এই উপনির্বাচন কী বার্তা দিয়ে গেল?

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও বিকল্প পশ্চিমবঙ্গে নেই। অযুত কুৎসা, অজস্র প্রতিবন্ধকতা, সেসব সত্ত্বেও জোড়া ফুলেই আস্থা বাংলার আপামর মানুষের। লিখছেন অনির্বাণ ধর

Must read

পশ্চিমবঙ্গে চারটি বিধানসভা কেন্দ্রের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। এই ফলাফল দুটি বিষয় স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিল।
এক, বাংলার রাজনীতি নিয়ে তথাকথিত ভোট বিশেষজ্ঞদের সমীক্ষা আর কলকাতার আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস এখন প্রায় সমান। কোনওটাই আর মেলে না।
দুই, এই রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও বিকল্প নেই।

আরও পড়ুন-হোর্ডিং নিয়ে একগুচ্ছ বিধিনিষেধ রাজ্যের

বাম জমানার শেষ সময়ে বাংলায় দিশা দেখিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু ২০২৬ সালের রাজ্যের বিধানসভা ভোটের আগে সেরকম কোনও পরিবর্তনের ইঙ্গিত কোথাও নেই। বরং দিন দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনভিত্তি আরও মজবুত হচ্ছে। দুর্নীতির ভুয়ো অভিযোগ উঠছে। চলছে লাগাতার কুৎসা। সংবাদ মাধ্যমের একাংশ মানুষকে বিভ্রান্ত করার খেলায় নেমেছে। কিন্তু বাংলার মানুষ তৃণমূল কংগ্রেসের উপরই ভরসা রাখছেন। কারণ, (১) এই মুহূর্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিকল্প কোনও দল বাংলায় নেই বললেই চলে। (২) বাংলার মানুষ আর যাই হোক ডবল ইঞ্জিন শাসিত রাজ্যগুলোর চেয়ে ভাল অবস্থায় আছেন। এবং (৩) এই রাজ্যে জননেত্রী একাধারে দায়িত্বশীল প্রশাসক ও গঠনমূলক দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন বিরোধী নেতার ভূমিকা পালন করছেন। নিট ফল, গদ্দার কুলের পোদ্দার অধিকারীর হাতে কেবল পেনসিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনমুখী পদক্ষেপের সৌজন্যে ফের ধরাশায়ী বাংলা বিরোধীরা। যার জেরে উপনির্বাচনের ৪-০ ফলাফল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আরও শক্তিশালী করে দিল।
প্রশাসন এবং দল দুটোই যেখানে যখন নড়েচড়ে যেতে বসেছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় শাসক এবং বিরোধী উভয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। দল ও সরকারের একাংশের কাজকর্মের সমালোচনা করতে কুণ্ঠিত হননি। বুঝিয়ে দিয়েছেন, বাংলার মানুষের স্বার্থ রক্ষার ক্ষেত্রে তাঁদের কোনও বিকল্প নেই। লোকসভা ভোটের পর থেকে গত প্রায় একমাস ধরে মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক বৈঠকে যেভাবে নিজের দলকেই বকাঝকা শুরু করেছিলেন, তাতে পুলিশ, আমলা, মন্ত্রীও বাদ পড়েননি। প্রকাশ্যে প্রশাসনের একাংশকে লোভী বলতেও দ্বিধা করেননি মুখ্যমন্ত্রী। ফলে মানুষ আরও বেশি করে বুঝেছে, মা-মাটি-মানুষের সরকার তাদের স্বার্থে আঘাত লাগতে দেবে না। মা-মাটি-মানুষের সরকার যেকোনও রকম বিচ্যুতি সংশোধনের বিষয়ে সতর্ক ও তৎপর। কোনও আপস তাঁরা করবেন না। এই জন্য আস্থার সুফল ফলেছে উপনির্বাচনের ফলাফলে।

