➡️ ছোটোবেলা কেমন কেটেছে ? তখন থেকেই কি বাড়িতে রাজনৈতিক পরিবেশ ছিল ?
▶️ছোটবেলা খুব আদরে ,আবদারে কেটেছে। এখনও বাবা মা এখনও আমাকে ছোটই মনে করে । বাড়িতে রাজনৈতিক আবহ ছোট থেকেই দেখেছি। আমি যখন ক্লাস থ্রি তে তখন প্রথম কাউন্সিলর ইলেকশন হয়। আমার বাবা বর্তমানে তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক দেবাশিস কুমার তখন কাউন্সিলর হন।আমার দাদু সক্রিয় রাজনীতি করতেন।আবার মায়ের দিকটা ছিল পুরো অ্যাকিডেমিক লাইন।
➡️ এরকম একটা পরিবারে থেকে এই প্রফেশনে আসতে কোনও বাধা পেয়েছিলে?
▶️ ক্লাস টুয়েলভে পড়ার সময় প্রথম সিরিয়ালের অফার পাই কিন্তু বাবা করতে দেননি। বলেছিলেন পড়া শেষ না করে অন্য কিছু করা যাবে না। আমার স্কুলিং কারমেল আর অশোক হল। কলেজ সেন্ট জেভিয়ার্স। তারপর নাচ নিয়ে রবীন্দ্রভারতী থেকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন শেষ করি। বাবা প্রথমে চাইতেন না আমি এই পেশায় আসি।তাঁর ইচ্ছে ছিল অ্যাকিডেমিক নিয়ে কেরিয়ার গড়ি। মায়ের খুব উৎসাহ ছিল।পরে অবশ্য বাবা বাধা দেননি।
আরও পড়ুন: ত্রিপুরা বিধানসভার স্পিকার পদ থেকে ইস্তফা বিজেপি নেতার
➡️ অভিনয়ের পাশাপাশি নাচে তোমার বিশেষ পরিচিতি। কবে থেকে শেখার শুরু?
▶️ একদম তিনবছর বয়সে আমার মা আর ঠাকুমার
ইচ্ছেতেই নাচ শেখা শুরু। তখন না বুঝেই নাচের সঙ্গে আমার পরিচয়। সেটাই একটা সময় ভালবাসা হয়ে যায়। প্রথম গুরু ভরতনাট্যমের অর্কদেব ভট্টাচার্য। কিন্তু আমার মণিপুরি নৃত্যের প্রতি ভাল লাগা ছিল তাই কলাবতী দেবীর কাছে মনিপুরি নাচ শিখতে শুরু করলাম। মনিপুরি শিখেছি টানা ষোল বছর। তারপর ওডিসি শিখেছি সুতপা তালুকদারের কাছে।এরপর রবীন্দ্রভারতীতে নাচ নিয়ে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন। এখন পিএইচ ডি করছি ।এই মুহূর্তে আমি রবীন্দ্রভারতীর ফ্যাকাল্টিও।
➡️ তোমার নিজের ডান্স অ্যাকাডেমি আছে।কবে থেকে নিজে শেখাচ্ছ?
▶️ আমার যখন আঠেরো বছর তখন আমি নিজের ডান্স অ্যাকাডেমি খুলেছি। আমার অ্যাকাডেমির নাম ‘লাই হারাওবা’। এটি মণিপুরী শব্দ যার অর্থ হল নাচ ও গানের মাধ্যমে ভগবানকে আনন্দ দান করা।এখন আমার অ্যাকাডেমিতে প্রায় একশোজন ছাত্রছাত্রী । বিদেশে প্রচুর পারফর্ম করেছি। প্রায় ২০১৩ থেকে যাচ্ছি নর্থ আমেরিকাতে বেঙ্গলি কনফারেন্স হয় এককভাবে এবং ট্রূপ নিয়ে সেখানে যোগদান করেছি।
➡️ প্রথমে মডেলিং তারপর অভিনয় এলে ?
