প্রতিবেদন : বাম আমলে নিয়োগ দুর্নীতির পর্দাফাঁস করল তৃণমূল কংগ্রেস। সেই সঙ্গে উদাহরণ তুলে পরিষ্কার করে দিল, নিয়োগ দুর্নীতিতে মেধাতালিকায় বঞ্চনা, তথ্য বিকৃতি বা কারচুপি ও মহিলা যোগ—এসবেরই শুরু বাম আমলে। বুধবার এ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য-প্রমাণ পেশ করে তদন্তের দাবি জানাল তৃণমূল কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ এদিন দাবি করেন, স্কুলের চাকরি থেকে সরকারি চাকরি, এসবে দুর্নীতির শুরুটা হয়েছিল বাম আমলে। এনিয়ে তদন্ত যদি করতেই হয় তাহলে তা বাম আমল থেকেই শুরু করা দরকার। সাংবাদিক বৈঠকে একের পর এক উদাহরণ তুলে ধরেন কুণাল। তাতেই পরিষ্কার হয়ে যায় বাম আমলে কলেজ সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় মেধাতালিকায় পরিবর্তন ও তথ্য বিকৃত করে কীভাবে যোগ্য প্রার্থীদের বঞ্চিত করা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত আদালতের রায়ে নিয়োগ পান তাঁরা। কিন্তু জীবনের অনেকগুলি বছর নষ্ট হয় যোগ্য প্রার্থীদের। এরপরই প্ল্যান্ট প্যাথলজির ডাঃ আশিস পালের উদাহরণ টেনে আনেন তৃণমূল মুখপাত্র। ১৯৯২ সালের ঘটনা। যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও মেধাতালিকায় পরিবর্তনের জেরে বাম আমলের কলেজ সার্ভিস কমিশন নিয়োগ দেয়নি তাঁকে। ১৯৯৫ সালে তিনি মামলা করেন। সেই মামলায় জিতে ২০১২ সালে এসে প্রায় ৫৫ বছর বয়সে আরামবাগ নেতাজি কলেজে অধ্যাপকের চাকরিতে যোগ দেন তিনি। যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও ন্যায্য চাকরি পেতে কেটে যায় ৩০ বছর। র্যা ঙ্ক জাম্পিংয়ের পর তথ্য বিকৃতি। অধ্যাপক সাবেরা খাতুন। সেটা বাম আমল ২০০৯ সালের ঘটনা। যোগ্য প্রার্থী হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে চাকরি দেয়নি কলেজ সার্ভিস কমিশন। শুধু তাই নয়, চাকরি না পেয়ে আরটিআই করেন তিনি। সেখানেও তাঁকে ভুল তথ্য দেয় কমিশন। শেষ পর্যন্ত আদালতের রায়ে ২০১৪ সালে তিনি রানিগঞ্জে ত্রিবেণী দেবী কলেজে অধ্যাপনার চাকরিতে যোগ দেন সাবেরা খাতুন। এরপর মহিলা যোগ নিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন সহকারী পরীক্ষা নিয়ামক মনীষা মুখোপাধ্যায়ে (Manisha Mukherjee) অন্তর্ধান রহস্য টেনে আনেন কুণাল। তিনি বলেন, শোনা যায় এই অধ্যাপকের সঙ্গে তৎকালীন প্রথম সারির অনেক বাম নেতার বেশ মাখো মাখো সম্পর্ক ছিল। তাঁর বাড়িতে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া, সবই চলত। কিন্তু যখনই কিছু গোলমালের খবর সামনে এল তখনই রাতারাতি ১৯৯৭ সালে হঠাৎই রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হয়ে গেলেন মনীষা (Manisha Mukherjee)। আজ পর্যন্ত তাঁর কোনও খোঁজ মেলেনি। মেয়েকে ফিরিয়ে দেওয়ার আর্জি নিয়ে তাঁর মা পুলিশ কমিশনারের দরবার থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটেও ধরনা দেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত মনীষার খোঁজ মেলেনি। এখন এদের মুখে আমাদের নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ শুনতে হবে নাকি? কুণাল বলেন, দল কোনও দুর্নীতিকে বরদাস্ত করে না। যেখানেই অভিযোগ উঠেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়রা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছেন। কিন্তু সিপিএমের মুখে এসব অভিযোগ মানায় না।