কাল ৫ই সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস। সেই উপলক্ষে, আজ, বৃহস্পতিবার শিক্ষক দিবস উপলক্ষে ধনধান্যে স্টেডিয়ামে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য রাজ্য সরকারের তরফে শিক্ষারত্ন সম্মানের পাশাপাশি এদিন মুখ্যমন্ত্রী সুপ্রিম কোর্টে বাতিল হওয়া চাকরিহারাদের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন। যাঁদের নাম কালো তালিকায় রয়েছে, তাঁরা আর নতুন করে পরীক্ষায় বসতে পারবেন না। এই প্রসঙ্গেই তিনি বলেন, ‘’১০ বছর শিক্ষক হিসাবে কাজ করার পরেও যাঁদের আজ অযোগ্য বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়েছে, আমরা তাঁদের নিয়ে আইনত আলোচনা করছি। আইনি পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী হয়তো তাঁরা আর শিক্ষক হতে পারবেন না, কিন্তু তাঁরা যাতে অন্তত গ্রুপ সি-র চাকরি পান, তার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি। তাঁদের হতাশ হতে বারণ করব। কারণ, আমাদের সরকার মানবিক সরকার। আমরা রাজনীতি দেখে কাজ করি না, মানুষের কথা ভেবে কাজ করি। আজ শিক্ষকদিবসের প্রাক্কালে সব শিক্ষকদের অন্তরের অন্তস্তল থেকে শুভকামনা জানাচ্ছি।’’
আরও পড়ুন-বাবা-মাকে খুনের পর আত্মহত্যার চেষ্টা পুলিশকর্মী ছেলের! চাঞ্চল্য এলাকায়
এরপরেই বিরোধীদের তোপ দেগে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমাদের শিক্ষক পদে এখনও মোট ৫৬ হাজার শূন্যপদ রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫,৭২৬টি পদের জন্য বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়েছে। আরও ২১ হাজার পদ খালি রয়েছে। আমরা নিয়োগ করতে চাই। কিন্তু আইনের জটিলতায় হচ্ছে না। যাঁরা আইনকে বেলাইন করে দিয়েছেন, তাঁদের জন্য হচ্ছে। আদালতকে দোষ দেব না। আমাদেরই মধ্যে কিছু কিছু লোক আছে, তাঁদের জন্য এমন হচ্ছে। কত লোকের ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে গেল। আমরা নিয়োগ করতে গেলেই কেউ না কেউ কোর্টে গিয়ে স্টে করিয়ে দেয়। এক সেকেন্ডে স্টে হয়ে যায়, অথচ হাজার হাজার মানুষের ভবিষ্যৎ ঝুলে যায়। চাকরি হারানো মানুষগুলোর জন্য আমার খারাপ লাগে। আপনারা কী ভাবছেন, আমি এতে খুশি? না, একেবারেই না। যাঁরা চাকরি করতেন, যাঁরা ‘আনটেন্টেড’, তাঁদের জন্য আমরা ইতিমধ্যেই ভাবছি। তাঁদের কথা ভেবেই বয়সসীমা বৃদ্ধির কথা ভাবা হয়েছে। আমাদের হাত-পা বাঁধা। কিন্তু আমরা তাঁদের সুযোগ দিচ্ছি, যাতে তাঁরা পরীক্ষা দিয়ে চাকরিতে ফিরতে পারেন।’’
আরও পড়ুন-শিক্ষক দিবসে ৭৩ শিক্ষককে শিক্ষারত্ন পুরস্কার, সেরার তালিকায় এগিয়ে রামকৃষ্ণ মিশন
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের নিয়োগ প্যানেল সুপ্রিম কোর্টে বাতিল হওয়ার পর আদালতের নির্দেশে ‘যোগ্য’, ‘অযোগ্য’ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। আগামী ৭ ও ১৪ সেপ্টেম্বর নতুন করে শিক্ষক নিয়োগের জন্য পরীক্ষা নেওয়া হবে। ‘দাগি’র তালিকায় থাকা ১৮০৬ জন যদিও এই পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন না। তবে তাঁদের পাশে এদিন আইনিভাবে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ”আমরা তাঁদের জন্য আইনজীবীদের পরামর্শ নিচ্ছি। কিছু একটা ব্যবস্থার চেষ্টা করা হচ্ছে। কেউ ভাববেন না, আমাদের সরকার মানবিক। নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার চেষ্টা চলছে। আগামী দু’-তিন মাসের মধ্যে সেই কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি। তার পরেই গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি নিয়োগ শুরু হবে”
উল্লেখ্য, এদিন শিক্ষারত্ন পাওয়া শিক্ষকদের মধ্যে ৩৯ জন স্কুলের শিক্ষকশিক্ষিকা, ২১ জন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং ১৩ জন ভোকেশনাল এবং অন্যান্য আইআইটি বিষয়ক শিক্ষক। সমস্ত বোর্ড মিলিয়ে এদিন মোট ৩৮৭জন কৃতী ছাত্রছাত্রীকে পুরস্কৃত করা হয়েছে স্টেডিয়ামে।