প্রতিবেদন: ‘বাংলার এবারের নির্বাচনে গোটা দেশ দেখেছে বিজেপির সর্বশক্তিকে কীভাবে তৃণমূল হারিয়ে দিয়েছে। যাঁরা দেশ চালাচ্ছেন (আসলে ডোবাচ্ছেন) তাঁরা সকলেই তো ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করলেন। কুৎসা করলেন। এজেন্সি নামালেন। তবু তৃণমূলকে হারাতে পারলেন না। এটা একটা ইতিহাস। এটা একটা মডেল। দেশের মানুষ এই মডেলের উপর ভরসা রাখছেন। তাঁরা তৃণমূল কংগ্রেসকে ঘিরে নতুন ভারতের স্বপ্ন দেখছেন।’ বাংলায় তৃণমূল মডেলের সাফল্যের কথা এভাবেই মনে করিয়ে দিয়ে ‘জাগোবাংলা’-র উৎসব সংখ্যায় ‘দিল্লির ডাক’ দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দিল্লির ডাক দিতে গিয়ে তিনি কখনও বলেছেন, ‘সময়ের যাত্রাপথে এখন বিজেপির বিরুদ্ধে আসল লড়াইয়ের মুখ হয়ে উঠেছে এই তৃণমূল কংগ্রেসই। গোটা দেশে এই সত্য প্রতিষ্ঠিত।’ আবার কখনও সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘একটা সময় বাংলার প্রকৃত স্বাধীনতা ও মুক্তির যুদ্ধে সিপিএমের বিরুদ্ধে আসল মুখ হয়ে উঠেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। সেই সিপিএম আজ ক্ষীণশক্তি, প্রাসঙ্গিকতা থেকে বহুদূরে। আজ উন্নয়ন করে মানুষের ভালোবাসা পাচ্ছে তৃণমূল।’ সব মিলিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস যে দেশের মানুষের স্বপ্নপূরণের দায়িত্ব থেকে পিছিয়ে যাবে না তা পরিষ্কার করে দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী।
আরও পড়ুন : রেল উন্নয়নেও রেকর্ড, ‘জাগোবাংলা’-য় আক্রমণাত্মক মমতা
একই সঙ্গে এই ইস্যুতে তিনি তীব্র আক্রমণ করেছেন কংগ্রেসকে। দিল্লির মসনদ থেকে বিজেপিকে হঠানোই এখন বিরোধীদের মূল লক্ষ্য। এই লক্ষ্যপূরণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবাইকে পাশে চেয়েছেন। তবে কংগ্রেসকে বাস্তবটা স্মরণ করাতে ভোলেননি তিনি। তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রীর ভাষায়, ‘কিন্তু বাস্তব হল সাম্প্রতিক অতীতে কংগ্রেস দিল্লির দরবারে বিজেপিকে মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়েছে। গত দুটি লোকসভা নির্বাচন তার বড় প্রমাণ। দিল্লিতে যদি লড়াই না থাকে, তাহলে মানুষের মনোবল কমে যায় এবং লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যগুলিতেও বিজেপি কিছু বাড়তি ভোট পেয়ে যায়। সেটা এবার কিছুতেই হতে দেওয়া যাবে না। বিকল্প জোটের নেতৃত্ব নিয়ে আমরা চিন্তিত নই। কিন্তু বাস্তবটা কংগ্রেসকে অনুভব করতে হবে।অন্যথায় বিকল্প শক্তির গঠনে ফাঁক থেকে যাবে।’ এভাবেই কংগ্রেসকে আক্রমণ করার পাশাপাশি সতর্কও করে দিয়েছেন বাংলার জননেত্রী।
দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্ব একটা জনবিরোধী সরকার চলছে।
যে সরকার গত সাত বছরে মানুষের আশা আকাঙ্খা পূরণে সার্বিক ভাবে ব্যর্থ। দেশের মানুষ এখন এই সরকারের হাত থেকে মুক্তি চাইছে। কয়েকদিন আগেই বাংলার মানুষ পরিষ্কার ভাবেই বিজেপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘তাই এবার দেশের মানুষের দাবি দিল্লির মসনদ থেকে সরাতে হবে ফ্যাসিবাদী, স্বৈরাচারী বিজেপিকে। মানুষের আশা ভরসা তৃণমূল কংগ্রেসকে ঘিরে। বাংলার সীমা অতিক্রম করে একের পর এক রাজ্য থেকে ডাক আসছে, আপনারা আসুন। নতুন ভারত গড়তে নেতৃত্ব দিক বাংলা।’ এভাবেই তিনি পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেসের সাফল্যের মডলে নিয়ে আগ্রহী এখন গোটা দেশ। কংগ্রেসের ভূমিকার সমালোচনা করলেও বিজেপি বিরোধী এই মহাজোটে কংগ্রেসকে তিনি যে চান সেটাও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শেষে তিনি বলেছেন, ‘আমি তাই বলেছি সময়ের ডাকে সাড়া দিতে হবে। মানুষের আশা পূরণ করতে হবে। দেশ গড়ার দায়িত্ব পালন করতে হবে। বিজেপি বিরোধী সব দলের উচিত একজোট হওয়া। নিজেদের অঙ্কে নয়, দেশের স্বার্থে একজোট হতে হবে। বিকল্প মঞ্চ শক্তিশালী করতে হবে। সেই মঞ্চ হবে নীতির ভিত্তিতে, কর্মসূচির ভিত্তিতে। আমরা কখনই কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে মঞ্চের কথা ভাবছি না, বলছিও না।’ বিজেপি বিরোধী অক্ষ সেটা যত তাড়াতাড়ি বুঝতে পারবে ততই দেশের মঙ্গল।