প্রতিবেদন: বাংলার মানুষকে অপমান করতে প্রথমে একশো দিনের কাজের প্রাপ্য টাকা আটকে রেখেছে বাংলা-বিরোধী মোদি সরকার। নিজেদের শ্রম দিয়েও হকের টাকা পাননি অসংখ্য মানুষ। অপরাধ একটাই, কারণ তাঁরা এ-রাজ্যের শ্রমিক। কলকাতা হাইকোর্ট বকেয়া মেটানোর কড়া নির্দেশ দিলেও বাংলার বিরোধিতাই যে মোদি সরকারের নীতি, তা প্রমাণ করে এবার হাইকোর্টের নির্দেশের পাল্টা সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে কেন্দ্র। এই আবহে এবার বাংলার প্রাপ্য জল জীবন মিশনের (Jal Jeevan Mission) বকেয়া টাকা মেটানোর দাবি জানাতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলেন রাজ্যের তৃণমূল সাংসদরা। বাংলার বাসিন্দাদের জল না দিয়ে ভোটব্যাঙ্ক দখলের অপচেষ্টার পাল্টা জলের বকেয়া টাকার দাবিতে কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রী সি আর পাতিলের সঙ্গে বৈঠক করলেন তৃণমূলের ১৭ সাংসদ।
জল জীবন মিশন (Jal Jeevan Mission) প্রকল্পে কেন্দ্র ও রাজ্যের তরফে সমানভাবে অর্থ বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই রাজ্যে ভোট প্রচারে এসে ফলাও করে ঘরে ঘরে জল পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি সাধারণ মানুষের সামনে রেখেছিলেন তিনি। সেই প্রতিশ্রুতি যে আসলে মিথ্যাচার ছিল, তা প্রমাণ করে দিল রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। জল জীবন মিশন প্রকল্পে কেন্দ্রীয় বরাদ্দের অর্ধেক টাকা দিয়েই হাত গুটিয়ে নিয়েছে কেন্দ্রীয় জলশক্তি উন্নয়ন মন্ত্রক। এবার সেই বকেয়ার হিসাব নিয়ে কেন্দ্রীয় জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলেন তৃণমূলের লোকসভার ডেপুটি লিডার শতাব্দী রায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, খলিলুর রহমান, শর্মিলা সরকার, অসিত মাল, জগদীশ বর্মা বসুনিয়া, মিতালি বাগ, অরূপ চক্রবর্তী, কালীপদ সোরেন, প্রতিমা মণ্ডল, বাপি হালদার, মহুয়া মৈত্র, সায়নী ঘোষ ও রাজ্যসভার সাংসদ প্রকাশ চিক বরাইক, ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, মৌসম নুর, মমতাবালা ঠাকুর।
আরও পড়ুন-বাংলার ১০০ দিনের টাকা আটকাতে সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্র!: তোপ অভিষেকের
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কাছে তুলে ধরা হয়, গোটা রাজ্যে জল জীবন মিশনে ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে মোট বরাদ্দ ছিল ১০ হাজার ১০০ কোটি টাকা। তার মধ্যে কেন্দ্রের বরাদ্দ ৫ হাজার ৫০ কোটি। অথচ কেন্দ্র দিয়েছে মাত্র ২,৫২৫ কোটি টাকা, অর্থাৎ বরাদ্দের অর্ধেক। অথচ রাজ্য তার বরাদ্দের ৩০ হাজার কোটি টাকা দিয়ে দিয়েছে, যার কাজ ইতিমধ্যেই সমাপ্ত। পাশাপাশি ২৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ চলছে। তুলে ধরা হয়, যেখানে ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ৪,৫৫৭ কোটি টাকা এই প্রকল্পে দেওয়ার কথা ছিল, সেখানে রাজ্য সরকার ৪,৯২৬ কোটি টাকা খরচ করে ফেলেছে জল জীবন মিশন প্রকল্পে।
বাংলায় ইতিমধ্যেই ৫৬ শতাংশ গ্রামীণ গৃহস্থে জল সংযোগের কাজ শেষ হয়েছে। যার জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। রাজ্যের তরফে ৫০ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ করার কথা থাকলেও রাজ্যের মানুষের স্বার্থে জমি, রক্ষণাবেক্ষণ থেকে আনুসঙ্গিক সব খরচ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারই বহন করছে। কারণ প্রাপ্য মেটাচ্ছে না কেন্দ্র। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষেই কেন্দ্রের বরাদ্দের থেকে ২,৪০১ কোটি টাকা বেশি দিয়ে ফেলেছে রাজ্য। তারপরেও ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে এসে কেন্দ্র তাদের বকেয়া দিচ্ছে না। যার ফলে জলের অভাবে গ্রামীণ বাংলার একটা বড় অংশের মানুষ ভুগছে। অন্যদিকে ডিভিসি-র মাধ্যমে বারবার জল ছাড়ার কারণে বানভাসি রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ। তৃণমূল সাংসদরা দাবি করেন, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের বকেয়া টাকা যেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রক দ্রুত মিটিয়ে দেয় এবং ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের নতুন বরাদ্দ দেওয়ার ব্যবস্থা করে। ভবিষ্যতে যাতে কেন্দ্রের টাকা বকেয়া থাকার কারণে এই প্রকল্পে অর্থের জোগান বন্ধ না রাখা হয়, তার দাবি জানিয়েছে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল।