প্রাথমিক শিক্ষায় (Primary education- West Bengal) দেশে সেরার শিরোপা বাংলার মুকুটে। খোদ প্রধানমন্ত্রীর দফতরের অধীন ইকোনমিক অ্যাডভাইসরি কাউন্সিলের রিপোর্ট অনুযায়ী ৫৪.৫৮ স্কোর করে বুনিয়াদি পাঠে বাকি সব রাজ্যকে পিছনে ফেলে দিয়েছে বাংলা। এ-বড় আনন্দের খবর। বড় গর্বের।
দশ বছরের কম বয়সি পড়ুয়া অর্থাৎ শিশুর প্রথম পাঠদানের শিক্ষা সবথেকে কঠিন একটি কাজের ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে বাংলার শিক্ষককুলের ধন্যবাদ প্রাপ্য। তাদের ধৈর্য, শাসন, আদরেই এরা সামাজিকতারও প্রথম পাঠ নেয়। এখানেই ভবিষ্যতের বীজ রোপণ করা হয় যা একদিন মহীরুহে পরিণত হবে। এদের সেই পরিশ্রমের ফলাফলকে কুর্নিশ।
সেই সঙ্গে ধন্যবাদ প্রাপ্য পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষাদপ্তর তথা সরকারের। কারণ এদেরই ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এই সাফল্য অর্জন করেছে বাংলা (Primary education- West Bengal)। এগারো সালের পর বাংলার শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন হয়েছে। সব ছাত্রছাত্রীকে বই, খাতা, ব্যাগের সঙ্গে সঙ্গে স্কুলের ইউনিফর্ম ও জুতোও দেওয়া হয়। মিড-ডে মিলের মানোন্নয়ন হয়েছে। সরকারের এইসব পদক্ষেপের জন্য এখন বাচ্চারা সবাই স্কুলমুখী। এটা সত্যিই অভূতপূর্ব একটা কর্মকাণ্ড যা দেশের মধ্যে একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারই করে চলেছে নিরন্তর।
এই আনন্দের মধ্যেও অত্যন্ত গর্হিত অপরাধের মতো রোজ একটু একটু করে বিষ প্রয়োগ করার মতো আজ এমন একটি সময়ে আমরা দাঁড়িয়ে আছি যখন একদিকে বাংলা এই অসামান্য সম্মান পাচ্ছে আর অন্যদিকে শিক্ষা দপ্তরের দুর্নীতির অভিযোগে একের পর এক মামলায় বহু শিক্ষকদের রাতারাতি চাকরি চলে যাচ্ছে। কী অদ্ভুত না?
অদ্ভুত তো বটেই। না হলে আমাদের এগিয়ে থাকা, সত্য দেখানো বিশাল লেজওয়ালা মিডিয়া হাউসের ওই নামমাত্র বলতে হয় তাই বলার মতো ব্রেকিং করে মোটামুটি ভুলিয়ে দিয়েছে এই অনন্য কীর্তির খবরটিকে।
যে-কারণে সেই একই লেবু চটকানো নিয়োগ দুর্নীতির খবরগুলোর মধ্যে একটা সন্ধেও কলকে পায় না বাংলারই শিক্ষা দপ্তরের অনন্য নজির গড়াকে নিয়ে কিছুটা আলোচনার। আসলে খামপ্রার্থী প্যানেলিস্টরা রাজনৈতিক মাইলেজ নেবার ও দেবার কুৎসিত খেলায় মেতেছেন। ফলে তাদের কাছে বাংলার মান-সম্মান গুরুত্বপূর্ণ নয়। বাংলার বদনাম করাই একমাত্র উদ্দেশ্য।
আরও পড়ুন: মেঘালয়, ত্রিপুরা ও নাগাল্যান্ড বিধানসভা নির্বাচনের ফল
এই মিডিয়া ও তাদের পোষিত কিছু স্বঘোষিত বুদ্ধিজীবী আদতে খামজীবীদের নিয়ে মাসের পর মাস একই খবর দেখানোর ফল সম্বন্ধে সামান্য ধারণা নেই যে যারা সত্যিকারের শিক্ষক যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আজ বাংলার শিক্ষাব্যবস্থা দেশের সেরা হল সেই শিক্ষককুলকে কতটা অপমানিত করা হচ্ছে!
অপমানিত, অসম্মানিত, ভালকে জোর জবরদস্তি খারাপ করার চতুর্থ স্তম্ভের যে বিবেচনা ও দায়িত্ববোধকে যদি কোনও সম্মান দেবার ব্যবস্থা করা যায় সেটাও সেরার সেরা হবে। এমন কপর্দকহীন সংবাদমাধ্যম আমি অতীতে দেখিনি। যাদের সারাদিনে অপছন্দের সরকারের বদনাম করা ছাড়া আর কোনও কাজ দেখি না। আর সেটা করতে গিয়ে কালি ছেটানো হচ্ছে জাতির মেরুদণ্ডের গায়ে সেটার সম্পূর্ণ দায়ভার কি অবলীলায় ঝেড়ে ফেলেছে!
একটা সময় ছিল যখন খবরের বিস্তারের দাপটে সমাজগঠনের যে বার্তা পাওয়া যেত, তার সম্পূর্ণ বিলুপ্তি ঘটায়, দুঃখ একটাই যে এই মিডিয়া নামক বাস্তুঘুঘুকে লোকজন ঘৃণা করতে শুরু করেছে। নিজের চোখে এটা দেখে আমার খুবই খারাপ লাগে।
এই সম্মান প্রাপ্তির একটি জিনিস আবার প্রমাণিত হল যে, খারাপ দিয়ে ভালর বিচার হয় না… বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের বাংলার সঙ্গে চূড়ান্ত অসহযোগিতা, প্রতিহিংসাপরায়ণ মনোভাব, অকারণে এজেন্সি দিয়ে ধরপাকড়, হেনস্থা, বদনাম করার পরও এই রেটিংস দিতে বাধ্য হয়েছে!
আসলে এ-বাংলা তো বিদ্যাসাগরের যাঁর বর্ণপরিচয় আমাদের লেখাপড়ার কাঠামোর ভিত। এ-বাংলা বঙ্কিম, রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, বিভূতিভূষণ, মানিকদের হাতের মণিমুক্তো ঝরানো লেখনীর। যা পড়ার ফলে শিশুকাল থেকেই আমরা বাঙালিরা বিকশিত হই তাই আজ এমন স্বীকৃতিতে উজ্জ্বল বাংলা।
যে কারণেই আমাদের মুখ্যমন্ত্রী প্রায়ই বলেন, মিথ্যে দিয়ে সত্যকে আড়াল করা যায় না অর্থাৎ নিজের কাজ করে যাও একদিন না একদিন ঠিক বাধ্য হবে স্বীকৃতি দিতে! ওঁর দূরদৃষ্টির তুলনা হয় না আজও!
তাই যতই কুৎসা হোক, কটূক্তি হোক হাজারো প্রতিকূলতার মধ্যেও যারা সমাজকল্যাণের লক্ষ্যে স্থির তারাই জয়যাত্রা লিখতে পারে জীবনের। প্রাথমিক শিক্ষায় বাংলার সেরা হওয়াটিও সেই কথাতেই সিলমোহর দিল। আর বাংলা যে চিরকালই সেরার সেরা তা তো কবি-সাহিত্যিকেরা যুগ যুগ ধরে বলেই আসছেন। তাই কবির কথায় এটাই বলতে মন চাইছে…
বাংলার মাটি, বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল—
পুণ্য হউক, পুণ্য হউক, পুণ্য হউক হে ভগবান॥