কলকাতা : তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বাবুল সুপ্রিয়র সাফ কথা, বিজেপিতে খেলার সুযোগ হারিয়েছিলাম। আমি সব সময় প্রথম একাদশে থাকতে চেয়েছি, খেলতে চেয়েছি। তৃণমূল কংগ্রেস সেই সুযোগ করে দেওয়ায় কৃতজ্ঞ। মাঠ জুড়ে খেলব এবার তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে। রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও ’ব্রায়েনকে ‘অনুঘটক’ আখ্যা দিয়ে বাবুল বলেন, মাত্র ৩-৪ দিনে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি থেকে কাজের সুযোগ। এই সুযোগটা আমি হারাতে চাইনি। সাংবাদিক সম্মেলনে সাংসদ সৌগত রায় ও ডেরেক ও ’ব্রায়েন ছিলেন। বর্ষীয়ান সৌগত রায় বলেন, সংসদে ওকে ৭ বছর ধরে দেখছি। বাঙালির কাছে ওর গ্রহণযোগ্যতা আছে। অভিষেকের সঙ্গে কথা হয়েছে। কী কাজ করবে, সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে।
আরও পড়ুন: জলমগ্ন পটাশপুর : ‘মাস্টার প্ল্যান’এর দাবি বিধায়ক উত্তম বারিকের
প্রসঙ্গ ভোটে জেতা
আসানসোলের প্রতি আমার একটা আলাদা অনুভূতি থাকবেই। হতে পারে প্রথমবার গায়ক হিসাবে ভোট দিয়েছিল। কিন্তু তারপর কাজ না করলে মানুষ জেতাত না। এখনও আসানসোল আবেগ থাকবে। আমি মনপ্রাণ দিয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছি। বাংলার শিল্প পুনরুজ্জীবনের জন্য সিনিয়র মন্ত্রীর গাড়িতে ঘুরেছি, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর জন্য মাঠে নেমেছি। বসে থাকিনি। ৭ বছর ধরে যা করেছি, সব প্রমাণ ক্যামেরায় তোলা আছে।
প্রসঙ্গ সমালোচনা
দল বদলেছি, সমালোচনা হবে জানতাম। আমার একটাই কথা, সমালোচনা হোক, কিন্তু অন্যের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাতে শেখা উচিত। তথাগত রায় মিরজাফর বলেছেন। সিনিয়র মানুষের ভাষার উপর নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত। শুধু মনে করিয়ে দিতে চাই, আমি কোনও ইতিহাস তৈরি করিনি। দলবদল এর আগে অনেকেই করেছেন। তুলনায় স্বপন দাশগুপ্ত বা শমীকদার কথাটা ভাল লেগেছে। শমীকদা বলেছেন, বাবুলকে আর যাই হোক দুর্নীতিগ্রস্ত বলা যাবে না। আর অনুপম হাজরা? কে ও? ওইরকম হাজার হাজার হাজরা আছে, যারা হাজরা মোড়ে ভিড় করে আছে। আমি বরং সেখানে গিয়ে কচুরি খাওয়া পছন্দ করব। সায়ন্তন প্রসঙ্গে বাবুল বলেন, ও আগে নিজের কেন্দ্রে জিতে দেখাক।
প্রসঙ্গ দিলীপ ঘোষ
উনি যে ভাষায় কথা বলছেন, সেটা বাংলা ভাষা নয়। দেখা হলে ওঁকে বর্ণপরিচয় উপহার দেব। আমি আবেগ নিয়ে রাজনীতি করেছি? আবেগ থাকলেই কোনও সিদ্ধান্ত ভুল হবে এমন মাথার দিব্যি কে দিয়েছে? কেউ কেউ কোথাও গেলে ক্যামেরা নিয়ে যান। ছবি তোলেন। ফিরে এসে দেখেন কিছুই ওঠেনি। আমি কোথাও গেলে ছবি তুলি, কিন্তু মনে। ফলে ডিলিট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। আমি শুধু বলি, কে আমায় পর্যটক বলল, তাতে আমার কিছু যায়-আসে না।
প্রসঙ্গ শুভেন্দু
ওঁর কি সমালোচনা করা সাজে? উনি তৃণমূল কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে গিয়েছেন। আমি বিজেপি থেকে তৃণমূল কংগ্রেসে এসেছি। উনি অন্যায় না করলে আমি কেন অন্যায় করলাম? শুভেন্দুর সঙ্গে আমার একটাই মিল, দু’জনেরই জন্মদিন ১৫/১২/৭০।
প্রসঙ্গ ভবানীপুর
হ্যাঁ, এটা ঘটনা, ভবানীপুরের বিজেপি প্রার্থী টিবরেওয়ালের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। বোনের মতো। ২০১৪ সাল থেকে আমার সব মামলা লড়ছেন। খুব লড়াকু মেয়ে। ফলে দিদির হয়ে ভবানীপুরে প্রচারে যাওয়ার বিড়ম্বনা আশা করি দল দেবে না। আর ভবানীপুরে ভোটে জেতার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাবুলকে লাগে না।
প্রসঙ্গ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ঝালমুড়ি খাওয়া প্রসঙ্গে বলেন, মোদিজির সঙ্গে অনুষ্ঠান ছিল। উনি বেরিয়ে যাওয়া পর্যন্ত আমরা দাঁড়িয়ে ছিলাম। দিদি বললেন, তুমি তো রাজভবন যাবে। আমার সঙ্গে চলো। একজন হেড অফ দ্য স্টেট বলছেন। যাওয়া উচিত। তাছাড়া বাংলার কয়েকটা প্রোজেক্ট ছিল। ওঁর সঙ্গে সেই ফাঁকে আলোচনা করাও যাবে জেনে খুশি হয়েছিলাম। যাওয়ার পথে ভিক্টোরিয়ায় থেমে গিয়ে ঝালমুড়ি খাওয়ার কথা বললেন। আমি ঝালমুড়ি ভালবাসি। তা সে যেখানেই হোক। তাছাড়া বাংলায় কাজের জন্য এই মুহূর্তে প্রয়োজনে বিজেপির সঙ্গে ধোকলাও খেতে পারি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী ২০২৪-এর ভোটের বিরোধী মুখ? বাবুলের জবাব, ২০১৪-তে মোদিজি ছিলেন। ২০২৪ -এ যে মমতাদিদি অন্যতম জনপ্রিয় মুখ, তা কি কেউ অস্বীকার করতে পারেন? ওনার সঙ্গে দু’বার ফোনে কথা হয়েছে। সোমবার সরাসরি কথা হবে। উনি বলেছেন, তুমি খুব মন দিয়ে কাজ করো, আর খুব ভাল ভাল গান করো। আমি যে গানের সুযোগ আবার ফিরে পাচ্ছি, এটা ভেবে আনন্দ হচ্ছে।