আবার বাংলার জন্য আর এক ‘স্বাধীনতার লড়াই’।
স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে চাপিয়ে দেওয়া এক স্বাধীনতার যুদ্ধ।
এই যুদ্ধে জিততে বাংলার মানুষকে ভোটযন্ত্রেই ভরসা রাখতে হবে। নান্য পন্থা বিদ্যতে অয়নায়।
আগামী ১ আগস্ট থেকে পশ্চিমবঙ্গে ১০০ দিনের কাজ শুরু করতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারকে এমনই নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। বুধবার। ২০১৬ সাল থেকে পরবর্তী ছ’বছরে রাজ্যের জন্য ১০০ দিনের কাজ প্রকল্প খাতে বরাদ্দ হয়েছিল ৫০ হাজার ৫৯৩ কোটি টাকা। যার মধ্যে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল মাত্র ৯.২০ কোটি টাকার কাজ নিয়ে। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। সমস্ত তথ্য নথি-সহ জমা পড়েছে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকে। তবু, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তার পরেও রাজ্যে এই প্রকল্পে চালু করেনি কেন্দ্র।
এমনকী, বাংলার হকের টাকা দিয়ে দেওয়া হচ্ছে অন্য রাজ্যকে। উত্তরপ্রদেশ এবং গুজরাতে এই প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম ধরা পড়েছে। কিন্তু তার দরুন ওইসব জায়গায় ক’টি কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল পাঠানো হয়েছে?
১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে রাজ্যে শেষ বরাদ্দ হয়েছে ২০২১-২২ আর্থিক বছরে। সেবার সংখ্যাটা ছিল ২৭ কোটি শ্রম দিবস। যার মধ্যে মজুরি বাবদ সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা কেন্দ্র দেয়নি। তার আগের বছর অর্থাৎ ২০২১-২১ অর্থবর্ষে বরাদ্দ হয়েছিল ৪১ কোটি শ্রম দিবস। ২০২২-২৩ থেকে ২০২৫-২৬ আর্থিক বছর পর্যন্ত অন্তত ১ লক্ষ থেকে ১.২০ লক্ষ শ্রম দিবস বাংলার জন্য বরাদ্দ হওয়ার কথা ছিল।
মনরেগার ৩৮ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে মোদি সরকার। এই খাতে ২০২২ সালের আগের ৬,৯১৯ কোটি টাকাও তারা দেয়নি। তার মধ্যে জবকার্ড হোল্ডারদের মজুরি ছিল ৩,৭৩১ কোটি টাকা। গরিবের সেই টাকা পরে রাজ্যই মিটিয়েছে। ওইসঙ্গে মনরেগার বরাদ্দ না-থাকায় মমতার সরকার বিকল্প হিসেবে চালু করে ‘কর্মশ্রী’ প্রকল্প। কেন্দ্রের সাম্প্রতিক রিপোর্টে প্রকাশ, শুধুমাত্র মহারাষ্ট্র, বিহার, উত্তরপ্রদেশ এবং তামিলনাডুতে এই খাতে ১৪২ কোটিরও বেশি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। অথচ, ওই রাজ্যগুলির টিকিও ছোঁয়নি দিল্লি, উল্টে তাদেরকেই বাড়তি অর্থ বরাদ্দ করেছে। বাংলার প্রাপ্য টাকাই তাদের পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। হিসেবটা পরিষ্কার, বিহার এবং তামিলনাড়ুতে বিধানসভা নির্বাচন অদূরেই। আর গুজরাত ও উত্তরপ্রদেশ হল বিজেপির ‘নিজের রাজ্য’। তাই বাংলার ‘সর্বনাশ’ দিয়ে ওই রাজ্যগুলিতে ‘পৌষমাস’ উপহার দেওয়া হয়েছে! উল্লেখ্য, ২০১৬ পরবর্তী ছ’বছরে রাজ্যের জন্য মনরেগায় বরাদ্দ করা হয়েছিল ৫০ হাজার ৫৯৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে মাত্র ৯ কোটি ২০ লক্ষ টাকার কাজ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। জানামাত্রই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। তারপরও বাংলার প্রাপ্য বরাদ্দ মেটানো হয়নি।