আরও পড়ুন-ইসলামপুরে গুলিবিদ্ধ ২ তৃণমূল নেতা

এমনটা ঘটেছিল লোকসভা নির্বাচনের সময়ও। সেখানে সমীক্ষাগুলো (এক্সিট পোল) জানান দিচ্ছিল, একক ক্ষমতায় কেন্দ্রে বিজেপি আসছে এবং বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের পতন একপ্রকার অনিবার্য। কারণ, লোকসভা ভোটে বাংলা থেকে বিজেপি ২৫-২৬টি আসন পাবে এবং সেক্ষেত্রে দল ধরে রাখত পারবেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চরম সম্ভবনা বাংলার সরকার পড়ে যাওয়ার। ফলে লোকসভা ফলাফলের আগে চরম অনিশ্চয়তার আবহ ছড়িয়েছিল গোদি মিডিয়া।
একইভাবে গোটা আষাঢ় মাস শেষ হয়ে শ্রাবণ আসার পালা। কিন্তু কলকাতায় ফুটফুটে রোদ। বিক্ষিপ্ত বর্ষণ সত্ত্বেও বর্ষার প্রাদুর্ভাব কলকাতার আকাশে নেই।
ফলে দুই পূর্বাভাস সমান বলেই মনে করছেন বঙ্গবাসী। ফলাফল তৃণমূল কংগ্রেস আরও জনভিত্তি মজবুত করার দিকে আর বিজেপি শূন্য হওয়ার পথে ক্রমাগ্রসরমান। যদিও গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি বিরোধী দলের আসন দখল করতে পেরেছে। তবুও বেশ বোঝা যাচ্ছে, ২০২১ সালে বিজেপির একটা সাময়িক হাওয়া ছিল। কিন্তু বিজেপি বাংলার হাল ধরবে, এখনও পায়ের তলায় সেই জমি শক্ত হয়নি তাদের। নবান্ন এখনও বহুদূর। বাংলার মানুষ তাদের চালাকি ষড়যন্ত্র সব ধরে ফেলছেন। কেন্দ্রীয় এজেন্সি নির্ভর রাজনীতি আর কেন্দ্রীয় বাহিনী নির্ভর ভোট তাদের কোনও কাজেই আসছে না। লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের সাফল্য চার বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনেও অব্যাহত থাকার অনিবার্য ফলস্বরূপ ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচন পরবর্তী সময়ে তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। কখনও ধূপগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে জয়ী হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। কখনও আবার বিজেপির একাধিক বিধায়ক শামিল হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসে। শনিবার বিজেপির হাতে থাকা তিনটি বিধানসভা ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। কলকাতার মানিকতলা বিধানসভা আগেও তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে ছিল। তবে একুশের নির্বাচনে বাগদা, রানাঘাট দক্ষিণ এবং রায়গঞ্জ বিধানসভায় জয়ী হয়েছিল বিজেপি। উপনির্বাচনে তিনটি জায়গাতেই তারা পরাজিত হয়েছে। বর্তমানে তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক সংখ্যা সরকারিভাবে ২১৫। নির্দল বিধায়ক রুদেন সাদা লেপচা তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে রয়েছেন। পাশাপাশি, একাধিক বিধায়ক রয়েছেন, যাঁরা বিজেপি ও কংগ্রেসের হয়ে জিতলেও পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বের ধারায় শামিল হয়েছেন। এই তালিকায় আছেন মুকুল রায়, তন্ময় ঘোষ, সুমন কাঞ্জিলাল, বায়রন বিশ্বাস, হরকালি প্রতিহার। অর্থাৎ নির্দল ও শিবির বদলকারীদের ধরলে তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক সংখ্যা এখন ২২১।

আরও পড়ুন-কোলের সন্তানকে আছাড় মেরে খুন করে আত্মঘাতী বাবা

এখন বিধায়কদের মধ্যে প্রবীণতম হলেন ইসলামপুরের আব্দুল করিম চৌধুরী। তিনি ১০ বারের বেশি বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে দশবারের নির্বাচিত বিধায়ক ছিলেন রেজ্জাক মোল্লা। এখন তিনি বিধায়ক নন। বর্তমান যাঁরা বিধায়ক রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় আটবারের বিধায়ক। পাশাপাশি, বিধানসভায় সর্বকনিষ্ঠ বিধায়ক হিসেবে পা রাখতে চলেছেন বাগদার উপনির্বাচনে জয়ী তৃণমূল কংগ্রেসের মধুপর্ণা ঠাকুর। তাঁর বয়স মাত্র ২৫ বছর। নবীন-প্রবীণের মেলবন্ধনে আরও এগিয়ে যাবে রাজ্যের উন্নয়ন। সব মিলিয়ে, এই উপনির্বাচনের ফলাফল এই বার্তাই দিয়ে গেল।

Latest article