আওয়ামি লিগকে বাদ দেওয়ার পর ভোটের আগে কী অবস্থা বাংলাদেশের রাজনীতিতে?

সম্ভাব্য নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, ততই হাসিনা-বিরোধী বিএনপি, জামাত এবং নবজাত এনসিপির মধ্যে ফাটল চওড়া এবং গভীর হচ্ছে।

Must read

ঢাকা : আওয়ামি লিগকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের নির্বাচন করার ব্যাপারে বিরোধীদের কোনও মতানৈক্য না থাকলেও, নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ থেকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্রে যে সব রাজনৈতিক শক্তি হাতে হাত মিলিয়েছিল, প্রবল অন্তর্কলহে এখন তারা নিজেরাই কার্যত ছিন্নভিন্ন। দেশের অন্তর্বর্তী প্রধান মহম্মদ ইউনুস ক্ষমতার মধুভাণ্ড অনির্দিষ্টকালের জন্য কুক্ষিগত রাখতে মরিয়া। তাই ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন করানোর দাবি খারিজ করে ফেব্রুয়ারিতে তা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। ইউনুসের ইচ্ছে এবং নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা মতো বাংলাদেশে যদি ফেব্রুয়ারি নাগাদ আদৌ নির্বাচন হয়, সেক্ষেত্রে নির্বাচনী সমীকরণ শেষপর্যন্ত ঠিক কী হবে তা নিয়ে এখনই তৈরি হয়েছে গভীর অনিশ্চয়তা। সম্ভাব্য নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, ততই হাসিনা-বিরোধী বিএনপি, জামাত এবং নবজাত এনসিপির মধ্যে ফাটল চওড়া এবং গভীর হচ্ছে। নানা ইস্যুতে নিজেদের মধ্যে সংঘাতে জড়াচ্ছেন আওয়ামি লিগের বিরোধী রাজনীতিকেরা।

আরও পড়ুন-এলআইসির গোপন পরিকল্পনা নিয়ে তথ্য ফাঁস করল ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’

সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হল, জুলাই গণ অভ্যুত্থানের প্রথম সারির সমন্বয়কদের নিয়ে তৈরি নয়া রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি এখনও পায়ের তলায় মাটি খুঁজে না পেলেও বিএনপি এবং জামায়েতে ইসলামির রাজনৈতিক বলয়ের বাইরে রাখতে চাইছে নিজেদের। খালেদা জিয়ার দল এবং জামাত থেকে সমদূরত্ব বজায় রেখে এর বাইরের তরুণ প্রজন্মের দলগুলিকে নিয়ে আলাদা জোট গড়ে নির্বাচনে নামতে চাইছে। ৯টি দল নিয়ে এই জোট তৈরির ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা চালাচ্ছে তারা। গণঅধিকার পরিষদ, আমার বাংলাদেশ পার্টি, গণতান্ত্রিক মঞ্চের নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ভাসানী জনশক্তি পার্টি এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে ক্রমশ কাছাকাছি আসছে এনসিপির নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, হাসনাত আবদাল্লাদের। কিন্তু মজার বিষয় হল, এই দলগুলির অস্তিত্বই এখনও অনেকের কাছেই অজানা। সবচেয়ে অবাক করা বিষয়, জুলাই সনদে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করেছে খোদ আন্দোলনকারী ছাত্র-যুবদের গঠিত এনসিপি।

আরও পড়ুন-অনেক স্মৃতি, জানি না আর আসব কিনা

এদিকে হাসিনা-বিরোধী আন্দোলনে হাত মেলালেও খালেদা জিয়ার বিএনপি নেতৃত্ব কোনও গুরুত্বই দিতে নারাজ এনসিপি এবং তার নেতা নাহিদ, সারজিস, হাসনাতদের। আর জামাতকে তো ঘোর অপছন্দ করেন বিএনপিরই একটি অংশ। বিএনপি নেতৃত্ব মনে করে, আগামী ৫০ বছরেও বাংলাদেশের মানুষের বিশ্বাস অর্জন করার কোনও সম্ভাবনাই নেই জামাতের, ক্ষমতায় আসা তো দূরের কথা! কিন্তু বিএনপির সমস্যাটা অন্য জায়গায়। তাদের অস্বস্তি খালেদাপুত্র তারেক রহমানের নেতৃত্বের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে। একটা বিষয়ে বিএনপি নেতৃত্ব সম্পূর্ণ একমত, হাসিনার অনুপস্থিতিতে আওয়ামি লিগের কিছুটা ভোট অন্তত নিজেদের দিকে টানতে হলে বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনসমক্ষেই করতে হবে জোরদার সওয়াল। কোনও বিতর্ক-বিরোধিতাকে পাত্তা না দিয়ে সেই কাজেই কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন ফজলুর রহমানের মতো স্পষ্টবাদী মুক্তিযোদ্ধারা। তুলোধনা করছেন রাজাকার এবং তাদের দোসর জামাতকে। কিন্তু মুশকিলটা হচ্ছে, তারেক রহমান দেশে ফিরে যদি বিএনপির নেতৃত্ব দেন এবং সামনের নির্বাচনে দল তাঁকেই মুখ হিসেবে তুলে ধরে, তবে তার পরিণতি কী হবে তা নিয়ে গভীর সংশয়ে দলেরই একাংশ। অতীতের অভিজ্ঞতা বলছে, তারেক রহমান দেশে ফিরলে তাকে ঘিরে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে আবার চলে আসতে পারে বেপরোয়া ভাব। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মানুষ বিএনপির শাসনকালটা এখনও ভুলে যায়নি। তারেককে নিয়ে ভোটারদের অভিজ্ঞতাও তিক্ত। সেই কারণেই, খালেদাপুত্রকে দলের মুখ করে নির্বাচনী লড়াইয়ে নামতে দলের মধ্যেই উঠেছে তীব্র আপত্তি। বিএনপির চ্যালেঞ্জটা এখানেই। এদিকে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হলেও দমে যায়নি হাসিনার আওয়ামি লিগও। মুজিবকন্যাকে সসম্মানে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিতে ঢাকা-সহ বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ শহর এবং জেলা সদরগুলিতে ঘনঘন মিছিল করছে আওয়ামি লিগ। সমাগমও মন্দ হচ্ছে না। বিদেশেও প্রচারাভিযান চলছে সমানে। সব মিলিয়ে, নির্বাচনের আগে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলির অভিমুখ নিয়ে ধন্দে সেদেশের সাধারণ মানুষ।

Latest article