▶️ হ্যাঁ, প্রথমে মডেলিং করেছি একটি নামী দৈনিক সংবাদপত্রে । প্রথম করলাম শিবপ্রসাদ নন্দিতার দির কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভালের জন্য তৈরিএকটি শর্ট ফিল্ম ‘জয়ী’। তারপর ‘প্রাক্তন ‘ এ কাজ করি । তারপর ‘চল কুন্তল’ ছবিতে লিড রোলে। এই ছবিতে সৌমিত্র (জ্যেঠুর) চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার প্রথম কাজ। খুব ভাল অভিজ্ঞতা হয়েছিল।এরপরে ‘আবার বসন্ত বিলাপ’ , ‘সমসারা’ , ‘মহালয়া’, ‘হামি ‘, ‘গোত্র’ , ‘শ্লীলতাহানির পরে ‘ ছবিতে কাজ করেছি । এছাড়া একটা শর্ট ফিল্ম করেছি জাপানি ভাষায় ‘ওকিয়া গাড়ি’ শমিক রায় চৌধুরীর করা।এই শর্ট ফিল্মটা বহু ফেস্টিভ্যালে গেছে।বার্লিনে অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে । ‘স্যাক্রেড স্কাই ‘ নামে একটি শর্ট ফিল্মে কাজ করেছি কান এ গিয়েছিল ছবিটা। লকডাউনের আগে ‘ইতি ভালবাসা ‘ বলে একটি ছবি রিলিজ করেছিল। এখন আপাতত তিনটে ছবি মুক্তির অপেক্ষায় ইন্দ্রজিৎ দাসের ‘আগন্তুক’ ,রাজর্ষি দের আবার ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ আর ‘মায়া’ ।পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে রিলিজ হবে আশারাখি। আমি একটা থিয়েটার করেছি সাহেব ভট্টাচার্যর সঙ্গে ‘যদি একবার’ বেহালা বাতায়ন গ্রুপের।খুব ভাল এক্সপেরিয়েন্স শিখেছি অনেক কিছু।
➡️ এখন নতুন কী কী কাজ করছ?
▶️ ‘ডান্স বাংলা ডান্স’ নিয়ে খুবই ব্যস্ত এই মুহুর্তে । জি ফাইভের একটা ছবির শুটিং শুরু হবে। অরিন্দমদার(অরিন্দম শীল) একটা ছবির কথাবার্তা চলছে। ওটাও শুরু হবে ।
➡️বাবা দেবাশিস কুমার একটা সময় কাউন্সিলর তারপর বিধায়ক। তাঁর পরিচিতি বা ইনফ্লুয়েন্স কতটা কাজে লেগেছে ?
▶️ বাবার ইনফ্লুয়েন্স পজিটিভের চেয়ে নেগেটিভ ভাবে কাজ করেছে অনেক বেশি। মানুষ ভেবেছে বাবা হয়ত হস্তক্ষেপ করবে আমার পেশায় । সেই ভয় অনেকেই কাজ দিতে চাইত না। বাবার ইনফ্লুয়েন্স থাকলে আজ প্রপার কমার্শিয়াল ছবির হিরোইনই হতে পারতাম ।কিন্তু সেটা হইনি। বাবা বলে দিয়েছিলেন এই পেশাটা সম্পর্কে আমি কিছু বুঝিনা ,তোমার চয়েস, তাই যা করার তোমাকে নিজেকেই করতে হবে। আমি শুধু গাইড করতে পারি কিন্তু কাউকে তোমার হয়ে বলতে পারব না।
➡️ এবছর নির্বাচনে বাবা দেবাশিস কুমারের সঙ্গে মঞ্চে দেখা গিয়েছে তোমাকে। নিজের বক্তব্য রেখেছ সেখানে। রাজনৈতিক মঞ্চে এত সাবলীল কীভাবে ?
▶️ আমি বহুবার বাবার ইলেকশন ক্যাম্পেনে গেছি। যখন কলেজে পড়ি তখন বাবার তৃতীয়বার কাউন্সিলর ইলেকশন চলছে । আমি বাবার সঙ্গে সেই সময় নির্বাচনী প্রচারে গেছি। বক্তৃতা দিয়েছি। অনেকেই জানেনা এটা। রবীন্দ্রভারতীতে এম এ পড়ার সময় ইলেকশনে দাড়িয়ে ছিলাম । ওই ইলেকশনে জিতেছিলাম এবং কালচারাল সেক্রেটারি হয়েছিলাম।
আরও পড়ুন: স্ট্রেস নেবে না, : ছাত্রছাত্রীদের পরামর্শ মমতার
➡️ রাজনীতিতে আসতে চাও ?
▶️ রাজনীতি আমার পছন্দের জায়গা । সক্রিয়ভাবে আমি আসার ইচ্ছে আছে কিন্তু এখনই না আমার মনে হয় আর একটু সময় দরকার।আরও পরিণত মন, বুদ্ধি বাবার মত ঠান্ডা মাথার দরকার। বাবাকে দেখেছি কখনও কারো সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে দেখা করেন না ।সব সময় বলেন আমি আছি যখন খুশি এস। এগুলো শেখার মত।আরো অনেক কিছু শেখা বাকি আছে আমার।