা দেব। শিক্ষা দফতরও দেবে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, আমাদের জিডিপি বেড়েছে। গরিবি কমেছে। মুখ্যমন্ত্রী জেলা ভাগ প্রসঙ্গে বলেন, প্রশাসনের কাজের সুবিধার জন্য জেলা ভাগ হয়েছে। দুই মেদিনীপুর, আলিপুরদুয়ার, কালিম্পং— এগুলি ভাগ হয়েছে। একটা ঘটনা ঘটলে যাতে পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারে।
পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্যও অনলাইনে অ্যাপ তৈরি করেছে রাজ্য সরকার। ২৮ লক্ষ নাম আছে। সমস্যায় পড়লে সাহায্য করি। কিন্তু এক কোটি পরিযায়ী শ্রমিক বাংলার বাইরে থাকলেও তাঁরা এখানকার সব সুবিধে পান। স্পষ্ট জানান মুখ্যমন্ত্রী।

Latest article