একটি নির্বাচিত ও সর্বাধিক জনপ্রিয় রাজ্য সরকারের প্রতি নয়াদিল্লির এই আচরণ একাধারে বিমাতৃসুলভ, অগণতান্ত্রিক এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার পরিপন্থী। কেন্দ্রীয় শাসকের স্বৈরতান্ত্রিক মনোবৃত্তির শিকার বাংলা অতীতেও বারবার হয়েছে। এজন্য সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গরিব মানুষ এবং উন্নয়ন। মোদিবাবুদের ‘পার্টি উইথ আ ডিফারেন্স’ এবং ‘সর্বকালের সেরা’ সরকার বিরোধী রাজ্যের সঙ্গে বৈরিতা বৃদ্ধি-সহ সবধরনের সঙ্কীর্ণতার খেলায় ‘চ্যাম্পিয়ন’— সর্বকালের সেরা। এমন চ্যাম্পিয়নশিপে জয়-পরাজয় নিয়ে তাদের কী স্বপ্ন এবং প্ল্যান আছে, তা জেনে বঙ্গবাসীর কোনও লাভ নেই। যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা অনুসারে বাংলা তার যাবতীয় অধিকার এবং প্রাপ্য বুঝে নিতে চায়। কোনও দুটি রঙের সরকারের লড়াই নয় এটি। এ বাংলার রুটিরুজি এবং মর্যাদার প্রশ্ন। মোদি সরকারকে এটা পরিষ্কার বুঝে নিতে হবে। না-হলে বাংলার সব ক্ষেত্র থেকে তাদের চিরবিদায়ের রাস্তাই পরিষ্কার করে দেবে বাংলার মানুষ নির্দয় হাতে।
এ-সবের মধ্যেই ‘ডাবল ইঞ্জিন’ রাজ্যে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর অত্যাচারের কাহিনি সামনে আসছে। বাংলায় কথা বলায় বাংলাদেশি সন্দেহে বাগদার দম্পতিকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল মুম্বই পুলিশ। অভিযোগ, সেখানে মহিলাকে একটি ঘরে আটকে রাখা হয়। প্রায় ১২ ঘণ্টা দেওয়া হয়নি জলও। তারপর ওই দম্পতিকে আরও অনেকের সঙ্গে তুলে দেওয়া হয় বিএসএফের হাতে। ভারতীয় পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বিএসএফ জোর করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয় বা পুশব্যাক করে বলে অভিযোগ। অবশেষে রাজ্য পরিযায়ী শ্রমিক ওয়েলফেয়ার বোর্ডের হস্তক্ষেপে দেশে ফেরেন বাগদার সেই দম্পতি ফজের মণ্ডল ও তসলিমা মণ্ডল। সোমবার রাতে রায়গঞ্জ পুলিসের পক্ষ থেকে দম্পতিকে পরিবারের সদস্যদের কাছে ফেরানো হয়। মঙ্গলবার বাগদার হরিহরপুরে নিজের বাড়িতে ফিরে মহারাষ্ট্রের পুলিসের অত্যাচারের কাহিনি শোনান ওই দম্পতি।
মাস ছ’য়েক আগে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে সস্ত্রীক মুম্বই পাড়ি দিয়েছিলেন ফজের। গত ১০ জুন বাংলাদেশি সন্দেহে তাঁদের আটক করে পুলিস। তাঁদের একটি ঘরে আটকে রাখা হয়। কয়েকজন মহিলার সঙ্গে ফজেরের স্ত্রী তসলিমাকে অন্য একটি ঘরে টানা ১২ ঘণ্টা কিছু খেতে না দিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছিল। এমনকী জল পর্যন্ত দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। কেড়ে নেওয়া হয় মোবাইল, টাকা, গয়না। নষ্ট করে দেওয়া হয় সব পরিচয়পত্র। তসলিমা বলছিলেন, ‘রাত ২টোর সময় তুলে নিয়ে যায় মুম্বই পুলিস। আমাকে আলাদা একটি ঘরে আটকে রাখে। অন্য কয়েকজনকে ছেড়ে দিলেও আমাদের জোর করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।’ মহারাষ্ট্র পুলিস বাংলাদেশি সন্দেহে ওঁদের বিএসএফের হাতে তুলে দেয়। ভারতের বৈধ পরিচয়পত্র দেওয়া সত্ত্বেও কোনও কথা শোনা হয়নি।
কী লাভ এসব করে?
কী লাভ বাংলাকে মারতে চেয়ে?
কী লাভ বঙ্গ বিজয়ের জন্য এত নোংরামি করে?
একুশে জুলাইকে সামনে রেখে তৃণমূল কংগ্রেস ছাব্বিশের জন্য বিরাট লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করতে চলেছে। তার সামনে রুগ্ন বঙ্গ বিজেপিরও হয়তো একটাই প্রার্থনা—মিরাকল অ্যান্ড ওনলি মিরাকল!
আরও পড়ুন-পশ্চিম এশিয়ায় মার্কিন যুদ্ধবিমান, তেহরানবাসীর এখন শহর ছাড়ার হিড়িক