প্রতিবেদন: মহা-গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক তথ্য উদ্ধার। বহু শ্রমের পর প্যাপিরাসের কিছু অমূল্য তথ্যের পাঠোদ্ধার করেছেন গবেষকেরা। ফলে প্রায় দু-হাজার বছরের পুরনো তথ্যের হদিশ মিলেছে। গ্রিক দার্শনিক প্লেটোর জীবনের শেষের কয়েক দিনের ইতিবৃত্ত প্রকাশ্যে এসেছে। গবেষকদের বক্তব্য, ভিসুভিয়াসের ছাইয়ের তলায় চাপা পড়ে ছিল প্লেটোর মৃত্যু কাহিনি। মিশরীয় সভ্যতায় নীল নদের তীরে নলখাগড়া জাতীয় গাছ পাওয়া যেত। সেই গাছ কেটে প্রাপ্ত খোলকে পাথর চাপা দিয়ে রোদে শুকানো হত। ফলে খোলগুলো শুকিয়ে যেত এবং পাথরের চাপে সোজা হয়ে লেখার উপযোগী হত। এরই নাম প্যাপিরাস। পরবর্তীতে প্যাপিরাস আঠার মাধ্যমে জোড়া দিয়ে রোল করে সংরক্ষণ করা হত। এটাই ছিল প্যাপিরাসের উৎপাদন কৌশল।
আরও পড়ুন-বম্বে হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ, শিক্ষা দিন ছেলেদের, রক্ষা করুন মেয়েদের
প্যাপিরাসের এক একটি রোল লম্বায় ১০ থেকে ২০ ফুটের মতো হত। এভাবে তৈরি প্রাচীন লেখার উপযোগী মাধ্যম তখনকার সময় প্যাপিরাস নামে বহুলপরিচিত ছিল। বর্ণমালা সৃষ্টির ক্ষেত্রে মিশরীয়দের যেমন বিশেষ অবদান ছিল, তেমনি তাঁরা আবিষ্কার করেছিলেন লেখার উপযোগী এই চমৎকার উপাদানটি। ৭৯ খ্রিস্টাব্দে মাউন্ট ভিসুভিয়াসের অগ্ন্যুৎপাতে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল হারকিউলেনিয়াম ও তার পার্শ্ববর্তী পম্পেই-সহ রোমান সাম্রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকা। ১৯ শতকের গোড়ার দিক থেকে সেখানে দফায় দফায় প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ চলেছে। ছাই ও জমে যাওয়া লাভা সরিয়ে আস্তে আস্তে বেরিয়ে এসেছে পম্পেই ও হারকিউলেনিয়ামের অনেকটি অংশ। জানা গিয়েছে, সেই সময়ের ইতিহাস ও সংস্কৃতি সংক্রান্ত নানা তথ্য। হারকিউলেনিয়ামের ‘ভিলা অব প্যাপিরাই’ নামের একটি গ্রামে প্যাপিরাসের লাইব্রেরি ছিল। ১৭৫০ সালে সেটি খুঁজে পেয়েছিলেন প্রত্নতত্ত্ববিদেরা। কথিত আছে, রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজারের শ্বশুরমশাই সেই প্যাপিরাস লাইব্রেরির মালিক ছিলেন। এই লাইব্রেরি থেকে ১৮০০-রও বেশি প্যাপিরাস-পুঁথি উদ্ধার হয়। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে এখন সেই সব প্যাপিরাসের পাঠোদ্ধার করাও সম্ভব হচ্ছে। ইতালির পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গ্রানৎজিয়ানো রানোচিয়া নেপলসের জাতীয় গ্রন্থাগারে সেই ভিলা থেকে পাওয়া এক খণ্ড প্যাপিরাস নিয়ে সবিস্তার আলোচনা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, এই প্যাপিরাসে লিপিবদ্ধ রয়েছে খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকের গ্রিক দার্শনিক প্লেটোর জীবনকাহিনি। বিশেষ করে তাঁর জীবনের শেষ সন্ধের কথা। এতদিন অনুমান করা হত, অ্যাকাডেমি অফ অ্যাথেন্সের বাগানে শায়িত আছে তাঁর দেহ। কিন্তু হারকিউলেনিয়াম থেকে পাওয়া প্যাপিরাসে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে সেখানেই দার্শনিক প্লেটোকে সমাধিস্থ করা হয়।